নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ১৫:৩৬

পাপিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রেপ্তার: কাদের

যুব মহিলালীগের সদ্য বহিস্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সেতু ভবনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।

পাপিয়ার অপরাধের তথ্য প্রধানমন্ত্রীর জানা ছিল জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, পাপিয়ার ঘটনা প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানতেন এবং তার নির্দেশেই পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পাপিয়ার ঘটনার পর যুব মহিলালীগের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না, সাংবাদিকরা এমনটা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুব মহিলালীগের ‘টাইম ইজ ওভার’। মার্চ মাসে তাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কাউন্সিল করে নতুন কমিটি আসবে।

আর পাপিয়ার সঙ্গে অপকর্মে যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান কাদের।

ওবায়দুল কাদের এসময় বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, তাদের দলের কেউ অপরাধী থাকলেও তারা তাদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা করে দেখিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা একটা বড় দল, এই দলে ভালো খারাপ সবাই আছে। তবে এই দলে খারাপ কেউ চিহ্নিত হলে তার অপকর্মের শাস্তির বিধান এই দলে আছে।

উল্লেখ্য, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে নয়াদিল্লী যাওয়ার সময় বহির্গমন গেট থেকে পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান (৩৮) ও ব্যক্তিগত সহকারী সাব্বির খন্দকারকে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরে তাদের তথ্যমতে, হোটেল ওয়েস্টিন থেকে পাপিয়া ও তার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবাকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে জানান, হোটেল ওয়েস্টিনের ২১ তলার প্রেসিডেন্ট কক্ষটি গত নভেম্বরে ভাড়া নেন পাপিয়া। তিনি গত তিন মাসে ওই কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করেছেন প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। ১৯ তলায় একটি বার রয়েছে, যেটি তিনি পুরোটাই বুক করে নিতেন। সেখানে প্রতিদিন তিনি আড়াই লাখ টাকা মদের বিল পরিশোধ করতেন। সব মিলিয়ে দেখা যায়, গত তিন মাসে তিনি প্রায় তিন কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষকে।

র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, “পাপিয়ার আয়কর ফাইল তলব করে দেখা গেছে, সেখানে তিনি বছরে ২২ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। অথচ তার প্রতিদিন বারের বিলই আসে আড়াই লাখ টাকা। এত টাকার উৎস কোথায়? পাপিয়া র‌্যাবকে জানিয়েছেন, যারা হোটেলে আসতেন, তাদের কাছে মেয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এরপর অশ্লীল ভিডিও তুলে ওই সব ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো।

শাফী উল্লাহ বুলবুল আরও বলেন, “পাপিয়া পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তেজগাঁও এফডিসি গেটসংলগ্ন এলাকায় অংশীদারিত্বে তার একটি ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামক গাড়ির শোরুম আছে। এ ছাড়া নরসিংদী জেলায় তার ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামে একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার আছে। এসব ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

তিনি সমাজসেবার নামে নরসিংদী এলাকায় অসহায় নারীদের আর্থিক সহযোগিতার নামে তাদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত করতেন। বছরের অধিকাংশ সময় তিনি নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করেন। নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য তার একটি ক্যাডার বাহিনী আছে। এ ছাড়া তার স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি নরসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে জাল টাকা, ডলারসহ প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।’ পরদিন রোববার দুপুরে পাপিয়ার ফার্মগেটের বাসা থেকে অস্ত্র, মদসহ বিপুল অবৈধ টাকা উদ্ধার করে র‍্যাব। পরে বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০টি পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।’

গ্রেপ্তারের পর যুব মহিলালীগ পাপিয়াকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্যে বহিস্কার করেছে। পাপিয়া বর্তমানে পাঁচদিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত