সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ অক্টোবর, ২০১৬ ২০:২৯

আমার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ‘বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার’ হচ্ছে : সুরঞ্জিত

নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ ও ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ তথ্য অপপ্রচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ। বিদ্বেষমূলক বা রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যের জন্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নিবন্ধন বাতিলের বিধান রেখে সংসদে পাস হওয়া আইনের বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

নিজের অসুস্থতা বিষয়ে সাম্প্রতিক প্রচার সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত বলেন, “কয়েকদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন পত্রিকাসহ নানা জায়গায় আমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে পরিবেশিত কিছু তথ্য আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ আমার প্রতি সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন আবার কোনোটিতে বিভ্রান্তিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য আছে বলে আমার মনে হয়েছে।

“এসব জায়গায় তথ্য পরিবেশিত হয়েছে যে, আমি নাকি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী আছি। এমনকি আমার এলাকাতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে এবং আমি কবে কোন তারিখে মৃত্যুবরণ করব, তাও ঘোষণা করা হয়েছে।”

‘মায়েলোডিস প্লাস্টিক সিনড্রোমে’ ভুগছেন জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে এমজিএ হাসপাতালের চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসারত। রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ কম হওয়ায় বোন ম্যারো পরীক্ষার জন্য নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।

“চিকিৎসকরা জানিয়েছে, এটা ক্যান্সারে টার্ন নেওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আমার রোগের লক্ষণ হচ্ছে, রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের মাত্রা কমে গিয়েছে। এজন্য মাঝে মাঝে আমাকে রক্ত নিতে হয়। এটা কোনোক্রমেই লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার নয়।”

“রোগ-শোকে মানুষ এবং এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু সেটা নিয়ে কেউ বিশেষ মতলববাজি করবে সেটা কাম্য হতে পারে না,” বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে এনজিওদের কার্যপরিধি সম্পর্কে সুরঞ্জিত বলেন, “গণমাধ্যমের যে অধিকার আছে, এনজিওর সেটা নেই। ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন নাগরিকের জন্য। এনজিও এখানে অনেক ইনফিরিওয়র।”

গত ৫ অক্টোবর বিলটি পাসের পর এনজিওগুলোসহ তাদের অর্থায়নকারী বিভিন্ন দেশের অব্যাহত সমালোচনার এক পর্যায়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর ওই সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল বলেছিলেন, “আইনের অনুচ্ছেদ-১৪ সংবিধান স্বীকৃত চিন্তা, মত, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতা এবং সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।”

এর আগে গত বছর সংসদকে নিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের এক বক্তব্যে তীব্র অসন্তোষ জানানোর পর প্রক্রিয়াধীন ওই আইনে বিদ্বেষমূলক বা রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যের জন্য নিবন্ধন বাতিলের ওই ধারাটি যুক্ত করেছিল সুরঞ্জিত নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি। ওই ধারাটিসহ আইনটি (বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন বিল-২০১৬) গত ৫ অক্টোবর সংসদে পাস হয়।

নতুন আইনে বলা হয়েছে- কোনো এনজিও বা ব্যক্তি এই আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে এবং সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক বা অশালীন মন্তব্য করলে বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আইন অমান্য করলে যে কোনো সময় নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করা যাবে। এনজিওতে বিদেশি উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ছাড় নিতে হবে।

এই আইন পাস হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিরা তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়। এই আইনে সম্মতি না দিতে বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নও আইনটির বিরোধিতা করছে। তবে রাষ্ট্রপতি গত ১৩ অক্টোবর বিলটিতে স্বাক্ষর করেন।

এ প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত বলেন, “একটা সার্বভৌম সংসদকে তো কোন ফরেন বডি গালি দিতে পারে না। তাহলে সার্বভৌমত্ব থাকে না। পৃথিবীর কোথাও এটা নেই। কাজ করতে হলে এই আইনের অধীনে করতে হবে।”

গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এনজিও সাধারণ আইনের দ্বারা জন্ম নিয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যমকে সংবিধানের অধীনে একটা আইনের মাধ্যমে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ...তোমরা বলতে পার। তোমাদের মানবাধিকারের প্রটেকশন আছে। কোনো ফরেন বডির তো সেটা নেই। একজন নাগরিক মত প্রকাশ করে অনেক কথা বলবে। সেটা তার অধিকার। এনজিও আইনের অধীনে কাজ করবে।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত