নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৬:২৯

রাজাকারের তালিকায় যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রধান কৌঁসুলিরও নাম

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপুর নামও এসেছে। ১৫ ডিসেম্বর, রোববার প্রকাশিত তালিকায় রাজশাহী বিভাগের ৮৯ নম্বর তালিকায় (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) পাঁচজনের নাম রয়েছে। এই সিরিয়ালের চতুর্থ ক্রমিক নম্বরে রয়েছে গোলাম আরিফ টিপুর নাম।

৮৯ নম্বর ক্রমিকে থাকা অপর চারজন হলেন- অ্যাডভোকেট মহসিন আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব। এই পাঁচজন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ ছিলেন। এমনকি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের পরিবারের পাঁচজন সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত হন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তালিকায় এই পাঁচজনের মন্তব্যের ঘরে লেখা আছে তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল। এর বাইরে কোনো তথ্য নেই।

অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রভাষা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, রাজশাহীর তিনি যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বেই মূলত রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ সদস্যবিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্যও ছিলেন টিপু। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৯ সালে একুশে পদক প্রদান করে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হওয়া সত্ত্বেও রাজাকারের তালিকায় নাম আসার বিষয়ে গোলাম আরিফ টিপু বলেন, ‘আমি এটা শুনে বিস্মিত হয়েছি। এটা কী করে সম্ভব? আমি জীবনে কখনো ওদের লাইনে যাইনি। রাজাকারের তালিকায় আমার নাম আসবে এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি এটার শক্ত প্রতিবাদ করবো।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অন্য মানুষের নাম থাকতে পারে। আমরা নতুন কোনও তালিকা করিনি। সরকারি নথিতে যাদের নাম আছে তাদেরই নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে।’

এই অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না না সে ভিন্ন কোনও গোলাম আরিফ। একই নাম দেখে বিভ্রান্ত হবেন না।’

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা এরকম তালিকা প্রত্যাখ্যান করি। এই তালিকা আমলানির্ভর। বাবার নাম-ঠিকানা ছাড়া কেবল গোলাম আরিফ নাম দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হবে, এটা এত সহজ কাজ নয়।’

এদিকে, রোববার এই তালিকা প্রকাশের পর গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের নাম রাজাকারের তালিকায় ওঠে এসেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। বরিশালের বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী অভিযোগ করে বলেছেন, “সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুমার নাম প্রকাশিত হয়েছে। আমার বাবা এড. তপন কুমার চক্রবর্ত্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, ক্রমিক নং ১১২ পৃষ্ঠা ৪১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও পেয়ে থাকেন! আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৫ নাম্বার রাজাকার। আমার ঠাকুরদা এড সুধীর কুমার চক্রবর্ত্তীকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর সহধর্মিণী আমার ঠাকুমা ঊষা রানী চক্রবর্ত্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

উল্লেখ্য, রোববার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা ঘোষণা করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এই তালিকা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তালিকা প্রকাশকালে বলেছেন, “একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, আমরা কোনো তালিকা তৈরি করছি না। যারা একাত্তরে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যেসব পুরনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল সেটুকু প্রকাশ করছি।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত