স্পোর্টস ডেস্ক

০৫ জুন, ২০১৬ ১৬:০৫

বাংলাদেশ দলের ভারত সফর অনিশ্চিত

প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ চলছিল মাঠে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ক্যাপ্টেনস বক্সে বসে সেই ম্যাচ দেখতে দেখতেই কাল জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে একটা সভা করে ফেলল ফারুক আহমেদের নির্বাচক কমিটি। হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের খেলোয়াড় বাছাই ছিল মূল আলোচ্য। সঙ্গে জাতীয় দল নিয়েও কথাবার্তা হলো কিছু। হাথুরুসিংহে নাকি নির্বাচকদের বলেছেন, আরও বেশি করে লেগ স্পিনার খুঁজে বের করতে হবে।

কিন্তু সামনে কী আছে যে জাতীয় দল নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় এগোবেন কোচ-নির্বাচকেরা? সেপ্টেম্বরে ভারত সফরের কথা থাকলেও সেটিও যে এখন হচ্ছে না! এক টেস্টের সফরটা প্রথমে হওয়ার কথা ছিল আগামী আগস্টের কোনো এক সময়ে। পরে জানা গেল তা হবে সেপ্টেম্বরে। কিন্তু এখন মোটামুটি নিশ্চিত, অন্তত এ বছর বাংলাদেশ দলের ভারত সফর হচ্ছে না। কবে হবে অনিশ্চিত সেটাও।

সাকিব-মুশফিকদের ভারত সফর নিয়ে অনেক দিন ধরেই চলছে বিসিবি-বিসিসিআই যোগাযোগ। তারই এক পর্যায়ে বদলে যায় সম্ভাব্য সিরিজের ধরন। বিসিবি কিছু ম্যাচ বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও গত মার্চে উল্টো ভারত সফরে বাংলাদেশের টেস্ট খেলারই সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। পরিবর্তে শুরু হয় আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে একটি তিন জাতি ওয়ানডে সিরিজ আয়োজনের আলোচনা। ওই সময়ে নিউজিল্যান্ড দলের এমনিতেই ভারত সফরের কথা। বিসিসিআই চেয়েছিল তখন বাংলাদেশকে নিয়ে তিন জাতি সিরিজটি জুড়ে দিতে। প্রস্তাব অনুযায়ী মোট সাত ম্যাচের এই সিরিজের দুটি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল ঢাকায়।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, ভারতে বাংলাদেশ দলের সেই তিন জাতি সিরিজ খেলার সম্ভাবনা এখন শূন্যের কোঠায়। দায়টা অবশ্য বিসিসিআইয়ের নয়। বিসিবি সূত্রের তথ্য, ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় দল নিউজিল্যান্ডই নাকি ৭ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের সঙ্গে খেলার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ফর্ম এবং অতীতে উপমহাদেশের কন্ডিশনে দলটার বিপক্ষে তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণেই এই সতর্কতা। বাংলাদেশের পরিবর্তে ত্রিদেশীয় সিরিজের তৃতীয় দল হতে পারে শ্রীলঙ্কা।

বাস্তবতা বুঝে বিসিবিও এখন ভারত সফর নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের জানুয়ারি–মার্চের মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ দুই দলের জন্যই ফাঁকা আছে, সে রকম একটা সময় খোঁজা হচ্ছে এখন। বিসিবির আশা, ২৮ জুন এডিনবরায় শুরু আইসিসির বার্ষিক সভা চলাকালে কাঙ্ক্ষিত সেই সময়টা খুঁজে পাওয়া যাবে। অবশ্য তা অনেকাংশেই নির্ভর করছে ওই সময়ে বিসিসিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিসিবি কর্মকর্তাদের ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’-এর সাফল্যের ওপর। কাজটা সহজ হওয়ার কথা নয়। কারণ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচটি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টির সিরিজ খেলার কথা ভারতের।

ভারত সফর নিয়ে তাই একটু অনিশ্চিত অবস্থাতেই পড়েছে বিসিবি। সফরের ভবিষ্যৎ কী, সেটা বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীও কাল নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি, ‘ভারতের ব্যস্ত সূচির কথা আমরা সবাই জানি। আবার আমরাও যে সব সময় ফাঁকা, তা-ও নয়। সফরের জন্য এমন একটি সময় ঠিক করার চেষ্টা হচ্ছে, যখন দুই দলেরই কোনো ব্যস্ততা থাকবে না।’ তিনি অবশ্য আশাবাদী, সে রকম সময় এ বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।

সেটা পাওয়া গেলেই ভালো এবং টেস্টের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে ওয়ানডে যোগ করতে পারলে আরও ভালো। কারণ ২০১৯ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব এড়াতে ২০১৭-এর ৩০ সেপ্টেম্বরে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের প্রথম আট দলের মধ্যে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু বর্তমানে সাতে থাকলেও সে পর্যন্ত এ অবস্থান ধরে রাখার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

এ বছর ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড সিরিজে মোট ছয়টি ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ দল। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলবে কমপক্ষে তিনটি ম্যাচ। এর আগে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় তিন জাতি সিরিজে ম্যাচ আছে আরও চারটি। এই ১৩টি নিশ্চিত ম্যাচের সঙ্গে যদি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে শ্রীলঙ্কা এবং জুন-জুলাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে সম্ভাব্য সিরিজ দুটিও হয়, তবু ২০১৭-এর ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলবে সর্বোচ্চ ১৯টি। অথচ বর্তমান র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ঠিক পরেই থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ গতকাল শুরু হওয়া তিন জাতি সিরিজসহ সে পর্যন্ত খেলবে ৩৮টি ওয়ানডে। ওই সময়সীমা পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫টি ম্যাচ খেলার কথা নবম স্থানে থাকা পাকিস্তানেরও। আগামী অক্টোবরের মধ্যেই ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে পাঁচটি করে ১০টি ওয়ানডে খেলার কথা পাকিস্তানের, ফলে বাংলাদেশকে টপকে যাওয়ার সুযোগ তাদের সামনে।

তিন জাতি সিরিজে খেলা না হলে আগস্ট–সেপ্টেম্বরের ফাঁকা সময়ের জন্য বিকল্প সিরিজ আয়োজনের চেষ্টায় নামবে বিসিবি। সে ক্ষেত্রে হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ হবে শেষ ভরসা।
সূত্রঃ প্রথম আলো

আপনার মন্তব্য

আলোচিত