দেশে চাল নিয়ে চালবাজির সঙ্গে সরকারদলীয় লোকেরাই জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলর ইসলাম আলমগীর। সরকারের গাফিলতিতেই 'চালের সঙ্কট' সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির পৌর কমিউনিটি সেন্টারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঢেউটিন বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠানে জেলার বন্যাদুর্গত ও ক্ষতিগ্রস্ত ২০০ পরিবারের মাঝে এক বান্ডিল করে টিন বিতরণ করা হয়।

এ অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকার মানুষের মৌলিক সমস্যা সমাধান করতে পারেনি। চালের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। মানুষ হাহাকার করছে। সাধারণ মানুষ চাল কিনতে পারছে না। অথচ সরকারের মন্ত্রীরা জোর গলায় বলছেন, চালের কোনো সংকট নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকারের গাফিলতির কারণেই দেশে চালের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে চালের সংকট আওয়ামী লীগ সরকার তৈরি করেছে বলেই তা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'দুই দফা বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি চালের মজুদ তলানিতে নেমে আসায় সরকার তিন মাস আগে আমদানির উদ্যোগ নেয়। সরকারি-বেসরকারি পর্যায় মিলিয়ে গত আড়াই মাসে রেকর্ড পরিমাণ চাল আমদানি হলেও বাজারে চালের দাম বাড়ছে। যার পেছনে মিল মালিকদের কারসাজিকে দায়ী করে আসছে সরকার। সরকারি হিসাবেই মোটা চালের দাম গত এক মাসে ১৮ শতাংশ ও এক বছরে বেড়েছে ৫০ শতাংশ।'

এখন বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল নেই জানিয়ে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'শুধু চালের দাম নয়, প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে এখন জীবনযাপন করা খুব কষ্টকর হয়ে গেছে।'

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকারের প্ররোচনায় লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে নির্যাতন-নিপীড়ন ও হত্যা করে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে।'

বিএনপি প্রথম থেকেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রতিবাদ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, 'আমরা বলেছি রোহিঙ্গা যারা আসছে তাদের আশ্রয় দিতে হবে। আশ্রয় দিয়ে তাদেরকে আবার দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।'

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'সমগ্র বিশ্ব যখন রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলছে এবং মিয়ানমার সরকারকে তথা সু চি'কে ধিক্কার দিচ্ছে, সে সময় আওয়ামী লীগের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। কিন্তু কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি সরকার। এতে সরকারের বৈদেশিক পলিসির যে বড় দুর্বলতা তার চিত্র চরমভাবে ফুটে উঠেছে। এখন আওয়ামী লীগ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে, কথা বলছে। কিন্তু তারা এ সমস্যা সমাধানের কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি।'

'অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেই সাথে সমগ্র বিশ্বে চাপ সৃষ্টি করতে হবে যেন মিয়ানমার সরকার বাধ্য হয়ে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়', যোগ করেন ফখরুল।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল বাসিত আঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, এজিএম সামসুল ইসলাম, মির্জা ফয়সল আমীন প্রমুখ।