সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ মে, ২০১৮ ০০:০৫

ঐশীর বাবা-মা হত্যা মামলায় গৃহকর্মী সুমি খালাস

ফাইল ছবি

রাজধানীর চামেলীবাগে সাড়ে চার বছর আগে পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমানকে সহযোগিতার অভিযোগ থেকে গৃহপরিচারিকা খাদিজা আক্তার সুমিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

রোববার (৬ মে) ঢাকার মহানগর শিশু আদালতের বিচারক মহানগর দায়রা জজ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বলা হয়, সুমি হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছিল- এ অভিযোগ সন্দোহীতভাবে প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সুমি বলে,  “আমি তো সহযোগিতা করি নাই। আমি তো দোষী না সেটা বলছিলাম। আরও আগে এই রায় দেওয়া উচিৎ ছিল।”

হত্যাকাণ্ডের সময় ১১ বছর বয়সী সুমি বর্তমানে ১৬ বছর বয়সে খালাসের রায় পেয়ে খুবই আনন্দিত।

আইন ও শালিস কেন্দ্রের একজন মাঠকর্মীর সঙ্গে রোববার রায় শুনতে আদালতে আসে সুমি। এ মামলায় আইন ও শালিস কেন্দ্রের আইনজীবী মিজানুর রহমান তাকে আইনি সহায়তা দেন।

আইন ও শালিস কেন্দ্রের মাঠকর্মী  শামসুন্নাহার জানান, সুমি মিরপুরে তাদের নির্মল পুনর্বাসন কেন্দ্র থাকে। ভবিষ্যতে তার লেখাপড়া ও জীবন গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু আইন ও শালিস কেন্দ্র থেকে করা হবে।

তিনি বলেন, “২০১৪ সালে সুমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। মামলার কার্যক্রমের কারণে সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি। তবে এখন আবার তার পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হবে।”

এই মামলায় গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার অংশের বিচার শিশু আদালতে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের ১ জুন গাজীপুরের কিশোর সংশোধন কেন্দ্র থেকে মা সালমা বেগমের জিম্মায় জামিনে মুক্তি পায় সে।

এছাড়া এই মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের আদেশ দিয়েছিলেন।

সেদিন ট্রাইব্যুনাল রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, সারাদেশ যেখানে শিশু নির্যাতনের বিপক্ষে সোচ্চার সেখানে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে একজন শিশুর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন ছিল।

তারপর, ২০১৭ সালের ৭ মে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ঐশী রহমানের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে ৪ জুন এই হত্যা মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

একই বছরের ২২ অক্টোবর এ আদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে হাইকোর্ট। তখন এই রায়ে বলা হয়, সন্তানদের জন্য বাবা-মা ও অভিভাবকই হলেন প্রাথমিক শিক্ষক। এ হিসেবে তাদের জন্য ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করা ও সন্তানকে সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল।

এছাড়া, মামলার অন্য আসামি ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে খুনের ঘটনার পর ঐশীদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে দু’বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এবং অপর আসামী ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি এ মামলায় খালাস পান।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত