নিজস্ব প্রতিবেদক

০৫ জানুয়ারি, ২০১৬ ২২:৩২

শান্তিপূর্ণ ৫ জানুয়ারি : হাফ ছেড়ে বাঁচল দেশ

আশঙ্কা ছিল খুব আবারও কি ফিরে আসছে ৫ জানুয়ারি ২০১৫, এর পরবর্তী সময়; কিংবা আসে নি তেমন কোন পূর্বাভাস! হাফ ছেড়ে বাঁচল দেশ। সব আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করে দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কাটল ৫ জানুয়ারি ২০১৬, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২ বছরপূর্তি। বিএনপি’র কাছে যা ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আর আওয়ামী লীগের কাছে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বর্জন করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সে নির্বাচনে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনাভোটে নির্বাচিত হন। প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ একে নিয়মরক্ষার নির্বাচন বললেও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তারা ২০১৯ সালের আগে ক্ষমতা ছাড়ছে না জানায়।

এদিকে, দশম সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধের ডাক দেওয়া বিএনপি নির্বাচনের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচির ডাক দিলে সরকারের বাধার সম্মুখীন হয়। বিকেলে সমাবেশ করতে পল্টনে যেতে চেয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। প্রতিবাদে গুলশান কার্যালয়ের গেটের ভেতরে দাঁড়িয়েই দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন তিনি। এরপর বিএনপি টানা অবরোধের ডাক দিলে দেশের ওপর নেমে আসে নাশকতার রাহু।

২০১৫ সালে বিএনপির হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে নজিরবিহীন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। যার মূলে ছিল চলন্ত বাসে পেট্রোলবোমা হামলা। দীর্ঘ তিন মাসের টানা অবরোধে শতাধিক লোক নিহত হন। দেড় শতাধিক লোককে আগুনে দগ্ধ করা হয়। পেট্টোলবোমা, ককটেল আর আগুনে বিপর্যস্ত হয় জনজীবন। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে সে সব নাশকতায় বিএনপি-জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হয়। যদিও বিএনপি এরজন্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দায়ি করে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে অর্থনীতি। বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে যা প্রায় ১৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট ও সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে পেট্টোলবোমাবাজি, রাজপথের আন্দোলনের ব্যর্থতা ও সরকারের দমননীতির কারণে গত দুই বছরে বিএনপি রাজনৈতিক শক্তি হারিয়েছে। যার প্রমাণ হয়েছে সদ্য সমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচনে। নির্বাচনে বিএনপির বিশাল ভরাডুবি হয়, যদিও তারা এ নির্বাচনকে কারচুপির অভিযোগে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের দুইবছরপূর্তির দিনটিকে ঘিরে দেশে ব্যাপক রাজনৈতিক উত্তাপ ছিল। আর উত্তাপে জ্বালানি যুগিয়েছে ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) দুই দলের সমাবেশের অনুমতি সংক্রান্ত বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে। অবশ্য দুই দলই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল। পরবর্তীতে অবশ্য সিটি কর্পোরেশন দুই দলকে তাদের নিজ নিজ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্মুখে জনসভার অনুমতি দেয়।

৫ জানুয়ারি ঘিরে এবারও আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুদলেরই কর্মসূচি থাকার কারণে সহিংসতার আশঙ্কা করা হলেও এখনো পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে দিয়েই দুই দলই শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সমাবেশ শেষ করেছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রহসনের নির্বাচন আখ্যা দিয়ে ওই নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। তাদের মূল দাবি ছিল, নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। অন্যদিকে বিএনপির তত্ত্বাবধায়কের দাবি অগ্রাহ্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অবিচল ছিল আওয়ামী লীগ। সে মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে ১৫০টির বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। সংসদে প্রথমবারের মতো বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয় জাতীয় পার্টি।

ওই নির্বাচন প্রতিহত করতে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ১৮ দলীয় জোটের। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত ১৮ দলের হরতাল-অবরোধ চলাকালে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হন শতাধিক মানুষ। দুদলের সমঝোতায় চেষ্টা-তদবির চালায় পশ্চিমা বিশ্বও। শেষ পর্যন্ত তাদের সে চেষ্টা কোনো কাজেই আসেনি। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের ক্ষণ যত এগিয়ে আসতে থাকে বাড়তে থাকে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা। ভোটগ্রহণের দিন অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১১ জেলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হন। তাদের বেশিরভাগই পুলিশের গুলিতে নিহত হন বলে গণমাধ্যমের খবর। ওই নির্বাচনকে সামনে রাখে খালেদা জিয়ার অভিযোগ ছিল, তাকে কার্যত গৃহবন্দী করে রেখেছে সরকার।

একবছর পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতেও দেখা যায় খালেদা জিয়ার সামনে একই চিত্র। গুলশান কার্যালয় থেকে তাকে বের হতেই দেয়া হয়নি। বের হতে না পেরে কার্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছে দাঁড়িয়েই বক্তব্য দিয়ে ফিরে যান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

৫ জানুয়ারি ২০১৬-কে ঘিরে সব আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ- বিএনপি কোন দলই সমাবেশ করতে না পারলেও দল দুটি পৃথক তিন স্থানে সমাবেশ করে। আওয়ামী লীগ প্রথমে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ ১৮টি স্পটে সমাবেশের কথা বললেও পরে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে তা সঙ্কুচিত করে। কেবল বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও রাসেল স্কয়ারে সমাবেশ করেছে তারা। অন্যদিকে বিএনপি সমাবেশ করেছে নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আগেই বলেছিলেন, তারা যদি সমাবেশের অনুমতি নাও পান তবু সাংঘর্ষিক কোনো কর্মসূচি দেয়া হবে না।

আওয়ামী লীগ- বিএনপি দুই দলই পুলিশের দেওয়া শর্ত মেনেই সমাবেশ করেছে। সমাবেশ ও দিবসটিকে ঘিরে কোন সহিংস কর্মসূচি ঘটে নি। বিএনপির সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেছেন, কোনো ক্ষোভ নেই, সংলাপে আসুন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, আসুন আমরা সবাই মিলে সুষ্ঠু রাজনীতির সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত