সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ জানুয়ারি, ২০২০ ১৯:২৬

ওসির সামনেই ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে মারধর করে আসামির লোকজন

ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে পাবনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

আসামি পক্ষের লোকজন ওই পুলিশ কর্মকর্তার সামনেই মামলার সাক্ষী আব্দুল আলীম নামের ওই যুবককে লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলার মালিগাছা ইউনিয়নের গাছপাড়া এলাকায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনার ফাঁস হওয়া সিসিটিভি ফুটেজে সদর থানার ওসি (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম ও একজন কনস্টেবলকে ঘটনাস্থলে দেখা গেছে। ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

এ ঘটনায় পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আক্তার মিলিকে প্রধান করে ৩ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামের মো. পাঞ্জাব প্রামাণিকের ছেলে মো. ফিরোজ ও তার সহযোগীরা মালিগাছা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের একটি বাড়িতে প্রবেশ করে এক তরুণীকে ধর্ষণ করেন। এ সময় ওই তরুণীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা এসে ফিরোজকে আটক করলেও অন্যরা পালিয়ে যায়। ফিরোজকে আটকের পর মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফ ও তার লোকজন তাকে ছাড়িয়ে নিতে ওই তরুণীর বাড়িতে উপস্থিত হয়। এ সময় চেয়ারম্যান শরীফ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলে ফিরোজকে নিজ জিম্মায় নেন। কিন্তু তিনি ফিরোজকে পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ছেড়ে দেন।

স্থানীয়রা জানায়, পরের দিন এ ঘটনা জানতে পেরে ২১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৭টায় ওই তরুণী নিজে ফিরোজের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বিচার দাবি করেন। এ সময় ফিরোজসহ চেয়ারম্যানের শরিফের লোকজন ওই তরুণীকে বেধড়ক মারপিট করেন। এরপর ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়। পরে তারা ওই তরুণীকে মৃত ভেবে তার বাড়ির এলাকার ফাঁকা জায়গায় তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ওই তরুণীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে রোববার রাতে স্থানীয় চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফসহ ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত ২০/৩০ জনের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে।

আহত আব্দুল আলীম বলেন, মালিগাছা ইউনিয়নের ওই ধর্ষণ মামলার তদন্তের বিষয়ে কথা বলতে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে ডেকে নেন সদর থানার ওসি (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম। এ সময় চেয়ারম্যান শরীফের ছোট ভাই আরিফুলের নেতৃত্বে একদল লোক সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন। ওসির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাপোকথনের পরই আরেকটি একটি ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আরিফুল লোকজন নিয়ে আমার ওপর হামলা চালায়। পুলিশের সামনেই তারা লোহার রড, হকি স্টিক দিয়ে পেটাতে শুরু করে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরই একটু আগেই ওসি (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম নীল রঙের ব্লেজার পড়া অবস্থায় বেড়িয়ে যান সেখান থেকে।

তিনি জানান, পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে অবস্থার একটু উন্নতি হলে সোমবার রাতে ফের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

আব্দুল আলীমের মা আলেয়া খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে পুলিশ ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়। সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে জখম করে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুন প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনায় আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি। পুলিশ এমন কাজ করতে পারে ভাবতেই পারছি না।

এ ব্যাপারে মানবাধিকারকর্মী মুজতবা আব্দুল আহাদ উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, দুই-একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন কাজ পুরো বিভাগকে বিতর্কিত করে। এ ধরনের কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনলে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজ করতে সাহস পাবেন না।

এ ব্যাপারে ওসি (তদন্ত) খাইরুলের বক্তব্য নিতে তার কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি রাজশাহী সাক্ষ্য দিতে গেছেন বলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদ জানান।

পাবনার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস হামলার ঘটনাকে আকস্মিক ও অনাকাঙ্খিত দাবি করে বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফিলতি আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোয়েন্দা) শামিমা আকতারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে আহত আব্দুল আলীমের স্ত্রী রুমা খাতুন বাদি হয়ে দশজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সূত্র: সমকাল

আপনার মন্তব্য

আলোচিত