স্পোর্টস ডেস্ক

১৩ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:০৯

আইসিসি ট্রফি জয়ের ২৫ বছর

একটি জয় বদলে দিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটকে, পাল্টে দিয়েছিল সংগীতের সুর। বিবর্ণ ক্যানভাসে শুরু হয়েছিল রংধনুর আঁকিবুকি। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ জেতে আইসিসি ট্রফি। আকরাম, পাইলট, শান্ত, বুলবুলরা কেনিয়াকে হারিয়ে মালয়েশিয়ার কিলাট কেলাব ক্লাব মাঠে উড়ায় লাল-সবুজের পতাকা। সেই ট্রফি জয় দিয়ে শুরু, এরপর বাংলাদেশ বিশ্বকাপে নাম লেখায়, অর্জন করে টেস্ট মর্যাদাসহ কত কিছু। রূপকথার সেই অর্জনের আজ পূর্ণ হলো ২৫ বছর।

১৯৭৯ থেকে ১৯৯৪- টানা পাঁচ বার ওই আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ অংশ নিয়েছে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু প্রতিবার ফিরে এসেছে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়ে। অবশেষে ১৯৯৭ সালে দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন হয় পূরণ। ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল কেনিয়া। আগের আসরে এই কেনিয়ার কাছে হেরেই জলাঞ্জলি দিতে হয়েছিল বিশ্বকাপ স্বপ্ন। ফাইনালের আগে দুদলই অপরাজিত। ম্যাচটি শিরোপার লড়াইয়ের সঙ্গে হয়ে উঠল একটা মনস্তাত্বিক লড়াইও। কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ১২ এপ্রিল হলেও বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ ব্যাটিং করে রিজার্ভ ডে, ১৩ এপ্রিল। আগে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান সংগ্রহ করে কেনিয়া। বৃষ্টিতে বাংলাদেশের সামনে পরিবর্তিত টার্গেট ২৫ ওভারে ১৬৬ রান। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ২ উইকেটে  জিতে বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

বাংলাদেশের জয়ের জন্য শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১ রান। সুজির প্রথম বলটা ছিল লো-ফুল টস। টেনে ছয় মেরেছিলেন পাইলট… কিন্তু পরের দুইটি বল ডট। বাংলাদেশ দলের সামনে আবার কঠিন সমীকরণ। কিন্তু পাইলট ও হাসিবুল হোসেন শান্ত সেই হিসাবও মিলিয়ে দেন। শেষ বলে দরকার ১ রান। সুজির করা বলটি শান্তর প্যাডে লেগে বল চলে যায় শর্ট ফাইন লেগে। কিপার কেনেডি ওটিয়ানোর হাতে যাওয়ার আগেই দুই ব্যাটসম্যান প্রান্ত বদল করেন, সিঙ্গেল পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দে আত্মহারা।

সেদিন ক্রিকেটাররা যেমন শিরোপা জিততে মরিয়া হয়ে ছিল, সমর্থকরা বাংলাদেশকে জেতাতে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল। বৃষ্টির বাগড়ায় পুরো মাঠ তখন ভিজে একাকার। দেশের ক্রিকেটের সোনালি অধ্যায় রচনায় তাই মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েন খেলোয়াড়, সাংবাদিক, টিম ম্যানেজমেন্ট, প্রবাসী ও দেশ থেকে খেলা দেখতে যাওয়া দর্শকরা। ক্রিকেটারদের তোয়ালে, ঝাড়ু, বালতি, বেলচা যার সামনে যা ছিল তা দিয়েই মাঠের ভেতরের পানি সরিয়েছেন। তৎকালীন বোর্ড সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীও বনে যান গ্রাউন্ডসম্যান। মুক্তিযোদ্ধা ও প্রয়াত দেশবরেণ্য অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন। তিনিও মাঠের পানি সরানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

শিরোপা জয়ের একদিন পরই দেশ থেকে বিমান পাঠানো হয় ক্রিকেটারদের নিয়ে আসতে। চার্টার্ড ফ্লাইটে ক্রিকেটাররা মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় আসেন। ট্রফি জেতায় প্রধানমন্ত্রীয় শেখ হাসিনা পুরো দলকে সংবর্ধনা দেন সংসদ ভবনের খোলা জায়গায়। প্রত্যেক ক্রিকেটারকে দেওয়া হয় ১ লাখ টাকা করে। সেই সময়ে বাংলাদেশের কোচ ছিলেন গর্ডন গ্রিনিজ। প্রাক্তন ক্যারিবিয়ান এ ক্রিকেটারের হাত ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দাপটের সঙ্গে পথ চলা শুরু করে।

৯৭-এর ওই ট্রফি জয়ের পাঁচ মাস আগে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেন গ্রিনিজ। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফির ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে প্রথমবার যোগ্যতা অর্জন করে বিশ্বকাপে খেলার। গ্রিনিজকে দেওয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। ওই জয় বদলে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটকে, স্বপ্ন দেখিয়েছিল সামনে এগিয়ে যাওয়ার। সেই জয়ের রূপকার ছিলেন গ্রিনিজ। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে তার শিষ্যরাই পাকিস্তানকে বিশ্বকাপে হারিয়েছিল।

বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বছরখানেক পর আইসিসি একটি ‘রেপ্লিকা’ ট্রফি দিয়েছিল বিসিবিকে। সেই ট্রফি প্রথমে রাখা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিসিবির অফিসে। সেখান থেকে বিসিবি অফিস গুলশানে আসার পরও সেখানে ছিল ট্রফি। গুলশানে তখনকার বোর্ড সভাপতির রুমেই ছিল সেই ট্রফি। কিন্তু ২০০৭ সালে গুলশান থেকে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বিসিবির কার্যালয় স্থানান্তরের পর কেউ দেখেনি আর সেই ট্রফি।

তবে বর্তমান বোর্ড কোনো কিছু কমতি রাখে না! কমতি রাখেনি এখানেও। রূপকথার সেই ট্রফির একটি রেপ্লিকা নিজেদের খরচে বানিয়েছে বোর্ড। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইসিসির প্রধান কার্যালয়ে আছে বাংলাদেশের জেতা মূল ট্রফিটি। ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড রিচার্ডসন বিসিবির প্রধান নির্বাহীর কাছে রেপ্লিকাটি হস্তান্তর করেন।

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকলে দেখা যায় (ড্রেসিং রুমের দুই পাশে) বাংলাদেশের জেতা ট্রফিগুলো সাজানো-গোছানো আছে। আকরামদের জেতা ট্রফির রেপ্লিকা সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে সেখানেই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত