সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ নভেম্বর, ২০২১ ১৭:২৭

ম্যারাডোনার চলে যাওয়ার এক বছর

ঠিক এক বছর হলো তিনি নেই। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় ডিয়েগো ম্যারাডোনার। গত এক বছরে বদলেছে অনেক কিছুই। ফুটবল বিশ্ব এগিয়েছে তার নিজের গতিতে। শুধু বদলায়নি জীবিত কালের মতো মৃত্যু পরবর্তী সময়েও ম্যারাডোনাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও মাতামাতি।

ম্যারাডোনার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো ক্রীড়া বিশ্বে। ফুটবল শুধু নয়- টেনিস, ক্রিকেট, ফরমুল ওয়ান, বাস্কেটবল থেকে শুরু করে রাগবি বিশ্বও শ্রদ্ধা জানিয়েছে ১০ নম্বর জার্সির মহানায়ককে।

ফুটবলের সেরা মেসি-রোনালদো থেকে শুরু করে শচীন টেন্ডুলকার, সাকিব আল হাসান, লেব্রন জেমস ও লুইস হ্যামিল্টনদের মতো অন্য ক্রীড়ার গ্রেটরাও সম্মান জানিয়েছেন ম্যারাডোনাকে। জানিয়েছেন ম্যারাডোনা তাদের কতটা প্রিয় ছিলেন।

ম্যারাডোনা সবার কাছেই যেন গুরু। চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়নস। সব ক্রীড়াবিদের অনুপ্রেরণা তিনি।

সেটা হওয়াটাই হয়তো স্বাভাবিক। ১৯৬০ সালের ৩১ অক্টোবর বুয়েনোস আইরেসের সুবিধাবঞ্চিত ভিয়া ফিয়োরিতায় জন্ম হওয়া ম্যারাডোনার বিশ্বজয়ের গল্পটা রূপকথার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

১৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে ডাক পান। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে হন উপেক্ষিত আর '৮২-এর বিশ্বকাপে পান লাল কার্ড। ১৯৮৬ সালে দেখান নিজের অলৌকিক ফুটবল।

পরে চার বছর ইতালির নাপোলিকে তলানি থেকে টেনে বানিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। বনে গেছেন ফুটবল ঈশ্বর।

নব্বইয়ের দশকটা তার ধ্বংসের গল্প। '৯১-এ মাদকসহ ধরা পড়ে ইতালি ছাড়েন। '৯৪ বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ স্টেরয়েড গ্রহণের দায়ে বহিষ্কৃত হন।

আর ২০০১ সালে অতিরিক্ত মাদকসেবনে চলে যান মৃত্যুর দুয়ারে। এত কিছুরই পরও ফুরায়নি ম্যারাডোনা ম্যাজিক।

তার অবসরের দশক পরও রোনালদিনিয়ো, বাজ্জো, জোলারা এক বাক্যে ম্যারাডোনাকেই আদর্শ মেনে নেন।

অনেকের চোখে প্রতিভায় ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে যাওয়া লিওনেল মেসি তাকে মেনে নিয়েছেন সেরা হিসেবে। গ্যারি লিনেকার, জোসে মরিনিয়োসহ একের পর এক ফুটবল পণ্ডিতের কাছে ম্যারাডোনাই হয়ে ওঠেন ফুটবলের শেষ কথা।

মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে জেতা ম্যারাডোনা কামব্যাক করেন রাজার মতোই। হেড কোচ হিসেবে দলকে নিয়ে যান ২০১০ বিশ্বকাপে। শুরু করেন পুরোদস্তুর কোচিং ক্যারিয়ার। নাইট অফ দ্য টেন নামে জনপ্রিয় এক টকশোর সঞ্চালক হিসেবে জিতে নেন সবার মন।

সবকিছু ঠিকঠাকই যাচ্ছিল। শুধু ঠিক ছিল না তার স্বাস্থ্য। বছরের পর বছর মাদক ও ফুটবলের ধকল সইতে পারছিল না তার দেহ।

অবশেষে সবার আশঙ্কাকে সত্যি করে গত বছর পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে। মৃত্যুর পরও তাকে নিয়ে থামেনি ভক্তদের উন্মাদনা।

তার সমাধি পুলিশি পাহারায় রাখতে হয়েছে, যেন কেউ খুঁড়ে না ফেলে। নাপোলি তাদের স্টেডিয়ামের নাম পাল্টে দিয়েছে ম্যারাডোনার নামে।

সাবেক স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে চলছে সম্পত্তি নিয়ে কাড়াকাড়ি। আর্জেন্টিনা জাতীয় দল কোপা আমেরিকা জিতে তার নামেই উৎসর্গ করেছে।

সব মিলিয়ে নিজের যাপিত জীবনের মতো মৃত্যুর পরও বর্ণময় হয়ে আছেন ম্যারাডোনা ও ভক্তদের আশা চিরকাল তেমনটাই থাকবেন।

শেষ করা যেতে পারে বুয়েনোস আইরেসের একটি দেয়াল লিখনের কথা দিয়ে। ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর এক ভক্ত তার স্মৃতিতে লেখেন, ‘ম্যারাডোনা আপনি আপনার জীবন নিয়ে কী করেছেন সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমার জীবন কীভাবে আপনি পাল্টে দিয়েছেন, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত