সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ অক্টোবর, ২০১৬ ২০:৪৪

আশরাফ বিচলিত বা হতাশ নন : ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'জাতীয় সম্মেনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পদে আমার নাম প্রস্তাব করেছেন। এটাই এবারের সম্মেলনের বড় চমক। এটাই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ম্যাজিক পাওয়ার।'
 
দলের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ তাকে অনুপ্রাণিত করবে জানিয়ে তাকে (সৈয়দ আশরাফ) আন্তরিক ধন্যবাদও জানান ওবায়দুল কাদের।
 
ওবায়দুল কাদের সোমবার ধানমণ্ডির প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
 
তিনি আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী ঐক্যের প্রতীক। সুতরাং আওয়ামী লীগে কিছুতেই অনৈক্য ও বিভেদ প্রশ্রয় পাবে না। মতান্তর হতে পারে; কিন্তু মনান্তর হবে না।'
 
আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যন্ত সুশৃঙ্খল করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'জনগণের সঙ্গে নেতাকর্মীদের আচার-আচরণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কেননা ১০টি বড় অর্জন, দুটি খারাপ কাজেই ধূলিস্যাৎ হবে!'
 
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'আমি সর্বোচ্চ পরিশ্রমের পুরস্কার পেয়েছি। এটা আমার রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক স্বীকৃতি। আমার অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী আমাকে এই স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।
 
প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। আমি আমার সব শ্রম, ঘাম, শক্তি ও সামর্থ্য উজাড় করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মান রাখার চেষ্টা করব। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা থাকবে।'
 
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে যে ডাক দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে শক্তিশালী টিমওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি আরও বলেন, 'সংগঠনকে আরও বিস্তৃত করা হবে। তৃণমূলের সঙ্গে আরও যোগাযোগ বাড়ানো হবে।'
 
তিন এজেন্ডা সংগঠন, আচরণ ও লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে এগুতে চান বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, 'অনেক ডিম একসঙ্গে একটি ঝুড়িতে রাখলে ভাঙার আশঙ্কা থাকে। তাই বেশি এজেন্ডা নেওয়াই ভালো না!'
 
ভবিষ্যতে নেতাকর্মীদের আচার-আচরণে আরও গুণগত পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে তিনি আরও বলেন, 'আচার-আচরণে পরিবর্তন এনে জনগণের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আওয়ামী লীগ না বদলালে বাংলাদেশ বদলাবে কি করে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্রবাদকে পরাজিত ও প্রতিহত করবে আওয়ামী লীগ।'
 
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমি কখনই নিজেকে মন্ত্রী ভাবি না। আমি দেশ, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। আগে রাস্তায় যেতাম মন্ত্রী হিসেবে। আওয়ামী লীগ বড় দল। তাই ছোট খাটো অভিযোগ আসে। এখন দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় সুবিধা হলো। রাস্তায় যাব; তৃণমূলে যাব। তাদের অভিযোগ শুনব; স্পটেই সমাধান দেব। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেব।'
 
গত রোববার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। সোমবারও তাকে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়েছে।
 
সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশগ্রহণের পর ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে আসেন। তখন সেখানে লোকে-লোকারণ্য। মাত্রাতিরিক্ত ভীড়ের কারণে একপর্যায়ে আশপাশের রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকেই হাজার হাজার তৃণমূল নেতাকর্মী তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন।
 
সংবাদ সম্মেলনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে সর্বস্তরের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সংবাদ সম্মেলনে নবনির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমানসহ বিদায়ী কমিটির কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নেতারা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
 
সম্মেলন সফল হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্মেলন ঘিরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে এতো উৎসাহ দেখা যায়নি, যা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হয়েছিল। এতো সাজসজ্জা ও উৎসবমুখর পরিবেশও আগে কখনও দেখা যায়নি! সম্মেলন ঘিরে রাজধানী অভূতপূর্ব আলোকসজ্জায় সেজেছিল। অতীতে কখনও এতো বিদেশি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি কোনো রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে আসেনি। শৃঙ্খলার দৃশ্যপট ছিল দেখার মতো। লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে স্বর্তঃস্ফূর্ত এই সম্মেলনের কোথাও কোনো টু শব্দও হয়নি। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সুশৃঙ্খল হতে শুরু করেছে।
 
সম্মেলনের কোনো বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ছাড়া কোনো নেতার ছবি থাকেনি। সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো নেতার পক্ষে শ্লোগান ও ব্যানার দেখা যায়নি। নেতাকর্মীদের আচরণকে আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়েছে। জনগণের কাছে সরকার আরও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। এসব কিছু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের দৃশ্যপট। আওয়ামী লীগ গুণগত পরিবর্তনের দিকেই এগুচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা আলোর ইশারা।'
 
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে অভিহিত করেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, 'তিনি কোনো অঞ্চলের নন। তিনি সারাদেশের নেতা। তার কাছে আঞ্চলিকতা কখনই প্রাধান্য পায়নি। আগামীতেও পাবে না। তার কাছে আঞ্চলিকতা চলবে না। কেননা সম-আচরণ না করলে তার ওপর প্রধানমন্ত্রীর আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।'
 
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু সেই সমালোচনা ইতিবাচক হিসেবে নেওয়া হয়েছে। আসলে সমালোচনাই নেতাদের শুদ্ধ করে।'
 
বিএনপির অভিনন্দন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "অভিনন্দন দেওয়াটা রাজনৈতিক শিষ্টাচার। আওয়ামী লীগও অভিনন্দনের জবাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি সম্মেলনে এলে এই শুভেচ্ছা মনে-প্রাণে জানানো যেত। অভিনন্দনটাও পূর্ণতা পেত। বিএনপি কথা দিয়েও সম্মেলনে আসেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যা বলে, অন্তরেও তা বিশ্বাস করে। বিএনপি যদি সম্মেলনে আসত, তাহলে 'ডাল মে কুচ কালা হ্যায়' বলত না।"
 
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'গত নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার খেসারত দিচ্ছে বিএনপি। আবারও ভুল করলে তারা ভুলের চোরাবালিতেই আটকে থাকবে।'
 
তিনি আরও বলেন, 'বিএনপির মতো জাম্বু কমিটি হয়নি আওয়ামী লীগের।' তিনি আজকালের মধ্যে দলের সম্পাদকমণ্ডলী ও আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে জানিয়েছেন।
 
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিচলিত নন। আমি তার মধ্যে হতাশার কোনো ছবি দেখিনি। মন্ত্রিসভা বৈঠকে তাকে আগের যেকোনো বৈঠকের চাইতে প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। এটাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সৌন্দর্য।'

আপনার মন্তব্য

আলোচিত