সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০২:৩৬

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসছে আরও ১২ মামলা

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও ১২টি নতুন মামলা আসছে। এসব মামলার তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর মামলাগুলো পরিচালনা ও তদন্ত কর্মকর্তাদের তদন্তে সাহায্যের জন্য ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর এসব মামলা সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটরদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছেন।

চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু তার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে প্রসিকিউটরদের মাঝে এসব মামলা পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

তদন্ত শেষে একাত্তরের মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের জন্য ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্য্যালয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছে কক্সবাজারের পেকুয়া থানাধীন মগনামা গ্রামের মহসীন হায়দার চৌধুরীর মামলাটি। এছাড়াও তদন্ত চলছে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার আবুল ফালাহ মুহাম্মাদ ফাউজুল্লাহর (৬২) বিরুদ্ধে। এই মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান ও প্রসিকিউটর আবুল কালাম আজাদ।

নেত্রকোনা জেলার খারচাইল গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে আব্দুল খালেক তালুকদারের (৬৭) মামলাটি তদন্তের শেষ পর্যায়ে। এ মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত ও তাপস কান্তি বলকে।

অন্যদিকে প্রসিকিউটর মোহাম্মাদ আলী ও আবুল কালাম আজাদের দায়িত্বভার পড়েছে (অজ্ঞাত জেলা) বাগাজুরা গ্রামের মৃত মস্ত মিয়ার ছেলে আল-বদর কমান্ডার শামসুল হক, জামুরা গ্রামের ফরজান মিয়ার ছেলে রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী ও সোনাটিকি গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে রাজাকার কমান্ডার ইউনুছ মৌলভীর মামলার।

এদিকে প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা ও মো. জাহিদ ইমাম পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ভালুকজান গ্রামের মৃত নায়েব আলী ফকিরের ছেলে মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের (৭০) মামলা পরিচালনার।

তদন্তাধীন গোলাপলগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার সরাইকান্দি গ্রামের মৃত মনি মিয়ার ছেলে এনায়েত মোল্লার মামলার দায়িত্বে রয়েছেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা।

অপরদিকে প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি দায়িত্ব পেয়েছেন পটুয়াখালীর ইটবাড়ীয়া গ্রামের মৃত কাশেম খাঁ এর ছেলে আয়নাল খাঁ এর মামলাটিতে। এর পাশাপাশি তদন্ত চলছে পটুয়াখালী জেলার কোটখালী গ্রামের মো. আশ্রাব আলী খানের বিরুদ্ধে। এ মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা ও মোসফেক কবির।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চুনটা গ্রামের এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের দায়ে এই আসামির বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান, রেজিয়া সুলতানা ও সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন।

এছাড়াও তদন্ত চলছে মৃত মীরজান আলীর দুই ছেলে রাজাকার আজিজ (হাবুল) ও রাজাকার আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে। প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি লড়ছেন শেখ মো. মজিত ওরফে মজিত মাওলানার মামলাটি নিয়ে। এই মামলায় মজিত মাওলানা ছাড়াও আরো বেশ কিছু আসামি যুক্ত হতে যাচ্ছে। এভাবে আরো আসামি যুক্ত হতে পারে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও রেজিয়া সুলতানার দায়িত্ব থাকা মামলাটিতেও। তাদের এ মামলার এখন পর্যন্ত প্রধান আসামির নাম মো. এছহাক সিকদার।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এসব আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্ত শেষ বা চলাকালে মামলার প্রসিকিউটররা তদন্তের স্বার্থে আসামিদের গ্রেপ্তার চেয়ে আবেদন করবেন।

এরপর আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলে তদন্ত সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া সব তথ্য ট্রাইব্যুনালে জমা করবেন মামলার প্রসিকিউশন পক্ষ। এভাবে নিয়মানুসারে চলবে মামলার পরবর্তি কার্যক্রম।

তবে যত দ্রুত সম্ভব এসব মামলার তদন্ত শেষে তা ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে পাঠানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

তদন্তাধীন এসব মামলার পাশাপাশি আরো কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। যাদের নাম তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান।

তদন্ত শেষে ট্রাইব্যুনালে আসার অপেক্ষায় থাকা এসব মামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে দ্রুততার সাথে বেশ কিছু মামলার বিচারিক কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর পাশাপাশি আরো কিছু নতুন মামলা ট্রাইব্যুনালে আসছে। পূর্বের মত মামলা পরিচালনায় আমরা আমাদের সর্বাত্ত্বক চেষ্টা অব্যাহত রাখবো।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন ১৭ টি মামলার বিচার কাজ চলছে। এর মধ্যে ১০টি মামলা শুনানির বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এরমধ্যে নেত্রকোনা জেলার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের মামলাটি প্রায় শেষের দিকে।

অন্যদিকে হবিগঞ্জের দুই সহোদর ও তাদের চাচাত ভাই মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকের মামলাও আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই ননী-তাহেরের মামলাটি যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য হতে পারে বলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে জানানো হয়। সূত্র: বাংলামেইল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত