স্পোর্টস ডেস্ক

২৬ মার্চ, ২০১৬ ১৯:৩১

বড় হারে সমাপ্ত বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম ইনিংস যদি হয় মুস্তাফিজ বীরত্বের অমরকাব্য, দ্বিতীয় অংশ হতাশাভরা অবাক ভেঙে পড়া।

নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ১৪৫ রানে আটকে দিয়ে বাংলাদেশ যেখানে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রথম জয়ের সম্ভাবনা দেখছিল, সেখানে ব্যাটিংয়ে নেমে অসহায় আত্মসমর্পণ করে মাত্র ৭০ রানে গুঁটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৫ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়লেন। ৪ ওভারে ২২ রানে ৫ উইকেট! এই বাঁ হাতি পেসারের আঘাতে নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে করলো মাত্র ১৪৫ রান। কিন্তু নিদারুণ ব্যাটিং ব্যর্থতায় টাইগাররা পড়লো টি-টোয়েন্টিতে তাদের সর্বনিম্ন রানের লজ্জায়! ১৫.৪ ওভারে ৭০ রানে অল আউট বাংলাদেশ। হেরেছে ৭৫ রানে। আগের দলগত সর্বনিম্নটা ছিল ৭৮। ২০১০ সালে, হ্যামিল্টনে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই। আর এই বিশ্বকাপে ভারতের গড়া সর্বনিম্ন ৭৯ রানের রেকর্ডকেও হার মানালো বাংলাদেশ।

কিউইরা অপরাজিত থেকেই সেমিফাইনালে গেছে। অসাধারণ বোলিংয়েও ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার মিললো না মুস্তাফিজের। ব্যাটসম্যানদের আত্মসমর্পণে টাইগাররা এবারের বিশ্বকাপ শেষ করলো কিছুটা মাথা নিচু করেই।  

দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ মিথুনের সাথে বাজে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছেন তামিম ইকবাল (৩)। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশের জন্য সামনে কি অপেক্ষা করছে তা বুঝতে তারপরও সময় লেগেছে। ২৫ রানের জুটি হয়েছে সাব্বির রহমান ও মিথুনের মধ্যে। কিন্তু ২৯ রান থেকে ৪৮ রানে যাওয়ার পথে বাংলাদেশের ইনিংস তাসের ঘর! ১৯ রানে পড়েছে ৬ উইকেট।

ব্যাখ্যাহীন এক ব্যর্থতার শিকার বাংলাদেশের ব্যাটিং। আরেকটু সতর্ক হলে হয়তো কিছু হতে পারতো। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা ডাগ আউটে ফেরার মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। ইনিংসে দুই অঙ্কের রান তাতে তিনজনার। শুভাগত হোমের অপরাজিত ১৬ই সর্বোচ্চ। সাব্বির ১২ ও মিথুন ১১ রান করেছেন। সাকিব আল হাসান (২), মাহমুদ উল্লাহ (৫), মুশফিকুর রহিমরা (০) ঠিক মতো খেলতেই পারেননি। ইনিংসে ৪টি মাত্র বাউন্ডারি। একমাত্র ছক্কাটি মুস্তাফিজের। মুস্তাফিজের বীরত্বপূর্ণ বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে পাওয়া গেলো একরাশ হতাশাই কেবল।

এর আগে টস হেরে প্রথম ৪ ওভারে ৪ বোলার আনলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার ট্রাম্প কার্ড কাটার বিস্ময় মুস্তাফিজ এই তালিকার চার নম্বর বোলার। চতুর্থ ওভারে আঘাত হেনেছেন এই বাঁ হাতি পেসারই। মার্টিন গাপ্টিলের জায়গায় খেলতে নামা হেনরি নিকোলসকে (৭) কাটারে বোকা বানিয়ে বোল্ড করে দিয়েছেন মুস্তাফিজ। উইকেট মন্থর। বল ঠিক মতো ব্যাটে যায় না। ব্যাটসম্যানদের কাজটা কঠিন। কিউই ব্যাটসম্যানরা লড়ছিলেন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তারা পেয়েছে ৩৯ রান।

মুস্তাফিজ প্রথম ওভারে ২ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন। নবম ওভারটি ছিল তার দ্বিতীয়। উইলিয়ামসন মুস্তাফিজের ওপর চড়াও হতে চেয়ে পারেননি। দারুণ বৈচিত্রে হাবুডুব খাচ্ছিলেন। বুঝতেই পারছিলেন না। আরেকটি স্লোয়ারে উইলিয়ামসন (৪২) বোল্ড! কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাকিব আল হাসানের ঘরের মাঠ ইডেন। এখানে তাকে খেলাও কঠিন। নিপুণ বোলিংয়ে কিউইদের আটকে রাখছিলেন তিনিও। কলিন মুনরোকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেছিলেন। জোরালো আপিল ছিল। কিন্তু নিশ্চিত আউটেও আম্পায়ার সাড়া দিলেন না!    

তবে বোলিং হচ্ছিল দারুণ। ৬ থেকে ১৪ ওভারের মধ্যে মাত্র ১টি বাউন্ডারি মারতে পারলো নিউজিল্যান্ড। এই ৮ ওভারে রান এলো ৪৩ মাত্র। ১৩ ওভারে ৭৮ রান তোলার পর ব্যাটসম্যানদের আক্রমণ করা ছাড়া উপায় ছিল না। প্রথম ২ ওভারে মাত্র ৮ রান দেয়া আল-আমিন ১৫তম ওভারে কলিন মুনরোর হাতে ছক্কা খেলেন। কিন্তু মুনরোকে (৩৫) বোল্ড করে দিয়ে শোধ তুললেন আল-আমিন। ভাংলো ৪২ রানের জুটি। পরের ওভারে মাশরাফির বলে আল-আমিনই রস টেলরের (তখন ৯ রানে) সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন। এই ওভারেই মাশরাফির স্লোয়ারে বোল্ড হয়েছেন কোরি অ্যান্ডারসন (০)।

ডেথ ওভারের জন্য ২ ওভার ছিল মুস্তাফিজের। প্রথম ২ ওভারে ৭ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন কাটার। তার তৃতীয় ওভারের একটি অফ কাটার খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলেছেন গ্র্যান্ট ইলিয়ট (৯)। শুভাগত হোম চমৎকার ক্যাচ নিয়েছেন। টেলরকে (২৮) জীবন দেয়ার দায় আল-আমিন শোধ করেছেন তাকে তুলে নিয়ে। যদিও বাড়তি ১৯টা রান হয়ে গেল! এই ওভারের শেষ বলে লুক রনকির ক্যাচ ছেড়েছেন তামিম ইকবাল।

শেষ ওভারে মুস্তাফিজ আবার বোল্ড করেই উইকেট নিয়েছেন। এবার আউট মিচেল স্যান্টনার (৩)। এবং পরের বলেই আবার বোল্ড ন্যাথান ম্যাককালামও (০)! হ্যাটট্টিকের সুযোগ মুস্তাফিজের সামনে! কিন্তু তাকে ছক্কা হাঁকিয়ে ইনিংস শেষ করেছেন মিচেল ম্যাকক্লেনাঘান! ২২ রানে ৫ উইকেট মুস্তাফিজের। বিশ্বকাপের ইতিহাসে পঞ্চম সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সেরা বোলিং। আর বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে যা দ্বিতীয় সেরা বোলিং। ১৭ রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। আল-আমিন ২৭ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। ৩ ওভারে ২১ রানে ১ উইকেট অধিনায়ক মাশরাফির। তবে বোলিংয়ে দিনটা মুস্তাফিজের। তবে গোটা দিনটা টাইগারদের হলো না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত