ডেস্ক রিপোর্ট

২৫ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ০২:৫৪

বন্ধুহীন হয়ে পড়ছেন মান্না: রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা

বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলে আন্দোলনের গতি ত্বরান্বিত করা, জেনারেলদের সঙ্গে কথা বলে সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন মান্না। শেষ পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতারের খবর নিশ্চিত করেছে র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ান (র‍্যাব)। সেনা বিদ্রোহের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাও হয়েছে মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে।

থানা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে গুলশান থানার এসআই সোহেল রানা সেনা বিদ্রোহে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে মান্নার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন। মঙ্গলবার রাতে র্যা বের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান নিশ্চিত করেন যে, মান্নাকে র‍্যাব গ্রেফতার করেছে। রাতে খবর পেয়ে মান্নার স্বজনরা গুলশান থানায় যান। তবে থানার ওসির সঙ্গে দেখা করতে না পেরে ডিবি কার্যালয়ে যান তাঁরা।

এর আগে খুব ভোরে তার পরিবার থেকে মান্নাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করা হলে মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানান মান্নাকে মহানগর পুলিশের কোন শাখা থেকে গ্রেফতার করা হয়নি। তখন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার আটক নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়।

গত সোমবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বনানীর এক আত্মীয় বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে পরিবারের তরফ থেকে থানায় একটি জিডিও করা হয়। তবে ডিবি পুলিশের তরফ থেকে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে জনরোষ ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় দুটির কর্তৃপক্ষ। এক সময়ের তাঁর রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের সতীর্থরা তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করতে শুরু করেছেন। ফলে ক্রমশ বন্ধুহীন হয়ে পড়ছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। ডাকসু এবং চাকসু অনারবোর্ড থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম মুছে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ডাকসু সংগ্রহশালাতে ঢুকে বিশ থেকে ত্রিশ জন শিক্ষার্থী মান্নার বাঁধাই করা ছবি বাইরে বের করে আগুন ধরিয়ে দেন।

ঢাবিতে মান্নার সনদ নেই 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হয়ে ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। কিন্তু কোর্স শেষ না করায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন সনদ পাননি। তবে ছাত্রত্ব বাতিল, মামলা বা অন্য কোনো উপায়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা সে বিষয়টি ভেবে দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সংবাদমাধ্যকে জানান, তিনি (মান্না) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের একটি বিভাগে ভর্তি হলেও কোর্স শেষ করেননি তিনি। তাই, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে কোন সনদ দেয়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার ছাত্রত্ব বাতিল বা তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায় কিনা তাও ভেবে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র চলছে, ওই নেতার বক্তব্যের মাধ্যমে তার বহির্প্রকাশ ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মায়ের মতো। সেই মায়ের বিরুদ্ধে কোন সন্তান এরকম ষড়যন্ত্র করতে পারে তা অচিন্তনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারবে না। কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না।

সম্প্রতি, ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে একটি ফোনালাপের রেকর্ডে মান্নার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলে, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র’ ফাঁস হওয়ায় তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ মহল থেকে অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানানো হয়।

চবি উপাচার্য মান্নার বিচার চান

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ সমালোচিত মাহমুদুর রহমান মান্নার বিচার দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহমুদুর রহমান মান্নার সনদ বাতিলের ব্যাপারটি প্রশাসনিকভাবে আলোচনা করা হবে জানান। তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নামের অনারবোর্ড থেকেও মান্নার নাম মুছে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ সময় সংগ্রহশালায় থাকা মান্নার ছবিও খুলে ফেলা হয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সালে চাকসুর নির্বাচিত জিএস ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। এ সময় মান্নাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার সনদ বাতিলের দাবি জানানো হয়।

নাগরিক ঐক্যের বক্তব্য

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার মান্নার স্ত্রী মেহের নিগার বিকেলে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করেন। এরপর বিকালে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচরাপতি মোঃ আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদন করা হয়। তবে ওই রিটের নথি আদালতের কাছে না পৌঁছায় এ বিষয়ে কোন শুনানি হয়নি।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। রাষ্ট্র্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিট শুনানির বিষয়ে মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের বলেন, মান্নার সন্ধান চেয়ে তার স্ত্রী হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আওতায় একটি রিট আবেদন দায়ের করেছেন। কিন্তু আদালতে ওই রিটের নথি এসে পৌঁছেনি। যার কারণে নথি ছাড়া শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অপরাগতা প্রকাশ করা হয়। পরে এ বিষয়ে আদালত আর কোন আদেশ দেননি। 

সিপিবির বক্তব্য

সিপিবির তরফ থেকে প্রেরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রকাশিত বক্তব্য মাহমুদুর রহমানের নিজস্ব। মাহমুদুর রহমানের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে কোন কোন ব্যক্তি ও মহল সিপিবিকে জড়িয়ে অপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এর সঙ্গে সিবিবির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

নাগরিক ঐক্যের 'পাকিস্তানী ষড়যন্ত্র' ফাঁস: ডেপুটি স্পিকার

'নাগরিক ঐক্যের' নামে অপকর্ম, অরাজকতা সৃষ্টি করা এবং সরকারকে অস্থিতিশীল সরকারে পরিণত করার জন্য পাকিস্তান স্টাইলে করা ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।

মঙ্গলবার গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চত্বরে সোলার প্যানেল বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন ডেপুটি স্পিকার।

তিনি বলেন, নাগরিক ঐক্যের নামে অপকর্ম,দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা এবং এই সরকারকে অস্থিতিশীল সরকারে পরিণত করার জন্য পাকিস্তান স্টাইলে যে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তা ফাঁস হয়ে গেছে। বাংলার জনগণের সামনে মুখোস উন্মোচন হয়ে গেছে। তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জনগণ সজাগ হয়েছে। বাংলার জনগণের সামনে মুখোস উন্মোচন হয়ে গেছে। তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জনগণ সজাগ হয়েছে।'

মান্নাকে ফেরত চায় বিএনপি

এদিকে মান্নাকে অবিলম্বে ফেরত দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিনের নামে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়েছে।

আমরা কোন ষড়যন্ত্র করিনি: খোকা

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না একজন কিংবদন্তী ছাত্র নেতা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদে (ঢাকসু) তিনি একাধিকবার ছাত্র নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই কারণে তার কাছ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ভাবে আন্দোলন সফল করা যায় সেই সম্পর্কে তাত্ত্বিক আলোচনা করেছি।

তিনি আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। সেটা আমি শুনেছি। কোন কোন জায়গায় আমরা একমত হয়েছি আবার কোন কোন জায়গায় আমরা একমত হতে পারেনি। ভিন্ন মত পোষণ করেছি। তার মানে এই নয় আমরা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছি। আমরা কোন ষড়যন্ত্র করিনি। লাশের রাজনীতিও করিনি। আন্দোলন সফল করার কৌশল বের করার চেষ্টা করেছি।

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত