সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ জুলাই, ২০১৬ ০৩:২৯

গুলশান-শোলাকিয়াই শেষ নয়, আরও হামলার শঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী

গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনাই শেষ নয়, দেশে আরও জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন পরিস্থিতিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার (১৩ জুলাই) গণভবন থেকে দেশের চারটি বিভাগের ৩১টি জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর এ আশঙ্কার কথা জানান। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রথমে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৫টি এবং পরে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী।

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (জঙ্গিরা) এখানেই থেমে থাকবে না। তাদের নানা ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সহযোগী এবং যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের অর্থায়নে নানা ঘটনা ঘটতে পারে। দেখা যাবে, তারা একসঙ্গে সাত-আটটি জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ও স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তোলাই সরকারের লক্ষ্য। দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো ঠাঁই হবে না। তাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করে দেশকে প্রগতি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়া হবে।

ভিডিও কনফারেন্সের সময় দু'দফায়ই সূচনা ও সমাপনী বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় নিজ নিজ জেলা সদরে অবস্থানরত সংশ্লিষ্ট জেলার জনপ্রতিনিধি, ইমাম-পুরোহিত, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, প্রশাসনিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে মতামত ও নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন। গত মঙ্গলবার গণভবন থেকে আরও ৩২টি জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে অনুরূপ ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

বক্তব্যের শুরুতে গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এ ঘটনাগুলো বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক, নিন্দনীয়। এ ধরনের আক্রমণ জঘন্য অপরাধ। তিনি আরও বলেন, গত বছরের শুরুতে টানা তিন মাস বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সহযোগীরা যেভাবে সারাদেশে অগ্নিসংযোগ, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও জঘন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তারা কিন্তু থেমে থাকবে না। জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তারাও কাজ করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দাদের কাছে এমনও তথ্য আছে যেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে, তাদের পরিবারের সদস্যরাও থেমে নেই। তাদের অনেকে দেশ-বিদেশে থাকে, তাদের সম্পদেরও অভাব নেই। তারা যেমন অপপ্রচার চালাচ্ছে, তেমনি জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও মদদ দিচ্ছে। তাদেরও আর্থিক সহায়তা, প্ররোচনা কিংবা পরিকল্পনা রয়েছে। জনপ্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের আরও সচেতন হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানের পাশাপাশি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণকে সজাগ ও সচেতন করে, তাদের সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস মোকাবেলা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের এটিই সৌন্দর্য, সবাই যার যার ধর্ম সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পালন করে। চমৎকার সম্প্রীতির এই পরিবেশ যেন নষ্ট হতে না পারে, সে ব্যাপারেও দেশবাসীকে সহযোগিতা করতে হবে।

ইসলামকে হেয় করার কোনো কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না_ এমন কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ হবে, এ দেশে সব সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে_ এটিই আমাদের লক্ষ্য। ইসলামের নামে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে, তারা প্রকৃত ইসলামে বিশ্বাসী হতে পারে না। বিনা কারণে যারা মানুষ খুন করে মনে করছে বেহেশতে যাবে, তা কখনোই সম্ভব হবে না। কেননা, তারা কেবল একজন খুনি। তারা কখনোই বেহেশতে যাবে না, তাদের স্থান হবে দোজখে। জনগণের ঘৃণা ছাড়া তারা আর কিছুই পাবে না।

তিনি আরও বলেন, পবিত্র মদিনা শরিফে মসজিদ-এ-নববিতে বোমা হামলা করা হয়েছে। আমরা জানি না, এরা কী ধরনের মুসলমান! ইসলামের নাম করে তারা এসব করছে। এর মাধ্যমে তারা বিশ্বের কাছে ইসলামকে হেয় করছে।

বিশ্বের কাছে যখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে, দেশের অগ্রগতি হচ্ছে, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বের কাছে স্বীকৃতি পাচ্ছে_ ঠিক সে সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। গুলশানের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, হামলাকারীরা দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছে। তারা উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। কেন এমনটি ঘটছে, তা খুঁজে বের করতে হবে।

অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের ছেলেমেয়েরা কীভাবে চলে, কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করে_ সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেবেন। পারিবারিক বন্ধন জোরদার করে তাদের বেশি সময় দেবেন; তাদের মনের কথা শুনবেন। শিক্ষকদের বলব, দীর্ঘদিন কোনো শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে খোঁজখবর করবেন, নাম-ঠিকানা দেবেন। কেউ যদি ভুল পথে যায়, তাদের খুঁজে বের করে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সবাইকে বলব, সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করে সব দিকে খোঁজ নেবেন। এলাকায় নতুন কেউ এলে, কারও চলাফেরা সন্দেহজনক হলে সে কোথাও থেকে এসেছে, তা জানতে হবে। অবাঞ্ছিত কাউকে দেখলে তার পরিচয় বের করবেন।

ভুলপথ ও আত্মহননের পথ থেকে বিরত হওয়ার জন্য বিপথগামী যুবকদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আত্মহনন করা ইসলাম ধর্মেও মহাপাপ। এই আত্মহননের পথে কেন যাচ্ছে, কারা তাদের মদদ দিচ্ছে, তা খুঁজে বের করতে হবে।

এ সময় গণভবনে অন্যদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী বীরবিক্রম, আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত