১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৩:২৮
রাজাকারের তালিকা তৈরি করতে ৬০ কোটি টাকা কেন ৬০ পয়সাও খরচ হয়নি বলে দাবি করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বৃহস্পতিবার সকালে একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন।
প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা তৈরি করতে ৬০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বুধবার এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়। কয়েকটি গণমাধ্যম জানায়, বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রাজাকারদের এই তালিকা করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ৬০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা কোথায় খরচ হয়েছে এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। কারণ তিনি (মুক্তিযু্দ্ধবিষয়ক মন্ত্রী) একজন সিনিয়র মন্ত্রী।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, শুনেছি কারও কাছে, কেউ বলছেন– রাজাকারের তালিকা করতে ৬০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ৬০ কোটি টাকা তো নয়-ই, ৬০ পয়সাও খরচ হয়নি।
৬০ কোটি টাকা খরচের কথা যারা বলছেন, তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, যারা বলছেন– তাদের প্রমাণ দিতে হবে। প্রমাণ দিতে না পারলে তারা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, না হয় তাদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করা হবে। ৬০ কোটির জায়গায় ৬০ পয়সাও খরচ হয়নি।
এ সময় পুনরায় যাচাই-বাছাই করে সময় নিয়ে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানি বাহিনীকে নানাভাবে সহায়তা করেছে, সেসব রাজাকার আলবদর ও আলশামসের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিজয় দিবসের আগের দিন ১৫ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের নামের প্রথম তালিকা প্রকাশ করেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। কিন্তু এ তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নামও ঢুকে পড়েছে, যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত তালিকাটি রাজাকারদের নয় বলে দাবি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এটি কোনো রাজাকারের তালিকা নয়; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে রাজাকার, আলবদর, আলশামসের তালিকা দেয়া হয়নি; দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকা দেয়া হয়েছে। নোট দেয়া সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সবার নাম প্রকাশ করায় এর পুরো দায় ওই মন্ত্রণালয়ের।
এদিকে, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়-
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে 'রাজাকারের তালিকা করতে ৬০ কোটি টাকা খরচ' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, 'এ তালিকা প্রণয়নের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি বা বরাদ্দ চাওয়া হয়নি। কাজেই একটি পয়সাও খরচের প্রশ্নই আসে না। এটি একটি অসত্য তথ্য'।
এধরনের অসত্য সংবাদ প্রকাশ বা প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।
এ সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারকারী কর্তৃপক্ষ সংবাদটি প্রত্যাহার করে আগামী ২৫/১২/২০১৯ তারিখের মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা না করলে তার/তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ১৫ ডিসেম্বর রাজাকারের তালিকা প্রকাশের পর সমালোচনার মুখে ১৮ ডিসেম্বর সেই তালিকা স্থগিত করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরবর্তী তালিকা ২৬ মার্চ প্রকাশ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
আপনার মন্তব্য