সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ জানুয়ারি, ২০২০ ০১:২৮

সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার রায় আজ

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলার মামলার রায় ঘোষণা আজ। সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম এই রায় ঘোষণা করবেন।

২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে সিপিবি’র মহাসমাবেশে বোমা হামলায় খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা কমরেড হিমাংশু মণ্ডল, খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা কমরেড আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরা থানার লতিফ বাওয়ানি জুটমিলের শ্রমিক নেতা কমরেড আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের কমরেড মোক্তার হোসেন মারা যান। পরবর্তীতে ওই বছরের দুই ফেব্রুয়ারি খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কমরেড বিপ্রদাস রায় ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে মারা যান। এছাড়াও এ হামলায় শতাধিক সিপিবি নেতাকর্মীরা আহত হন।

১৯ বছর আগের চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় গত ১ ডিসেম্বর বিচার কাজ শেষ হয়। মামলায় যেসব আসামিকে বিচারে সোপর্দ করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলে আশা রাষ্ট্রপক্ষের।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সালাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, দীর্ঘদিন আগের এই ঘটনায় দোষীদের দায় প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আশা করছি আসামিরা সবাই সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

অনেক নাটকীয়তা শেষে মামলাটি বিচারের জন্য এই পর্যায়ে এসেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনাটি জোট সরকারের আমলে একধরনের ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই বিচারে অনেক বিলম্ব হয়েছে। তবে সিআইডির পুনঃতদন্তে মূল রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দোষীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে এটি স্বস্তির। আসামিরা সর্বোচ্চ সাজা পেলে আমাদের এই স্বস্তিটা আরও বাড়বে।

বিলম্বের কারণে মামলায় সাক্ষ্যপ্রমাণে বেগ পেতে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আইনজীবী সালাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, বিলম্বের কারণে অনেক আলামত হয়তো নষ্ট হয়েছে। তারপরও রাষ্ট্রপক্ষে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। যেটুকু সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আসামিদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই হবে বলে আমরা আশা করি।

২০১৪ সালের ২১ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১০৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৮ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। তবে আসামিপক্ষে কেউ সাফাই সাক্ষী দেননি।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, রাজধানীর পল্টন ময়দানে ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলায় ৫ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি মর্মে তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল।

২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ সালের আগস্টে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা হয়। এসব ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়ার পর ২০০৫ সালে মামলাটি আবার পুনঃতদন্তের আদেশ দেন আদালত। মামলাটি পুনঃতদন্তের পর ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর মৃণাল কান্তি সাহা।

এই মামলায় মোট ১৩ জন আসামিকে বিচারে সোপর্দ করা হয়। তারা হলেন- মুফতি আব্দুল হান্নান, মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মো. মশিউর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও নুর ইসলাম।

এর মধ্যে হরকতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বাকি আসামিদের মধ্যে প্রথম চারজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকলেও ৮ জন পলাতক রয়েছেন।

রায় প্রসঙ্গে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছর পর অবশেষে মামলাটির রায় হচ্ছে। এ রায়ে প্রকৃত অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা হবে বলে আশা করছি। সেইসঙ্গে হামলার পেছনের ইন্ধনদাতাদেরও চিহ্নিত করতে হবে। তাদেরও আইনের আওতায় এনে সাজার ব্যবস্থা করতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত