০৪ জুন, ২০২০ ২০:৩২
আসন্ন বাজেট অধিবেশনের সংসদ সচিবালয়ে কোন ভাবেই যাতে করোনাভাইরাস ছড়াতে না পারে বা কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য জনসমাগম এড়াতে সংসদ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির প্রস্তাব করেছে সংসদ সচিবালয়।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) বাজেট অধিবেশনে করোনা মোকাবিলা ও নিরাপত্তা বিষয়ক আইনশৃঙ্খলা নিয়ে পর্যালোচনা ঠিক করতে সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খানের সভাপতিত্ব বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া বাজেট অধিবেশনে মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে পিএস বা এপিএসকে না নিয়ে আসা বা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে গাড়িতে বহন না জন্য অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গণপূর্ত বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ১০ জুন বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। অধিবেশন শুরুর পরের দিন অর্থাৎ ১১ জুন বৃহস্পতিবার ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন হবে। এটা পাস হবে ৩০ জুন।
বিজ্ঞাপন
এ অধিবেশনটি এমন সময় শুরু হচ্ছে যখন দেশে করোনা সংক্রম দ্রুত বাড়ছে। সে কারণে অধিবেশনে উপস্থিত হওয়া মন্ত্রী, এমপি, তাদের পিএস, সংসদ সচিবালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন শাখার গোয়েন্দা বাহিনীসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকতে পারে। সে কারণে যত সম্ভব স্বল্প উপস্থিতির মধ্যে অধিবেশন শুরু ও শেষ করা যায় সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
তাছাড়া মন্ত্রী এবং এমপিদের পিএস বা এপিএস না নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করার কথা উঠেছে। সেই সাথে ড্রাইভারদের মাধ্যমে যাতে করোনা সংক্রমণ না ছড়াতে পারে সে জন্য তাদের বাসস্থান, গতিবিধি ইত্যাদি সম্পর্কে সচিবালয়কে জ্ঞাত করা ও করোনা টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সাহচর্যে যারা থাকবেন তাদের বাধ্যতামূলক করোনা টেস্ট করানো হবে এবং বাজেট চলাকালীন দিনগুলো কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বলে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। অধিবেশনের সময় জনসমাগম এড়াতে সাংবাদিক ও ভিজিটর পাশ না দেবার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। শুধুমাত্র বাজেট পেশের দিনে প্রতিটি নিবন্ধিত গণমাধ্যমের একজন এক্রিডিটেশনধারী সাংবাদিককে সংসদ মিডিয়া সেন্টার থেকে বাজেট বই সংগ্রহ করার নির্দেশনা এসেছে বৈঠক থেকে।
এছাড়া গাড়ি রাখার স্থানে যাতে দূরত্ব বজায় রেখে মন্ত্রী এমপিদের গাড়ি রাখা হয় ও ড্রাইভারদের একত্রিত হয়ে গল্পগুজব পরিহার করে নিজ নিজ গাড়িতে অবস্থান করার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথাও বৈঠকে আলোচনা হয়। অধিবেশনে একদিন সর্বাধিক ৮০-৯০জন এমপিকে আসার অনুরোধ এবং বয়স্ক ও কোনো রকম রোগাক্রান্ত মন্ত্রী এমপিকে না আসার জন্য নিরুৎসাহিত করতে স্পিকারের মাধ্যমে অনুরোধ জানানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাজেট অধিবেশন চলাকালীন সময়ে সংসদ চত্বরে প্রবেশের সব কটি রাস্তা বা গেটে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং সংসদ এলাকায় যানবাহন চলাচল ও জনসমাগম এড়াতে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি জোড়ালোভাবে সুপারিশ করার হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। শুধুমাত্র সংসদ স্টিকারধারী গাড়ি চলতে পারবে।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, অধিবেশনে সব কর্মীদের না আসতে বলা হবে। যত সম্ভব কম কর্মী নিয়ে অধিবেশনটি চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সকল কর্মীর করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার যেসব এলাকা ইতোমধ্যে করোনা রেড জোন হিসেবে ধরা হচ্ছে সে সব এলাকায় বসবাসরত কর্মী এবং যারা ছুটিতে ঢাকা ত্যাগ করে অন্যত্র গিয়েছিলেন তাদের করোনা টেস্ট না করে সংসদে ডিউটি না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাস্ক ও উপযুক্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে সবাইকে সংসদে প্রবেশ নিশ্চিত করা হবে।
অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ব্যক্তির প্রবেশ রুখতে ও সংসদ এলাকায় চলাচল নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন। এ কারণে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিবেশন চলাকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নেয়া হচ্ছে কঠোর ব্যবস্থা। এবারের অধিবেশনে করোনার কারণে থাকছে আরও কঠোর বিধিনিষেধ।
আপনার মন্তব্য