দোদুল খান

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:৩৩

বিপিএলে কেন দর্শকহীন সিলেট স্টেডিয়াম?

সিলেটের মানুষ ক্রীড়ামোদী, বিশেষ করে মাঠে যদি ফুটবল গড়ায় তাহলে স্টেডিয়ামে গ্যালারিতে যেন বাঁধভাঙা জোয়ার নামে দর্শকদের। সাম্প্রতিক সিলেট স্টেডিয়ামে হওয়া সবকটি ফুটবল ম্যাচেই ঢল নেমেছিলো দর্শকদের। তবে একেবারেই উল্টোচিত্র জেলা স্টেডিয়ামে চলতে থাকা জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের।

দেশীয় ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর চলছে। দেশের ফুটবলের বড় সব ক্লাবই অংশ নিচ্ছে। তবু দর্শক নেই। সোমবার তো বড়জোর হাজারখানেক দর্শক উপস্থিত হয়েছিলেন স্টেডিয়ামে। কেনো এই দর্শকখরা?

অন্যান্য ফুটবল ম্যাচে যেখানে গ্যালারিতে দর্শকদরে জায়গা করা যায় না, সেখানে কেনো এই টুর্ণামেন্টে ফাঁকা গ্যালারি?

এ ব্যাপারে এদিকে সিলেটের জ্যেষ্ঠ ক্রিড়া সাংবাদিক ও স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, সিলেটের সভাপতি বদরুদ্দোজা বদর এজন্য ক্লাবগুলোর খেলার মান কমে যাওয়া ও ফুটবলে তারকাহীনতাকে দায়ী করেন।

বদরুদ্দোজা বদর বলেন, “আগে মানুষ আবাহনী, মোহামেডান বা কোন ক্লাবের নাম শুনলেই আগ্রহী হতো মাঠে আসার। এখন আর দেশের ক্লাবগুলোর সেই রমরমা অবস্থা নেই। কোনরকমে ধুকতে ধুকতে নিম্নমানের খেলা খেলছে দলগুলো, তাই দর্শকেরও আর আগ্রহ নেই মাঠে এসে খেলা দেখার”।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অঞ্চলভিত্তিক ফুটবলেও প্রচির দর্শক সমাগম হয়েছে। অথচ ক্লাবের খেলার ব্যাপারে দর্শকরা একেবারেই আগ্রহ নন।

তিনি বলেন, “এ লীগে স্থানীয় কোনও ক্লাবের অংশগ্রহণ নেই। দেশীয় ফুটবলে আগের মতো তারকা খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না। আগে যেমন অনেক তারকার নামেই দর্শকরা মাঠে আসতো এখন সেরককম নেই। সব মিলিয়ে একবাক্যেই বলা যায়, মাঠের মধ্যে এমন কোন আকর্ষণ নেই যে দর্শকরা খেলা দেখতে আসবেন”।

টিটিকের দাম অধিক রাখার কারণেও দর্শকরা কম আসছেন বলে মনে করেন সাইফুল ইসলাম নামের এক দর্শক। তিনি বলেন, এই টুর্ণামেন্টে ঢাকার মাঠেও টিকিটের দাম ছিলো ৫০ টাকা। আর সিলেটের জন্য রাখা হচ্ছে ৫০ টাকা।

২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এ স্টেডিয়ামে রোবার প্রিমিয়ার লীগের সিলেট পর্বের উদ্বোধনী খেলার সময় সর্বসাকুল্যে হাজার তিনেক দর্শকের উপস্থিতি থাকলেও বিপিএল আয়োজকরা জানান প্রথম দিন পাঁচ হাজার দর্শক ছিলেন গ্যালারিতে। তবে দ্বিতীয় দিনে দর্শকের উপস্থিতি যায় আরো কমে। মাত্র হাজারখানেক দর্শকের উপস্থিতি যেন সংক্রমিত হয়েছিলো মাঠের খেলাতেও। মাঠেও প্রায় নিষ্প্রাণ দুটি খেলা যেন ধুকতে ধুকতে শেষ হয়।

উপস্থিত দর্শকসহ বিভিন্ন ক্রীড়ামোদী ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বললে সবাই দর্শক আগ্রহ না থাকার নানা কারণ হিসেবে বিভিন্ন বিষয় চিহ্নিত করেন। প্রিমিয়ার লীগে সিলেটের কোন দলের অনুপস্থিতি, প্রাচীন গ্যালারিতে আরামদায়ক বসার স্থান না থাকা, ক্লাব ফুটবলের নিম্নমান ও তারকা ফুটবল না থাকাসহ আরো অসংখ্য কারণ উল্লেখ করেন। একই সাথে অত্যন্ত গুরুত্ব নিয়েই উঠে আসে পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাব।

বিপিএল সিলেট পর্বের উদ্বোধন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় শুক্রবার। প্রচারণা অংশ হিসেবেই এদিন বর্ণাঢ্য একটি কনসার্ট আয়োজন করা হয় যাতে বিপিএলের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর লোক শিল্পী মমতাজ ছাড়াও গান পরিবেশন করে দেশবিখ্যাত ব্যান্ডদল আইয়ুব বাচ্চুর এলআরবি। এদিন অবশ্য প্রবল বর্ষণ উপেক্ষা করে কনসার্ট দেখতে গ্যালারি ভর্তি দর্শক উপস্থিত হন, যা দেখে বিপিএলের খেলায় দর্শকপ্রাপ্তির যে আশা জেগেছিলো, তা দুইদিনের মাথায় মূল লীগ শুরু হতেই ভেস্তে গেছে খালি গ্যালারিতে।

তবে কনসার্টে দর্শক আসলেও মাঠে খেলা দেখতে না আসার কারণ হিসেবে প্রচারণায় লীগের সিলেট পর্ব শুরুর আগে খেলার প্রচারণা বাদ দিয়ে কেবলমাত্র কনসার্টের প্রচারণা চালানোকেই দায়ী করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন-বাফুফে’র কার্যকরি কমিটির সদস্য ও সিলেট জেলা ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম।

তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাঠের বাইরে ও শহরের বিভিন্ন অংশে বিপিএল সিলেট পর্বের খেলার যে সকল আনুষ্ঠানিক প্রচারণা চালানো হয়েছে, তার সবই মূলত কনসার্টের প্রচারণা। বিশেষ করে বিভিন্ন স্থানে বানানো তোরণে ব্যানার, ফেস্টুন ও অন্যান্য প্রচারণা মাধ্যমে প্রকাশিত সবকটি ছবিতেই কেবলমাত্র কনসার্টে অংশগ্রহণকারী সংগীতশিল্পীদের ছবি রয়েছে, যা কনসার্টের প্রচারণা হিসেবেই কাজ করেছে কিন্তু খেলার না”।

মাহিউদ্দিন সেলিম বলেন, “এ লীগের সব ধরণের প্রচারণার দায় দায়িত্ব স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের, আর এ স্থানে তারা অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে বলেই সিলেটের ফুটবল প্রিয় দর্শকদের মাঠে টানা যাচ্ছে না। তাছাড়া প্রচারণা শুরুও হয়েছে অনেক দেরীতে। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রচারণা মাত্র কয়দিনে সব দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি”।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত