সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ জানুয়ারি, ২০২০ ১১:২০

আম বয়ানে শুরু বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব

ফজরের নামাজের পর ভারতের মাওলানা চেরাগ আলীর আম-বয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে দাওয়াতে তাবলিগের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ইজতেমা।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমা শুরু হলেও বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে বিশেষ বয়ান। মুসল্লিরাও ওইদিন থেকে আসতে শুরু করেছেন কহর দরিয়ার তীরে। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ছিল টুপি পরা মানুষের ময়দানমুখী স্রোত। আজ এখানে জুমার নামাজে নামবে মুসল্লির ঢল।

এদিকে রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে বৃহস্পতিবার বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে আগত বিদেশি মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। এ সময় বিদেশি মুসল্লিরা ইজতেমা আয়োজন ও সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানান।

ইজতেমার অন্যতম সমন্বয়কারী হাজী মুনির হোসেন জানান, অনেক মুসল্লি ময়দানে চলে আসায় বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে মুসল্লিদের উদ্দেশে প্রাক-বয়ান চলতে থাকে। বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি শেহজাদ, তা বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মুফতি আজিম উদ্দিন।

বাদ জোহর বয়ান করেন ভূপালের মুরব্বি ইকবাল হাফিজ, তরজমা করেন মাওলানা মনির ইউসুফ। বাদ আসর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা শামীম, তা তরজমা করেন মাওলানা জিয়া বিন কাসেম। আজ বাদ ফজর মাওলানা চেরাগ আলীর বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফ আলী।

দ্বিতীয় পর্বের জিম্মাদার ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসেফুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভি এ ইজতেমায় আসবেন না। তবে নিজামুদ্দিনের পক্ষ থেকে তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি ও আলেমসহ ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এরই মধ্যে ময়দানে এসে পৌঁছেছে। তাদের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হবে বিশ্ব ইজতেমা।

হাজী মনির হোসেন জানান- সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত, ইরাক, তুরস্ক থেকে শুরু করে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে বিদেশি মেহমানরা ময়দানে এসেছেন।

ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে প্রথম পর্বের মতো এ পর্বেও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ইজতেমা ময়দানের উত্তর পার্শ্বে নিউ মন্নু কটন মিলের ভেতরে ক্যাম্প চালু রেখেছে। ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে রোববার পর্যন্ত বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া ঢাকা অভিমুখী সব ট্রেন টঙ্গী রেল স্টেশনে ৫ মিনিট বিরতি দেবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থাও (বিআরটিসি) বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করেছে।

নিরাপত্তা: গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম পর্বে চেয়ে ২য় পর্বে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের কামরায় বিশেষভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। এ ছাড়া যাতায়াতের সুবিধার্থে ট্রাফিক ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তায় সিসিটিভি, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো ময়দান মনিটরিং করা হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের সেবা: দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায়ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন আগত মুসল্লিদের ২৪ ঘণ্টা সেবাদান করবে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রথম পর্বে যেসব সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে তা দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায়ও অব্যাহত থাকবে।

বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা: প্রথম পর্বের ন্যায় ২য় পর্বেও বিপুল পরিমাণ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইজতেমা মাঠে আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ বিতরণ করবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, হামদর্দ, ইবনে সিনা, যমুনা ব্যাংক, সিটি করপোরেশন, র‌্যাব, সিভিল সার্জন কার্যালয়, ইসলামী ফাউন্ডেশনসহ প্রায় অর্ধশত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আখেরি মোনাজান পর্যন্ত এসব সেবা অব্যাহত থাকবে।

ইজতেমার প্রথম আয়োজন শুরু হয় ১৯৪৬ সালে কাকরাইল মসজিদে। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৭ সালে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।

বিশ্ব ইজতেমা আমাদের গৌরব -ধর্ম প্রতিমন্ত্রী : আশকোনা ক্যাম্পে মতবিনিময়কালে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, তাবলীগ জামাত দ্বীনের মেহনতে নিবেদিত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিঃস্বার্থ স্বেচ্ছাশ্রম ও অনুদানে পরিচালিত হয়। সারা পৃথিবীতে ইসলামের প্রচার ও মানুষকে দ্বীনের পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাবলিগের খেদমত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাবলিগ জামাতের বিশ্বব্যাপী কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমার এত বিশাল আয়োজন করা নিঃসন্দেহে একটি গর্বের বিষয়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দূরদর্শিতা দিয়ে ইসলামের খেদমতে অরাজনৈতিক সংগঠন তাবলিগ জামাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বুঝতে পেরেছিলেন। একজন সত্যিকারের ইমানদার হিসেবে বঙ্গবন্ধু দাওয়াতি কাজের সুবিধার্থে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের জন্য বিশাল জায়গা বরাদ্দ করেছিলেন। যার ফলে আজকে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ধার্মিক মুসলিম মহীয়সী নারী। তিনি বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক ও সজাগ।

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করার জন্য তিনি সবাইকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত