সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ নভেম্বর, ২০২০ ১৯:৫১

নাসিরনগরে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত তননের বাড়ি ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বাপা

বি- বাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় সরকারি খালে বাঁধ দেয়ার প্রতিবাদ করায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত কবি ও সাহিত্য সংস্কৃতিকর্মী সৈয়দ মুনাব্বির আহমেদ তননের (২৫) বসতবাড়ি ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর একটি প্রতিনিধিদল। ওই সময় তারা এলাকাবাসী, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের একাংশ সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন।

রোববার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী বাপার এ প্রতিনিধিদল বি-বাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের আলিয়ারা গ্রামে পৌঁছান। এ সময় তারা বিরোধপূর্ণ খালের বাঁধটি পরিদর্শন করেন ও নিহত তননের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারবর্গের সাথে কথা বলেন। এসময় বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবী জানানো হয়।

প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে নিহত তননের মা সৈয়দা হেলেনা আক্তারের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরিবারবর্গ ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তনন নাসিরনগর উপজেলা ও বি- বাড়িয়া জেলার একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ কবি, সাংস্কৃতিক সংগঠক এবং সমাজ সচেতন কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সৃজন সাহিত্য সংগঠনের সভাপতি। এছাড়াও দুটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করতেন।

আলিয়ার পুর গ্রামের মরহুম সৈয়দ শিব্বীর আহমেদ বাবুল ও সৈয়দা হেলেন আক্তারের সন্তান তনন। ৩ ভাই ১ বোন এর মধ্যে তনন সবার বড় ছিলেন। বি বাড়িয়া সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তনন একটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও শিক্ষক ছিলেন।

গত ৮ নভেম্বর তার বাড়ির পাশের সরকারি পানি নিষ্কাশন খালে কিছুসংখ্যক দখলদার ব্যক্তি বাধ দিলে তিনি এর প্রতিবাদ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ওই দুর্বৃত্তদের দ্বারা হামলার শিকার হন। এরপর দিন ৯ নভেম্বর দুপুর ২ টা র দিকে তনন তার এক আত্মীয়কে বিদায় দিয়ে ফেরার পথে বাড়ির কাছে আসা মাত্র দখলবাজ চক্রের আনুমানিক ১২/ ১৫ জন ব্যক্তির দ্বারা পরিকল্পিত হামলার শিকার হন। হামলাকারীরা রড, লোহার পাইপ, দাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তনন এর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তনন এর চিৎকারে তার ছোটভাই, চাচাতো ভাই ও মামাসহ কয়েকজন এগিয়ে গেলে তারাও মারাত্মকভাবে জখম হন। এর পরপরই গুরুতর আহত অবস্থায় তননকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে বি-বাড়িয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বি বাড়িয়া সদর হাসপাতাল থেকে দ্রুত তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলা হয়। ঢাকায় যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের রাস্তায় তনন মারা যান।

পরদিন ১০ নভেম্বর নিহত তননের ছোট ভাই সৈয়দ তাকভির আহমেদ তামিম বাদী হয়ে নাসিরনগর থানায় ১৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং একজন আসামিকে আটক করেন।

পত্রিকান্তরে এই ঘটনার খবর প্রকাশিত হলে বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনাক্রমে প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নিহত তনন এর বাড়ি থেকে ফিরে নাসিরনগর সদরে পৌঁছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা আশরাফী বলেন, আমি ঘটনা শুনেছি। সরকারি খাল বাঁধ দেওয়ার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জেনেছি। ইতিমধ্যেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। সরকারি খালের উপর বাঁধ অপসারণ এর ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিনা আক্তারকে বলেছি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলব।

এরপর বাপা’র সেই প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে সেল ফোনে কথা হয়। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আশাকরি আসামিরা দ্রুতই ধরা পড়বে।

প্রতিনিধিদল নাসিরনগরের স্থানীয় সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও রাজনৈতিক কর্মীর সঙ্গে তনন হত্যার বিষয়ে কথা বলেন।

উক্ত প্রতিনিধিদলে দলে ছিলেন বাপা জাতীয় পরিষদ সদস্য হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক জনপ্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী মুমিন, নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক পীযূষ চক্রবর্তী, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন, বাপা হবিগঞ্জের যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকী হারুন, নির্বাহী সদস্য আসমা খানম হ্যাপি ও সদস্য অ্যাডভোকেট সায়লা খান প্রমুখ।

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত