স্পোর্টস ডেস্ক

২৫ নভেম্বর, ২০২০ ২৩:৩৬

৮ বছরের ম্যারাডোনাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন কোচ

ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা। একনামেই যাকে চেনে ফুটবলবিশ্ব। তাকে চেনাতে অভিধার প্রয়োজন পড়ে না, স্বনামে মূর্ত এক ফুটবল যাদুকর। আর্জেন্টিনার সর্বশেষ বিশ্বকাপ জেতানো ফুটবলার। যার ফুটবল দেখে আর্জেন্টিনার ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছুঁয়েছে আকাশে; দেশে-দেশে।

আর্জেন্টাইন এই ‘ফুটবল ঈশ্বর’ আর নেই। ৬০ বছর বয়সে পাড়ি দিয়েছেন অনন্তলোকে। বুধবার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন এই কিংবদন্তি ফুটবলার। আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে খবরটি নিশ্চিত করেছে।

জন্ম ৩০ অক্টোবর ১৯৬০। ম্যারাডোনা যখন একক নৈপুণ্যে তার দেশকে বিশ্বকাপ জেতান দ্বিতীয়বারের মত তখন তার বয়স ছিল ২৬।

বুয়েন্স আয়ার্সের দরিদ্র এক অঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসা তার। এরপর বা-পায়ের জাদুতে মাত করেছেন বিশ্বকে। তাই ফুটবলের রাজা ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের সঙ্গে তুলনীয় হয়েছেন তিনি। এমনই এক উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে গেছেন তিনি যেখান থেকে তাকে ছোয়ার মত সাধ্য আর কোন আর্জেন্টাইনের হয়নি, হবেও কি-না সেও বিতর্ক আর সন্দেহের।

মাত্র ৮ বছর বয়সে তাকে আবিষ্কার করেন ফ্রান্সিসকো কর্নেজো। জুনিয়র দলের কোচ হিসেবে তিনি তখন সারা দেশ ঘুরে প্রতিভা খুঁজছেন। খুদে ম্যারাডোনাকে প্রথম দেখার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ফ্রান্সিসকো কর্নেজো বলেছিলেন, ‘আর্জেন্টিনা জুনিয়র দলের জন্য ট্রায়াল দিতে এসেছিল ম্যারাডোনা। তার ফুটবল দক্ষতা দেখে মনে হয়নি এ ছেলের বয়স মাত্র ৮। আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিচয়পত্র দেখতে চাইলাম। সে দেখাতে পারেনি কিছু। তার ছোট্ট গড়ন দেখে অবশ্য মনে হয়েছিল মিথ্যা বলছে না। যদিও সে খেলছিল প্রাপ্তবয়স্কদের মতো। যা দেখে আমরা ওর ভক্ত হয়ে গেলাম।’

১৯৬৮ সাল। ৮ বছর পর আর্জেন্টিনা জুনিয়র দলে অভিষেক হয় ম্যারাডোনার। ১৯৭৭-এ জাতীয় দলে পা রাখেন। নিজেদের দেশে ১৯৭৮-র বিশ্বকাপ দলে তাকে নেওয়া নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ড্যানিয়েলে প্যাসারেলা ও কোচ সেজার মেনোত্তি বয়স কম বলে ম্যারাডোনাকে দলে নেননি।

১৯৮২ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার অভিষেক হয়েছিল। ইতালি ও ব্রাজিলের কাছে হেরে বাদ পড়ে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই। ম্যারাডোনা কিছু করতে পারেননি। সব জমিয়ে রেখেছিলেন মেক্সিকোর জন্য। ছিয়াশির বিশ্বকাপেই তিনি ম্যারাডোনা হয়ে ওঠেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোল দিয়ে। এরপর করেন শতাব্দী সেরা গোল। ইংল্যান্ড ছিটকে গিয়েছিল। তার আগে ম্যারাডোনার পায়ের জাদুতে সর্বনাশ হয়েছিল বেলজিয়ামের। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির সর্বনাশের মূলেও ছিল তার দুটি পা।

আত্মজীবনীতে ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ জয়ের বর্ণনায় লিখেছিলেন, ‘অতিরিক্ত সময়ে জার্মানির অবসন্ন পাগুলো দেখে ভরসা পেয়ে সেন্টার স্পটে বল বসিয়ে সবাইকে চিৎকার করে বলেছিলাম, জিতব আমরাই। জিততেই হবে, ওরা আর পারছে না, শেষ চেষ্টা আর একবার, অতিরিক্ত সময়ের আগেই শেষ করব। নিজেদের অর্ধেই ছিলাম। মাথা তুলে দেখতে পাই বুরুচাগার সামনে সেই রাস্তা যেখান দিয়ে চলতে চলতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হব। নিরাশ করেনি বুরু। ৬ মিনিট বাকি তখনো। বিলার্দো চেঁচাচ্ছে, ডিয়েগো, ভালদানো, নেমে এসো, মার্ক করো। কোথায় কী। নামছিলাম ঠিকই, কিন্তু জানতাম, আর হবে না। রোমুয়ালদো আরপি ফিলোর বাঁশি, আর্জেন্টিনীয়দের উল্লাস আর আমার কেঁদে ফেলা- সব একসঙ্গে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত