সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ১৪:২৮

উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্রাটের মুক্তি দাবি মায়ের

চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্তানের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের মা সায়রা খাতুন চৌধুরী। তিনি বলেন, আমি একজন মা হিসেবে আপনার কাছে আকুতি করছি, ওকে মুক্ত করে দিন। তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়ে আমার সন্তানের জীবন রক্ষা করুন।

রোববার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সম্রাটের মায়ের পক্ষে তার বোন ফারহানা চৌধুরী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

এতে বলা হয়, সম্রাট গ্রেপ্তারের ১০ দিন আগে থেকে অফিসে ছিল না। তার অফিস ছিল অরক্ষিত। শরীর খারাপ থাকায় সে অন্যত্র অবস্থান করছিল। তার অফিসে মদ, ইয়াবা ও পিস্তল কিছুই ছিল না। আমাদের আশঙ্কা, এটি পরিকল্পিত সাজানো নাটক ছাড়া কিছুই না।

লিখিত বক্তব্যে সম্রাটের মা সায়রা খাতুন চৌধুরী বলেন, গত ৬ অক্টোবর আমার সন্তানকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে স্থান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, সে স্থান থেকে কোনও প্রকার অস্ত্র কিংবা মাদক পাওয়া যায় নাই। কিন্তু আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পেলাম— তাকে কাকরাইল অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় এবং প্রায় চার ঘণ্টা ১৭ মিনিট তার অফিসে তল্লাশি করা হয়। তল্লাশি চলাকালীন সময়ে কোনও গণমাধ্যমকর্মীকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সম্রাটকে নিয়ে অফিসের ভেতরে প্রবেশের সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় লাইভ সম্প্রচারে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু লোক কাঁধে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করে এবং অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ওই সব লক্ষ্য করা যায়নি।

বিভিন্ন ক্লাবের ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্রাটের জড়িত থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের প্রতিটি ক্লাব পরিচালনা করার জন্য কমিটি রয়েছে। খেলাধুলা পরিচালনার জন্য ওইসব ক্লাব থেকে নিপুণ খেলা পরিচালনার জন্য ক্লাব কর্তৃক প্রকাশ্যে ডাক (লিজ) দেওয়া হয়। আমার সন্তান সম্রাট কোনও ক্লাবের পরিচালনা কমিটির সদস্য নয় এবং ডাক গ্রহণকারীও নয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এবং ব্যক্তিগত আক্রোশে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হচ্ছে।

সায়রা খাতুন চৌধুরী আরও বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের যে মামলায় তাকে ছয় মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে, সে মামলার আদেশ আমরা এখনও হাতে পাইনি। ক্যাঙ্গারু বাংলাদেশি বন্যপ্রাণী নয় এবং বাংলাদেশ এই প্রাণীটির বিচরণ দেখা যায় না। যেহেতু ক্যাঙ্গারু বাংলাদেশে শিকার হয়নি, এটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের মধ্যে পড়ে না। ক্যাঙ্গারুর উক্ত চামড়াটি এক প্রবাসী বাংলাদেশি তাকে উপহার হিসেবে প্রদান করে বিধায়, এটি আইনবিরোধী কাজ নয়। এজন্য সাজা দেওয়ার বিধান নাই।

সম্রাট দলে অনুপ্রবেশকারী নয় দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উন্নত চিকিৎসার জন্য সন্তানের মুক্তি দাবি করেন মা সায়রা খাতুন চৌধুরী।

তিনি বলেন, আমি একজন মা হিসেবে আপনার কাছে আকুতি করছি, সম্রাটের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে ওকে মুক্ত করে দিন। তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়ে আমার সন্তানের জীবন রক্ষা করুন।

এর আগে সম্রাটের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে তার মা সায়রা খাতুন চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ১৯৯৯ সালে ডা. দেবী শেঠীর অধীনে সম্রাটের ওপেন হার্ট সার্জারির মাধ্যমে ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়। তখন থেকে সম্রাট আজ অব্দি অসুস্থ শরীর নিয়ে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর সম্রাটের ভাল্ব প্রতিস্থাপন করার কথা ছিল সিঙ্গাপুরে। কিন্তু ২৮ সেপ্টেম্বর ছিল প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। এ উপলক্ষে ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের উদ্যোগে কোরাখানি, মিলাদ মাহফিল ও রক্তদান কর্মসূচি থাকায় তার সিঙ্গাপুরে যাওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, ৬ অক্টোবর সম্রাটকে তার সহযোগী আরমানসহ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের প্রথম দিন থেকেই সম্রাট কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে কাকরাইলে তার নিজ কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। পরে তার অবস্থান ও আটক নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এরই মধ্যে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তার ব্যাংক হিসাব স্থগিত ও তলব করা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর তার বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর ৮ অক্টোবর সকাল ৬টার দিকে কারাগারে সে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তাকে কারাগার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে ১২ অক্টোবর সম্রাটকে হাসপাতাল থেকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত