সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ১৬:৫৮

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ইইউ’র সমর্থন কামনা প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্থায়ী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর অব্যাহত সমর্থন প্রত্যাশা করেছেন।

‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান।’

বুধবার ইতালির রোমে বাংলাদেশ এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিওসিপে কঁতে’র মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে ৯ দফা যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণায় শেখ হাসিনা একথা বলেন। খবর বাসসের।

ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন পালাজো চিগিতে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই প্রধানমন্ত্রী উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।’

তিনি বলেন, প্রায় এক ঘণ্টার এ বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং দু’দেশের মধ্যকার বর্তমান অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, উভয় পক্ষই রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে গত ২৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন কামনা করেছেন।

বৈঠকে জিউসেপ কোঁতে ইতালির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

তিনি বাংলাদেশের অনুসৃত অতিথেয়তার নীতি অব্যাহত রাখতে এই জরুরি মানবিক অবস্থা মোকাবেলা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎসাহ প্রদানে জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ইতালির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার কথা উল্লেখ করেন।

যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, দুই প্রধানমন্ত্রীর ৫ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক পরিলক্ষিত হয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘উভয় পক্ষই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের মধ্যে উন্নয়ন, শ্রম ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আরও নিবিড় সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন’ ।

দুই নেতা ‘এভরিথিং বাট আমর্স’ অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক নীতির আওতায় ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানির গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেন।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিনিময়ের ইতিবাচক উন্নয়নের যৌথ ঘোষণায় আরও বলা হয়- বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে বিনিময়ের সার্বিক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে, যা প্রায় ২ বিলিয়ন ইউরো’রও বেশি।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতির কথা স্বীকার করে বিবৃতিতে তারা বলেন, গত কয়েক বছরে সার্বিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বেড়ে ২ বিলিয়ন ইউরোর ওপরে দাঁড়িয়েছে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কথা স্বীকার করেন, যার লক্ষ্য ২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) সমূহের তালিকা থেকে বের করে আনা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘উভয় পক্ষই টেক্সটাইলসহ বাংলাদেশে ইতালীয় সংস্থাগুলোর উপস্থিতির প্রশংসা করেন।’

এতে আরও বলা হয়, উভয় নেতাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-ইতালি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বিশেষকরে তৈরি পোশাক খাত, ওষুধ শিল্প, হাল্কা প্রকৌশল, চামড়া, হাইটেক এবং প্রচলিত এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উভয় খাতে সমৃদ্ধকরণে নিজস্ব আস্থা ব্যক্ত করেন।

নীল অর্থনীতির ক্ষেত্রটিকেও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, একই সঙ্গে ইতালির আউটরিচ কার্যক্রম ভারত মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ) এর সঙ্গে সম্পর্কিত।

বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় নেতাই ইতালিতে ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি বৃহৎ বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের অবস্থানের কথা স্মরণ করেন, যাদের বেশিরভাগই ইতালীয় সামাজিক কাঠামোয় সুসংহত। আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অভিবাসনের ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় করার দিকে নিবদ্ধ ছিল।

দুই প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত অভিবাসন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সম্ভাব্য আইনি পথের বিষয়ে কথা বলেছেন।

তাঁরা জাতিসংঘের আওতার মধ্যে ইতালি এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতার ইতিবাচক মাত্রার প্রশংসা করেন, যেখানে উভয় দেশই পরম্পরাগত ভাবে একে অপরের প্রার্থিতার সমর্থক।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) দলের পদমর্যাদার থেকে উত্তরণ হওয়ার পরেও ইইউ’র পণ্যবাজারে বাংলাদেশী পণ্যের প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে ইতালির সমর্থন চেয়েছে।

দুই প্রধানমন্ত্রী সম্ভাব্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি (সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি, রাজনৈতিক পরামর্শ, কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা) সম্পর্কিত চলমান আলোচনার বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘উভয় পক্ষই আলোচনা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে।’

উভয় নেতাই ২০২২ সালে বাংলাদেশ এবং ইতালির কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীকে গুরুত্ব প্রদান করেন।

তাঁরা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোর নিজ নিজ উদ্যোগে উভয় দেশের রাজধানীতে একত্রে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এই ইভেন্টটি উদযাপনেরও আহ্বান জানান।

দুই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনেরও উল্লেখ করেন (১৭ মার্চ ২০২০ সাল থেকে ২৬ মার্চ ২০২১ সাল)।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব বর্ষ উদযাপনকালে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিওসিপে কঁতে’কে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। কঁতে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোয় প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ ধন্যবাদ জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত