নিউজ ডেস্ক

১৬ এপ্রিল, ২০১৫ ০৩:৫৮

সিটি নির্বাচনে প্রচারণায় ভিন্নমাত্রা: খালেদার বিপক্ষে মাঠে নামছেন জয়!

ঢাকা ও চট্টগ্রাম তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থিদের পক্ষে বেগম খালেদা জিয়া প্রচারণায় নামবেন এমন আভাসের প্রেক্ষিতে নড়চড়ে বসেছে আওয়ামিলীগ।

আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় দলীয় সভানেত্রি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না, এমনকি অংশ নিতে পারবেন না মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সমপদমর্যাদার ব্যক্তিরাও।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনি আরচণবিধিতে উল্লেখিত কোন ব্যক্তি নন বিধায় তাঁর প্রচারণায় অংশ নিতে বাঁধা নাই। ফলে মুক্ত-স্বাধীনভাবে প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে পহেলা বৈশাখের দিন একদফা প্রচারণাও চালিয়েছেন। আর এতে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামিলীগ নেতাদের ধারণা, বিধিমালার সুবাদে খালেদা জিয়ার পাওয়া এই সুযোগ অনেকটাই শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের।

তারা মনে করছেন, দেশের ভোটাররা দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপর ভাগের নেতৃত্বে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দুই নেতারই জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাদের কথায় ভোটাররাও প্রভাবিত হয়ে থাকেন।

খালেদা জিয়ার প্রচারণাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার কৌশলও খুঁজছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দলটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সর্বশেষ সভায় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনেন উপদেষ্টারা। এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বিস্তর এবং শেষাবধি ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে এমন নেতাও পেয়েছেন তারা।

সজীব ওয়াজেদ হচ্ছেন সে ব্যক্তি যিনি নির্বাচনি আচরণবিধিমালার নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা আওয়ামিলীগের উচ্চ পর্যায়ের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে থাকতে পারেন শেখ রেহানার পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।

আওয়ামিলীগের নির্বাচনি প্রচারণার কৌশলের অংশ হিসেবে খালেদা জিয়া যেসব এলাকায় গণসংযোগ করবেন তার পরের দিন সে সব এলাকায় আওয়ামিলীগও গণসংযোগ করবে এবং এতে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন সজীব ওয়াজেদ জয় ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।

বুধবার (এপ্রিল ১৫) রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামিলীগের সভানেত্রি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সজীব ওয়াজেদ জয় নির্বাচনী প্রচারণায় নামলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার সমর্থক প্রার্থীদের পক্ষে জনমত বৃদ্ধি পাবে বলে তাদের ধারণা।

সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক উপদেষ্টা। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হওয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে কোনো আইনি বাধা রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার পরই মূলত নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন তিনি। নির্বাচনী আইনে বাধা থাকলে আইন মেনে কাজ করা হবে বলেও সূত্র জানায়।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১৪ (ক) ধারায় 'সরকারি সুবিধাভোগী কতিপয় ব্যক্তির নির্বাচনি প্রচারণা এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত বাধা নিষেধ'-এ বলা হয়েছে: 'জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ এবং সরকারের কোনও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদাসম্পন্ন সরকারি সুবিধাভোগী কোনও ব্যক্তি, নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনি প্রচারণায় বা নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না'।

সজীব ওয়াজেদ জয় যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতনিক উপদেষ্টা এবং সরকারের কাছ থেকে তিনি কোন ধরণের আর্থিক সুবিধা নেন না সুতরাং তাঁর নির্বাচনি কাজে অংশ নেওয়ার কোন বাঁধা নাই বলে উপস্থিত অনেকেই উল্লেখ করছেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, সহিংসতার কথা তুলে ধরতে নির্দেশনা দেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে ও জনগণ এ নির্বাচনে সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে ভোট দিবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে দলের নেতকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি ঢাকার ভোটারদের সরকারের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদস্বরূপ বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানান।

সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় বেগম খালেদা জিয়ার বিপরিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রচারণা ঢাকা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনি প্রচারণায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে বলে অনেকেই মনে করছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত