সিলেট টুডে ডেস্ক

২০ জানুয়ারি, ২০১৫ ২০:২৩

নাশকতার প্রতিবাদে রাজপথে নাগরিক সমাজ

নাশকতায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ জানিয়ে যে কোনোভাবে তা বন্ধ করতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন তারা ।

বিরোধী জোটের অবরোধে দেশব্যাপী চলা সহিংসতার প্রতিবাদে এবার রাস্তায় নামলেন নাগরিক সমাজ । নাশকতায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ জানিয়ে যে কোনোভাবে তা বন্ধ করতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন তারা ।


গত ১৫ দিন ধরে অবরোধে নাশকতায় অন্তত ২৭ জনের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ ব্যানারে এক দল শিক্ষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতি ও মানবাধিকারকর্মীর মানববন্ধন ও সমাবেশে এই আহ্বান জানানো হয়।

কর্মসূচিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, “এ অবরোধ কার বিরুদ্ধে? প্রয়োজনে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে হলেও এসব নাশকতা-সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।”

“সহিংসতা বন্ধ করতে যতখানি কাজ করা দরকার, ততখানিই সরকারকে করতে হবে,” বলেন সাংবাদিক আবেদ খান।

২০১৩ সালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর তাণ্ডব প্রতিরোধের আহ্বানে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’, যার আহ্বায়ক হন সুলতানা কামাল।

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ,  যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্বরান্বিত, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ, তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া, নারীর অধিকার সমুন্নত রাখার দাবিতে এক হন বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় এই শিক্ষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতি ও মানবাধিকারকর্মীরা।

২০১৩ সালে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধের মধ্যে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার মধ্যে আবার সক্রিয় হল এই সংগঠন।

ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “আমাদেরকে আমাদের সংবিধান অনুযায়ী অধিকার নিয়ে বাঁচতে দিন। আজকে দেশব্যাপী যে তাণ্ডব ঘটছে, যেখানে নর-নারী, শিশু, বৃদ্ধ আক্রমণের শিকার।

“যেখানে অন্ধ মায়ের একমাত্র ছেলে মারা যাচ্ছে আগুনে পুড়ে, যেখানে কলেজের ছাত্রী আহত অবস্থায় হাসপাতালে পড়ে কাতরাচ্ছে, যেখানে শ্রমিক, সে চালক হোক, হেলপার হোক, অন্য কোনো শ্রমিক হোক, সে রুটি-রুজি আয় করতে গিয়ে দুবৃর্ত্তের হামলার শিকার হচ্ছে, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাতে চাই।”

“আমরা বলতে চাই যে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করা জনসেবার পথ নয়। আমরা বলতে চাই যে গণনির্যাতন গণআন্দোলনের পথ নয়। আমরা চাই আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, আমরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের কাজ করতে পারি,” বলেন এই শিক্ষক।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি বলছে, সরকারের সাড়া না পেয়ে তারা অবরোধ দিতে ‘বাধ্য’ হয়েছেন। আর এই কর্মসূচিতে নাশকতা ঘটাচ্ছে সরকার।
অন্যদিকে সরকারও রয়েছেন অনড় অবস্থানে ।

নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, “জনগণকে এত বোকা ভাবা ঠিক নয়। নাশকতার শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি কি রাজনীতিবিদদের কানে পৌঁছায় না?

“নাশকতা আওয়ামী লীগ করছে, এটা যেমন হাস্যকর; তেমনি বাড়ি (খালেদা জিয়ার) সংস্কারের জন্য ইট-সিমেন্ট আনা হয়েছে, এটাও হাস্যকর।”

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন শুধু নই, আতঙ্কিত, ক্ষুব্ধ। আমরা এ সন্ত্রাস চাই না, আমরা স্বাভাবিক জীবন ও স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার চাই।”

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, “মিথ্যার বেসাতি, অভিনয়যুক্ত রাজনীতি চাই না।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও হিন্দু-বৌদ্ধ-থ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা রানা দাশগুপ্ত বলেন, “রাজনীতি আজ সন্ত্রাসের চোরাবালিতে হারিয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে এসব করা হচ্ছে।”

‘নাশকতা, সহিংসতা বন্ধ কর, গণতন্ত্র সমুন্নত রাখ’ আহ্বানে মানববন্ধনে অংশ নেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী, সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলসহ অনেকে।

ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “আজকে আমাদের এ আবেদন রাজনৈতিক নেতাদের কাছে। এটা নাগরিক সমাজের দাবি বলে আমরা মনে করি এবং এ দাবির মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই। এ দাবির মধ্যে আমাদের বেঁচে থাকার কথা আছে।”

“রাজনৈতিক নেতারা আমাদের এই সামান্য কথায় কর্ণপাত করবেন এবং তারা স্বাভাবিক রাজনীতির পখ ধরবেন,” আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত