নিউজ ডেস্ক

০২ জানুয়ারি, ২০১৫ ০১:৪৭

শ্রীলংকায়ও ম্যাচ পাতিয়েছিলেন আশরাফুল!


শুধু বাংলাদেশেই নয়, শ্রীলংকার ঘরোয়া টি২০ লিগ এসএলপিএলেও ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত নিষিদ্ধ ঘোষিত ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল। আইসিসির অ্যান্টি করাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিটের (আকসু) কাছে নিজেই এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে শ্রীলংকান পত্রিকা ডেইলি মিরর অনলাইন।

শ্রীলংকান প্রিমিয়ার লিগ বা এসএলপিএলে ম্যাচ পাতানোর ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু দিন থেকে তদন্ত করে আসছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু সাগরে সুঁই খোঁজারমতই কুল হাতড়ে পাচ্ছিল না এসএলসি। পর্যাপ্ত পরিমানে তথ্য এবং স্বাক্ষীর অভাবে যখন তারা ফিক্সিংয়ের অভিযোগ প্রমান করতে ব্যর্থতার মুখোমুখি, তখনই যেন আশির্বাদ হয়ে তাদের সামনে হাজির হলো আইসিসির দুর্নীতি দমন সংস্থা আকসু।

শ্রীলংকান ক্রিকেট বোর্ডের (এসএলসি) একটি ঘনিষ্ট সূত্র ডেইলি মিররকে নিশ্চিত করেছেন যে, তারা আকসুর কাছ থেকে নির্ভূল তথ্য-প্রমান হাতে পেয়ে গেছেন। ওই সূত্রই জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক এবং ফিক্সিংয়ের অপরাধে বর্তমানে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞার শাস্তি ভোগ করা মোহাম্মদ আশরাফুল নিজেই স্বীকার করেছেন, এসএলপিএলে ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা।’

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধ হন আশরাফুল। তার বিপক্ষে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠার পর আইসিসির দুর্নীতিদমন সংস্থা আকসু তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গত মে মাসে। ২৩ মে আকসুর কাছে দেওয়া জবানবন্দীতেই আশরাফুল এসএলপিএলে ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

এসএলপিএলে আশরাফুল কর্তৃক ফিক্সিংয়ের ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট রুহুনা রয়্যালস এবং ওয়াইম্বা ইউনাইটেডের মধ্যে। ওই ম্যিাচটির কিছুদিন আগেই স্বল্প সময়ের জন্য এসএলপিএলের দল রুহুনা রয়্যালসে খেলতে গিয়েছিলেন আশরাফুল।

তবে শ্রীলংকান ক্রিকেট বোর্ডের একটি সূত্র ডেইলি মিররকে জানিয়েছে, ‘আশরাফুল একাই এসএলপিএলে ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত নন। তার সঙ্গে অবশ্যই অন্য কেউ জড়িত ছিল। তারা কে কে, সেটাই এখন জানা সবচেয়ে বেশি জরুরি। তারা কি শ্রীলংকার স্থানীয় কোন ক্রিকেটার নাকি অন্য কেউ?’

আইসিসির দুর্নীতিদমন সংস্থা আকসুর কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে আশরাফুল জানিয়েছেন, বিপিএলের ফ্রাঞ্চাইজি ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের সিইও ভারতীয় নাগরিক গৌরভ রাওয়াত এসএলপিএল চলাকালীন ছিলেন মায়ানমারে। ভারতীয় একজন জুয়াড়ির মাধ্যমেই এসএলপিএলে ম্যাচ পাতানোর কাজ করেছেন গৌরভ। তবে আশরাফুল ভারতীয় ওই জুয়াড়ির নাম জানাননি।

আশরাফুল জানিয়েছেন, ওই একই জুয়াড়ি ২০০৭ সালে তিনি যখন প্রথম বাংলাদেশের অধিনায়ক নির্বাচিত হন, তখন থেকেই তাকে জাতীয় দলের ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু প্রথম থেকেই নাকি তিনি ওই জুয়াড়ির প্রস্তাব নাকচ করে আসছিলেন।

এমনকি ২০০৯ সালেও না কি আশরাফুল ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাবের বিষয়টি প্রকাশ করেছিলেন। তবুও ওই জুয়াড়ি ২০১২ পর্যন্ত আশরাফুলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখেন এবং সে পর্যন্ত তাকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দিয়ে আসেন।

এরপরই ২০১২ সালে ওই জুয়াড়ির মাধ্যমেই গৌরভ রাওয়াতের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটে আশরাফুলের এবং গৌরভের কারণেই তিনি হঠাৎ এসএলপিএলে খেলার সুযোগ পেয়ে যান। এখানে উল্লেখ্য, শুধু ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সেরই নয়, গৌরভ রাওয়াত এসএলপিএলে রুহুনা রয়্যালসেরও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিই্ও) ছিলেন।

২০১১ সালেই প্রথম এসএলপিএল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্পন্সর পাওয়া যায়নি বলে সেবার অনুষ্ঠিত হয়নি ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টি২০ টুর্নামেন্টটি। এরপর ২০১২ সালে প্রথম মাঠে গড়ায় লংকার জমজমাট এই টুর্নামেন্ট। সেবার ঘরোয়া এই লিগটি দিয়ে ২৮৯ মিলিয়ন রুপি আয় করে শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ড। লভ্যাংশের ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়েও বেশ ঝামেলার সৃষ্টি হয় শ্রীলংকার ক্রিকেটে।

এছাড়া ফ্রাঞ্চাইজিদের টাকা পরিশোদের নানা জটিলতা এবং স্পন্সর পাওয়া যাচ্ছে না বলে ২০১৩ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এসএলপিএল। তবে  যখনই এই টুর্নামেন্টে ফিক্সিং হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তখন থেকেই তোলপাড় শুরু হয় লংকান ক্রিকেটে।

তবে ফিক্সিংয়ের তদন্ত নিয়ে আইসিসির সঙ্গে ভালোই একটি টানাপড়েন সৃষ্টি হয় শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ডের। আইসিসি লংকান ক্রিকেট বোর্ডকে প্রস্তাব দেয়, ফিক্সিংয়ের ঘটনার তদন্তভার আকসুর ওপর ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এ সম্পর্কিত একটি চুক্তিনামা করার জন্যও এসএলসিকে প্রস্তাব দেয় আইসিসি। কিন্তু এসএলসি আইসিসি কর্তৃক একতরফা চুক্তির পক্ষপাতি নয়। তারা বার বার বলে আসছিল, চুক্তির বিষয়বস্তু এবং এর বিস্তারিত আমাদের অবহিত করা হোক, এরপরই আমরা ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবো। কিন্তু আইসিসিও বিস্তারিত জানানোর দাবিতে অপারগতা প্রকাশ করে।

এ নিয়ে যখন লংকান বোর্ডের সাথে আইসিসির টানাপড়েন চলছিল, ঠিক তখনই (গত নভেম্বরে, ২০১৪) এসএলসির প্রেসিডেন্ট জয়ন্ত ধর্মদাসা আইসিসির বোর্ড মিটিংয়ে কথা দিয়ে আসেন, ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করার বিষয়ে। কিন্তু বিষয়টি তিনি দেশে ফিরে নিজের নির্বাহী কমিটির কাছে ব্যাখ্যা দেওয়া তো দুরে থাক, তুলেও ধরেননি। এরই ফাঁকে আইসিসি থেকে যখন আবারও চুক্তিতে স্বাক্ষর করার বিষয়টি তোলা হয়, তখন এসএলসি আগের মতই বিস্তারিত জানানোর দাবি করে।

কিন্তু আইসিসি জানায় তাদের প্রেসিডেন্টই, এ ব্যাপারে কথা দিয়ে এসেছে। বিষয়টি জানার পর এসএলসির কার্যনির্বাহী কমিটি পুরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বোর্ড প্রেসিডেন্টের ওপর এবং তার কাছে এর ব্যাখ্যা দাবি করে। জবাবে প্রেসিডেন্ট জয়ন্ত ধর্মদাসা ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বিষয়টি সূরাহার জন্য আহ্বান জানায় কমিটিকে। শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, আকসুর কাছে জবানবন্দীতে আশরাফুল কী বলেছেন, তার পুরো কপি পেলেই তারা এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসার জন্য পরিবেশ তৈরী করতে পারবে।

শেষ পর্যন্ত আকসুর কাছ থেকে পাওয়া গেলো তাদের কাছে নিজ মুখে স্বীকারোক্তি দেওয়া আশরাফুলের সেই বক্তব্য। যার কারণে, এসএলপিএলে ফিক্সিংয়ের যে অভিযোগ রয়েছে, তা নতুন মোড় নিল। শ্রীলংকান প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে যে ম্যাচ পাতানোর ঘটনা ঘটেছে, তা এখন দিবালোকের মত সত্য।

ডেইলি মিরর জানিয়েছে, এসএলপিএলে ফিক্সিং বিষয়ে তাদের কাছে একটি অডিও টেপ রয়েছে। যেখানে রয়েছে জুয়াড়ি, ক্রিকেটার এবং ফ্রাঞ্চাইজি মালিকের কথোপকথন। তদন্তের স্বার্থে এসএলসি কর্তৃপক্ষ চাইলে তারা সেটা সরবরাহ করতেও রাজি আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত