১১ আগস্ট, ২০১৯ ১৯:৪৮
অন্যদের তুলনায় শারীরিক অবস্থা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা নাজুক হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বেশ ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের ক্ষেত্রে জটিলতাও বেশি হয়। তবে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে গর্ভপাত বা শিশুর শারীরিক জটিলতার কোনো তথ্য–উপাত্ত এখনো পাওয়া যায়নি। শেষ তিন মাসে ডেঙ্গু হলে যে অপরিণত অবস্থায় সন্তান প্রসবের ঝুঁকি তৈরি হয়, তাও নয়। গর্ভাবস্থার শেষ দিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মা থেকে শিশুতে এই রোগের ভাইরাস সরাসরি সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
মায়ের জটিলতাগুলোর মধ্যে আকস্মিক রক্তপাত সবচেয়ে উদ্বেগজনক উপসর্গ। প্রসবের বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের (সিজারিয়ান) সময় অথবা পরে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। বুকে পানি জমা, যকৃতের সমস্যা, মাড়ি বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে রক্তপাত হতে পারে। ডেঙ্গুতে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রওশন আরা।
ডেঙ্গু হলে সতর্কতা
অন্তঃসত্ত্বা নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এ সময় ডেঙ্গুর উপসর্গ অন্যান্য জটিলতার সঙ্গে মিলে যায় (যেমন হেলপ সিনড্রোম বা যকৃতে এনজাইম বেড়ে যাওয়া ও রক্তে প্লাটিলেট কমে যাওয়া)। তাই অভিজ্ঞ মেডিসিন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা জরুরি।
হাসপাতালে প্রতি চার ঘণ্টা পরপর রোগীর হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ ও পালস প্রেশার পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রতি ৪ ঘণ্টায় ১০০ সিসি প্রস্রাব হওয়া জরুরি। হিমোগ্লোবিন, হেমাটোক্রিট ও প্লাটিলেটের সংখ্যা প্রতিদিন দেখা উচিত। বুকে পানি জমলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। প্রতিটি বিষয়ই নিবিড়ভাবে লক্ষ রাখতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জ্বরের সময় প্যারাসিটামল খেতে পারেন। আগে থেকে কেউ অ্যাসপিরিন খেয়ে থাকলে এ সময় বন্ধ করে দেওয়া ভালো। পানি ও তরল খেতে হবে বেশি। তবে বমি বেশি হলে শিরায় স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে। জ্বর সেরে যাওয়ার পর শুরু হয় ক্রিটিক্যাল ফেজ। এ সময় প্লাজমা লিকেজের লক্ষণ থাকলে সতর্কতার সঙ্গে স্যালাইন দিতে হবে।
ক্রিটিক্যাল ফেজে প্রসব বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব এড়ানো উচিত। যদি প্রসব ব্যথা শুরু হয়, তাহলে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে প্রসব করাতে হবে। প্রয়োজনে সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট পরিসঞ্চালন লাগতে পারে। ক্রিটিক্যাল ফেজ থেকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে চলে গেলে রোগীকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা উচিত। ডেঙ্গুর সময় মাংসপেশিতে যেকোনো ইনজেকশন এড়ানো উচিত। মায়ের থেকে নবজাতক আক্রান্ত হলো কি না, নির্ণয় করতে হবে। নবজাতক আক্রান্ত হলে অভিজ্ঞ শিশুবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করাতে হবে।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীকে এই রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সব সময়ই সতর্ক থাকতে হবে। বাড়িতে মশারির ভেতর বা মশানিরোধক মেখে থাকুন। বাড়িতে বা আশপাশে কারও ডেঙ্গু হলে বিশেষভাবে সতর্ক থাকুন। জ্বর হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো
আপনার মন্তব্য