নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ জুন, ২০২০ ১২:৩৬

স্বাস্থ্যকেন্দ্র করতে চান ডা. ফেরদৌস খন্দকার

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে খ্যাতি পাওয়া বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকার দেশে এসে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ১৪ দিন। আজ সকালে তিনি কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত হন। মাতৃভূমি বাংলাদেশের মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছুটে আসেন। আক্রান্ত লোকদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল তার। যদিও এরই মধ্যে কিছু সময় চলে গেছে। তারপরও স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি।

রোববার (২১ জুন) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার পরিকল্পনার কথা জানান।

বিজ্ঞাপন

ফেসবুকে তিনি লিখেন, ''অবশেষে কোয়ারেন্টাইন মুক্ত হলাম আমি। কেটে গেলো ১৪টি দিন। সময়তো কাটবেই। থেকে যাবে কেবল স্মৃতি। এই মুহূর্তে কোন অভিযোগ নয়, কেবল ধন্যবাদই দিতে চাই সবাইকে। যারা গত ১৪টি দিন আমার সাথে ছিলেন। বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছেন, মানসিকভাবে শক্ত থাকতে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তবে একথা আমাকে বলতেই হবে যে, শুরুটা বেশ কঠিনই ছিল আমার জন্যে। আমার বিরুদ্ধে "অহেতুক" এবং "মিথ্যা অভিযোগে" বিরাট ঝড় উঠেছিল। সব ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ঝড়ও হয়তো থেমে গেছে।

যা বলছিলাম, দেশে আসার পর আমাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে দেয়া হয়েছে; এই বিষয়টি আমি প্রথম পাঁচদিন মানতেই পারছিলাম না। কেননা আমার এন্টিবডির সনদ ছিল। তখন মানসিকভাবে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। পরিবার, সহকর্মী, বন্ধু, সুধীজন, সহযোদ্ধারা, সাংবাদিক এবং দেশের মানুষের সহায়তা ও সমর্থন আমাকে সাহস জুগিয়েছে।

দেশে এসেছিলাম কয়েক সপ্তাহ দেশবাসীর জন্যে কাজ করবো বলে। সাথে ছোট্ট একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তুলে যাবো, এমন আশা ছিল। সেই লক্ষ্যেই দুই থেকে তিন সপ্তাহের জন্যে এসেছিলাম। যদিও সময় কিছুটা ক্ষেপণ হয়ে গেছে। এরপরও আমি মনে করি, কোন আক্ষেপ নেই আমার। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কিছুটা কাজ করে যাবো। তবে সাথে নিয়ে যাবো গত দুটি সপ্তাহে ঘটে যাওয়া অনেক কিছু ও অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে যেসব সৈনিক ভাইয়েরা আমার সাথে ছিলেন, তারা অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। অনেক সহযোগিতা করেছেন। আপনাদের মমতা কোনদিন ভুলবার নয়। সেই সাথে কুয়েত প্রবাসী কিছু ভাই শেষের দিকে কোয়ারেন্টাইনে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের ভালোবাসায় ভরা স্মৃতিগুলোও বাকি জীবন আমার সাথে থাকবে। কখনো যদি দেখা হয়, নিশ্চয়ই ভালো লাগবে; বুকে জড়িয়ে ধরবো আপনাদের। দেখা না হলেও, আপনাদেরকে আমার সবসময় মনে থাকবে।

দেখুন আমি অতি সাধারণ একজন চিকিৎসক। তবে দেশকে, দেশের মানুষকে খুব ভালোবাসি। এসেছিলাম, দুর্যোগের এই সময়টায় কেবলই দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। কোন রাজনৈতিক অভিলাষ বা ইচ্ছা আমার ছিল না; নেইও। ফলে যারা তেমনটি ভেবেছিলেন, আশা করছি আপনাদের ভুলটা ভেঙেছে। বাংলাদেশের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারির যোদ্ধারা করোনার এই সময়টায় রীতিমতো জীবন বাজি রেখে লড়াই করছেন। তাদের আত্মত্যাগ, এই জাতি সবসময়ই মনে রাখবে। সামনের দিনগুলোতেও তারা এমনিভাবে লড়ে যাবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য বিষয়ক ছোট্ট একটি সেটআপ শুরু করবো। কারো বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। মায়ের বিরুদ্ধে সন্তানের কোন অভিযোগ থাকে না। আমারো নেই। আবারো দেখা হবে। ভালোবাসা বাংলাদেশ। সবাই ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন। আপনাদের মঙ্গল হোক।''

উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে নিউ ইয়র্কে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলে অনেক চিকিৎসক চেম্বার বন্ধ রাখেন। সেখানে ব্যতিক্রম ছিলেন ডা. ফেরদৌস। সেই দুঃসময়ে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। চেম্বার খোলা রেখে করোনা আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন। এখন বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষের সেবা করতে তার দেশে আসার সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি।

তার দেশে আসার খবর শুনে সামাজিক যোগাযোগ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু হয়। বলা হয়, ডা. ফেরদৌস খুনী খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা কিংবা খুনি কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই। অথচ পুরো বিষয়টি মিথ্যা ও কাল্পনিক প্রমাণিত হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত