ডেস্ক রিপোর্ট

২০ জানুয়ারি, ২০১৫ ২১:১০

ক্রসফায়ার আসছে: জিরো টলারেন্সে যৌথ বাহিনী

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে জিরো টলারেন্স নীতি ধরেই এগুচ্ছে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি'র সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধে সহিংসতা ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখন থেকে দুর্বৃত্তদের বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ, র্যা ব ও বিজিবি নিয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান। এছাড়া নাশকতাকারিদের পাকড়াও করতে সরাসরি গুলিরও নির্দেশনা রয়েছে মাঠ প্রশাসনে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা এবং যৌথবাহিনীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে জিরো টলারেন্স নীতিতে এগুচ্ছে সরকার।

পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, র‍্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হামলাকারীদের যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন তারা।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় থেকে কঠোর নির্দেশনার পর মাঠ প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। ইতোমধ্যে ফলও আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। ফলে নাশকতাকারিদের অনেকেই ধরা পড়ছে এবং গত এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পাঁচ জন নিহতও হয়েছে বলে জানা গেছে।

যৌথ বাহিনীর প্রধানগণ নিজ নিজ বক্তব্যে নাশকতাকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেছেন-  নৈরাজ্য সহ্য করা হবে না। অবরোধকারীরা যতই সন্ত্রাসী কর্মকা করুক না কেন, এবার আর পার পাবে না। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা হবে।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান- সন্ত্রাসীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। রাস্তায় যারা সাধারণ মানুষের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের বক্তব্য কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়। যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে, ততদিন অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।

র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সহিংসতাকারীদের উদ্দেশে বলেন- সন্ত্রাস করতে হলে জীবন হাতে নিয়ে এসো, তোমাদের কোনো ছাড় নেই।

তিন বাহিনীর প্রধানদের বক্তব্যে বিএনপি তাদের উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানালেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে হার্ডলাইনে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল তাদের বলে জানা গেছে।

এদিকে, গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যানে জানা গেছে- গত পাঁচ দিনে র্যাাব ও পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের তিন নেতা। এদের মধ্যে ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে এক ছাত্রদল নেতা, এক জামায়াত নেতা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে র্যা বের সঙ্গে এক ছাত্রদল নেতা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

খিলগাঁও থানা ছাত্রদল নেতা নিহত
মঙ্গলবার (২০ জানুয়ারি) ভোর রাতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন। নিহত নুরুজ্জামান জনি খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক।

জনির পিতা ইয়াকুব আলী সংবাদমাধ্যমদের জানান- গতকাল (১৯ জানুয়ারি) বেলা তিনটার দিকে জনির ভাই হীরাকে পুলিশ ধরে নিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে। হীরাকে দেখতে দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়েছিলেন জনি। বেলা ৩টার দিকে জেলগেট থেকে তাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারীরা। 

ঘটনার অন্য ব্যাখ্যা দিয়ে পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন- মঙ্গলবার ভোর রাত ৩টার দিকে খিলগাঁওয়ের বালুর মাঠে অভিযানে গেলে দুর্বৃত্তরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এসময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে জনি আহত হন। তাকে উদ্ধার করে ভোর ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জনিকে মৃত ঘোষণা করেন।

নড়াইল পৌর কাউন্সিলর ঢাকায় নিহত
ছাত্রদল নেতা নিহতের একদিন আগে সোমবার (১৯ জানুয়ারি) ভোর রাতে রাজধানীর মতিঝিলে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন নড়াইল পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমরুল কায়েস (৩৪)। শুক্রবার রাতে রাজধানীর নারিন্দা এলাকার একটি মেস থেকে ডিবি পরিচয়ে তাকে ধরে নেয়। এরপর তিন দিনের মাথায় তার লাশ পাওয়া যায়। তার শরীরে ১৯টি গুলির ক্ষতচিহ্ন রয়েছে বলে সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়। ইমরুল কায়েস জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ছিলেন। ইমরুলের বিরুদ্ধে নড়াইল সদর থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, ডিবির পূর্ব বিভাগের মতিঝিল জোনাল টিম ও খিলগাঁও জোনাল টিম মতিঝিল এজিবি কলোনি ও আইডিয়াল কলেজের মধ্যবর্তী জায়গায় ছয়-সাতজন সন্দেহভাজনকে দেখে। সন্দেহভাজনেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি ককটেল নিক্ষেপ করে ও গুলি করা শুরু করে। এরপর ডিবির সদস্যরাও ১৭টি পিস্তলের ও ২৩টি শটগানের গুলি ছোড়েন। ডিবির দাবি, সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে মারা যান ইমরুল। ঘটনাস্থল থেকে গুলিভর্তি পিস্তল ও পাঁচটি ককটেল উদ্ধার করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছাত্রদল নেতা নিহত
১৬ জানুয়ারি শুক্রবার ভোর রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানের মধ্যে চাঁপাই নবাবগঞ্জের কানসাটে র্যালবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন আরেক ছাত্রদল নেতা। নিহত মতিউর রহমান শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন।

বিএনপির দাবি, গ্রেফতারের পর পরিকল্পিতভাবে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি অধ্যাপক মো. শাহজাহান মিঞা বলেন, মতিউর রহমানকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে। এরপর পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে। তার বিরুদ্ধে থানায় কোন মামলা বা একটি জিডিও ছিল না।

র‍্যাব দাবি করে, ঘটনার আগের দিন বৃহস্পতিবার শিবগঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মতিউর রহমানসহ তিনজনকে আটক করা হয়। এদের নিয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় কানসাট বাজার এলাকায় তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছার পরপরই মতিউরের সহযোগীরা র্যাাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। র‍্যাবও তখন পাল্টা গুলি করে। একপর্যায়ে মতিউর পালানোর চেষ্টা করেন। ওই সময় দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে তিনি নিহত হন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে 'ক্রসফায়ারে' অন্তত ১২৮ জন নিহত হয়েছে। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭২।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত