নিউজ ডেস্ক

৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১৮:৩০

মিডিয়ার সেরা হট কেকঃ রুবেল-হ্যাপির প্রেম!

বছরের একেবারে শেষ অংশে এসে সবার দৃষ্টি কেড়ে নিলেন পেসার রুবেল হোসেন। উঠতি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নাজনিন আক্তার হ্যাপির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে যখন বিষয়টি থানা-পুলিশ এবং আদালত পর্যন্ত গড়ালো


টাইগারদের ব্যর্থতার সঙ্গে সাকিবের নানা বিতর্ক নিয়েই পত্র-পত্রিকায় বারবার শিরোনাম হয়েছে বছরজুড়ে। তবে বছরের শেষ অংশে এসে জিম্বাবুয়ে সিরিজেই দলের সঙ্গে সাকিবের পারফরম্যান্স দেশের ক্রিকেট প্রেমিদের সকল যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলংকা সিরিজি, এশিয়া কাপ, টি২০ বিশ্বকাপে মুশফিকদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার চেয়েও বেশি আলোচিত ইস্যু ছিলো সাকিবের অশোভন আচরণ, জরিমানা ও তাকে নিষিদ্ধের ঘটনা।

কিন্তু বছরের একেবারে শেষ অংশে এসে সবার দৃষ্টি কেড়ে নিলেন পেসার রুবেল হোসেন।  উঠতি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নাজনিন আক্তার হ্যাপির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে যখন বিষয়টি থানা-পুলিশ এবং আদালত পর্যন্ত গড়ালো, তখনই টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয় হ্যাপির সঙ্গে রুবেলের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি। মিডিয়া থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক, সবার কাছেই হট কেক ছিলো জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের প্রেমের ইনিংস।


জিম্বাবুয়ে সিরিজের পরই ফাঁস হয় জাতীয় দলের পেসার রুবেল হোসেন ও চিত্রনায়িকা নাজনিন আক্তর হ্যাপীর প্রায় এক বছরের প্রেমের ইনিংস। দু-জনের এই বিশেষ ইনিংসটি এখন আদালতে বিচারাধীন। এসব নিয়েই বাংলামেইলের পাঠকদের জন্য বছরের আলোচিত ঘটনা হিসেবে সলতামামিতে রুবেল-হ্যাপির রসময় ইনিংসটির কিছু কথা তুলে ধরা হলো।


জাতীয় দলের পেসার রুবেল হোসেন ও চিত্রনায়কা নাজনিন আক্তার হ্যাপীর প্রেমকাহিনী নয় মাসের। রুবেল হ্যাপীর প্রেমের সম্পর্ক কেন এতো আলোচিত! কি কারণেই বা তাদের প্রেমের সম্পর্কে ফাটল ধরলো? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও পরিস্কার হয়নি। যেহেতু তাদের সম্পর্কের বিষয়টা এখন আদালতে গড়িয়েছে, তাই খুব সহজেই এ বিষয়ের সুরাহা হবে না, এটাও নিশ্চিত।

যেভাবে প্রকাশ হয় রুবেল হ্যাপির প্রেমের সম্পর্ক
১৩ ডিসেম্বর মিরপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন ৯/১ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন হ্যাপী। আইসিসি বিশ্বকাপের ঠিক পূর্বমুহুর্তে জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা! রীতিমত অবাক করা বিষয়। অভিনেত্রী হ্যাপি অভিযোগ করেন, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রুবেল তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।’

মামলার পরেই রুবেলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টাও চালায় মিরপুর থানার পুলিশ। ওইদিন রাতেই নায়িকা হ্যাপীকে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যাওয়া, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে তার পরীক্ষা- সত্যি বলতে মুহুর্তের মধ্যেই পুরো ক্রিকেট দুনিয়াতে তোলপাড় সৃষ্টি হয় রুবেল হ্যাপীর প্রেম-কাহিনী নিয়ে। রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা করে নায়িকা হ্যাপী নিজেই জানিয়েছিলেন, তার সঙ্গে গত আট-নয় মাস ধরে রুবেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময় হ্যাপিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে রুবেল।


নায়িকা হ্যাপীর পরিচয়

নাজনীন আক্তার হ্যাপী ‘কিছু আশা কিছু ভালবাসা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম সবার নজরে আসেন। এ ছাড়া তার আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী।

মন্তব্য নেই বিসিবির
নবাগত অভিনেত্রী নাজনিন আক্তার হ্যাপী ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর। একদিকে রুবেল দলের নিয়মিত ক্রিকেটার, অন্যদিকে মামলাটি এক ধরনের নারী নির্যাতনমূলক। সুতরাং, এ বিষয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য করেনি বিসিবি।

আদালতে রুবেল
হ্যাপীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় দু’দিন পরই আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে যান রুবেল। ক্যারিয়ারের প্রথমবার তিনি আদালত পাড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পুরো দিন আদালত পাড়ায় আইনজীবীদের সঙ্গেই থাকতে হয় তাকে। বিকেলে শুনানী শেষে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে রুবেলকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। আদালতে তার পাঁচজন বন্ধু ছাড়া পরিবার, বিসিবি ও ক্রিকেট সতীর্থদের কেউ ছিলেন না।

জামিন পেয়ে আইনজীবীদের চেম্বারে সেদিন বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন রুবেল। চা-বিস্কুট খেয়ে ভক্তদেরকে অটোগ্রাফও দেন তিনি। এরপর থেকেই রুবেল ছিলেন ঘটনার আড়ালে। প্রায় এক সপ্তাহ তার সঙ্গে দেখা করতে পারেনি কেউ। এমনকি বিসিবির সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল না। হঠাৎ করেই ২১ ডিসেম্বর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তার দল রুপগঞ্জের হয়ে অনুশীলন করতে মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে উপস্থিত হন রুবেল।

ফোনালাপ
ঘটনার শুরু থেকেই রুবেল নিজেকে আড়াল করে রাখলেও হ্যাপি ছিলেন মিডিয়ার আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু। মামলা করার তিনদিন পরই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় দু’জনের ফোনালাপ (অডিও)। রুবেল-হ্যাপির ফোনালাপ প্রচার করেছে ৭১ টিভি। হ্যাপি নিজেই ৭১ টিভিকে সেই ফোনালাপের অডিও সরবরাহ করেছে বলে স্বীকার করেন। এই অডিওতেই রয়েছে রুবেল-হ্যাপির ঘনিষ্ঠতার নানা তথ্য।

হ্যাপির শর্ত
রুবেল তাকে বিয়ে করলে মামলা তুলে নেবেন এমন শর্তও দিয়েছিলেন হ্যাপি। অবশ্য পরে, রেডিও স্টেশন, ঢাকা এফএমে’র বিশেষ অনুষ্ঠান অন্ধকারের গল্পে এসে, রুবেলকে আর বিয়ে করবে না বলে ঘোষনা করেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রতারণার দায়ে রুবেলের কঠোর শাস্তিও চান হ্যাপী।

হ্যাপির মুখে প্রেমের গল্প

উঠতি নায়িকা নাজনিন আক্তার হ্যাপি। লোকে তাকে তেমন চিনতই না। কিন্তু হঠাৎই টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হন এই চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। জাতীয় দলের পেসার রুবেলের সঙ্গে সম্পর্কের জের ধরে মামলার পর থেকেই এক নামে পরিচিতি হন তিনি। দেশ এবং দেশের বাইরের মিডিয়াগুলোতে হ্যাপি-রুবেল কোনো কিছু মানেই মানুষের কাছে হট কেক।

রেডিও ঢাকা এফএমে এসে অন্ধকারের গল্পে হ্যাপি নিজিই রুবেলের কাহিনী শোনান। প্রেমের শুরু, সম্পর্কের গভীরতা কতদূর, একই ফ্ল্যাটে তারা কীভাবে থাকতেন। এরপর কীভাবে আবার দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয় সবকিছুই প্রকাশ করেন হ্যাপি। হ্যাপির বলা সে কথাগুলোই তুলে ধরা হলো পাঠকদের উদ্দেশ্যে…

প্রেম ও পরিচয়
ঘটনার এক বছর আগে থেকেই ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পরিচয়। দু’জনের বাড়ি বাগেরহাটে হলেও এর আগে কেউ কাউকে চিনতেন না। ফেসবুকে পরিচয় থেকেই তাদের আস্তে আস্তে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সম্পর্কের পর দু’জনে প্রায়ই একই সাথে ঘুরে বেড়াতেন। একই গাড়িতে ভ্রমন, এমনকি রুবেলের মঙ্গে মিরপুর স্টেডিয়ামের যাওয়া আসাও ছিলো হ্যাপির। প্রেমের মাঝে কখনও অভিমান, কখনও রাগ আবার সেসব ভেঙে ভালোও হয়ে যেতো। আবার মাঝে মাঝে প্রেমের মাঝে পাগলামিও ছিলো তাদের মধ্যে।

লিভ টুগেদার
ঢাকায় থাকার কারণে প্রতিদিন দুজনের সাথে দেখা হতো। তাদের সম্পর্কের মাঝে বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত জমা হয়। বেশি দুষ্টামি করতে গিয়ে নয় মাসে ৯শত বার তাদের প্রেমের ব্রেকআপ হয়! ব্রেকআপ করে ফের দুজনে মিলেও যেতেন। এসব কিছুই অবশ্য হ্যাপির মুখের কথা।

তার শেষ কয়েকটি কথা ছিলো, ‘আমরা দু-জনে অলিখিত স্বামী-স্ত্রী হিসাবে থাকতাম। ও (রুবেল) আমাকে বউ বলে ডাকতো। আমি নিজেকেও তার স্ত্রী ভাবতাম। আমি এখন চাইলেও কাঁদতে পারি না। চাইলেও হাসতে পারি না। এখন ওর কথা শুনলেই ঘৃণা হয়। ওকে আমি ঘৃণা করি। এখন সত্যি, রুবেল নামের এ মানুষের প্রতি ঘৃণা হয়। যে আমাকে নিয়ে খেললো। রুবেলের মতো জানোয়ারকে আমি আর কখনও বিয়ে করবো না।’

ফরেনসিক রিপোর্ট

অবশেষে নায়িক হ্যাপির ফরেনিসিক রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে মিরপুর থানায়। ফরেনসিক রিপোর্টে কি রয়েছে, সে বিষয়টি সরাসরি প্রকাশ্যে না এলেও অনেকেই অনেক সূত্র ব্যবহার করে নানা তথ্য পরিবেশন করছেন। মোটামুটি যেটা পরিস্কার, সেটা হলো- হ্যাপির এই পরীক্ষায় ধর্ষনের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। তবে, শারিরীক সম্পর্কের আলামত রয়েছে, তাও অনেক আগের। কিন্তু, কার সাথে এই সম্পর্ক হয়েছে, সেটা রিপোর্টে উল্লেখ নেই। সে জন্য না কি ডিএনএ টেস্ট করতে হবে।
কেউ কেউ আবার লিখেছেন, ফরেনসিক রিপোর্টে উঠে এসেছে, হ্যাপির একাধিক ব্যাক্তির সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক ছিল। তবে, এ বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এক ব্যাক্তির সঙ্গে যে সম্পর্ক হয়েছে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে সেই ব্যাক্তি রুবেল কি না, তা জানতে ডিএনএ টেস্ট করাতে হবে। বেশ কয়েকটি মিডিয়ায় প্রকাশ, হ্যাপি আদালতে আবেদন করবেন, রুবেলের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখতে।

রুবেলের অস্বীকার

হ্যাপি-রুবেলের প্রেমের রসায়ন প্রকাশে এসে পড়ার পর যখন তোলপাড়, তখন এ নিয়ে কোথাও সরাসরি কোন বক্তব্য রাখেননি রুবেল। তবে তার আইনজীবী রুবেলের পক্ষ হয়ে দাবি করেন, ‘ঘটনাটি পুরোপুরি মিথ্যা, সাজানো এবং বানোয়াট। বিয়ে করার জন্য রুবেলকে বাধ্য করতেই এই মামলা সাজানো হয়েছে।

২১ ডিসেম্বর যখন মিরপুরে ওই ঘটনার পর প্রথম অনুশীলনে আসেন রুবেল, তখন সাংবাদিকরা এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন। পরে শর্তসাপেক্ষে মিডিয়ার মুখোমুখি হন এই বলে যে, বিতর্কিত বিষয়টি নিয়ে শুধুই আইনজীবী কথা বলবেন। রুবেল কথা বলেছেন শুধু, খেলার বিষয় নিয়ে।

তথ্যসূত্রঃ বাংলামেইল

আপনার মন্তব্য

আলোচিত