সনেট দেব চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা

২২ জানুয়ারি, ২০১৫ ১৬:৩১

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মাগুরছড়া পুঞ্জিতে সমাহিত জুম্মন লুসাই

হাজারও ভক্ত, আত্মীয়স্বজন আর ক্রীড়ামোদীদের কাঁদিয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন দেশের কিংবদন্তি হকি তারকা জুম্মন লুসাই।


হাজারও ভক্ত, আত্মীয়স্বজন আর ক্রীড়ামোদীদের কাঁদিয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন দেশের কিংবদন্তি হকি তারকা জুম্মন লুসাই। সেই সাথে অবসান হলো দেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের।
হকি-অন্তপ্রাণ জুম্মন লুসাই ছিলেন বাংলাদেশের হকির সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলে তিনি আশির দশকে গৌরবান্বিত করেছিলেন দেশের হকিকে। জাতীয় হকি দলকে একাধিকবার নেতৃত্ব দেয়া জুম্মন লুসাই খেলোয়াড়ি জীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই কাটিয়েছেন দেশের শীর্ষ ক্লাব আবাহনীতে। আর ব্যক্তিগত জীবনে তার পুরোটা সময় কেটেছে শ্রীমঙ্গল আর সিলেটে। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী শহর শ্রীমঙ্গলের অরণ্যঘেরা মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্চিতে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।



বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় তার মরদেহ ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে নিয়ে আসা হয় মাগুরছড়া পুঞ্জিতে। সেখানে তাকে শেষ বারের মতো এক নজর দেখতে জেলার নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আছেন জুম্মন ভক্তরা। প্রিয় খেলোয়াড়ের মরদেহ কাঁদে নিয়ে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ভক্ত আর অনুরাগীরা দুপুর আড়াইটায় পৌছেন মাগুরছড়া চার্চে। সেখানে বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে পুঞ্জির সমাধিস্থলে সামহিত করা হয়। শেষকৃত্যানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় হকি ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক খাজা রহমত উল্লাহ, জাতীয় হকি দলের কোচ মাহবুব হারুনসহ জেলা ক্রীড়া সংস্থা, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও সর্বপরি শ্রীমঙ্গলের ক্রীড়াঙ্গনের তার প্রিয় মানুষ গুলো।

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশ দলের হয়ে প্রথম বিভাগে খেলা শুরু করেছিলেন জুম্মন লুসাই। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নিজেকে চিনিয়ে তিনি জায়গা করে নেন জাতীয় হকি দলে। ১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়ান গেমসে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়ান। এশিয়ান গেমস খেলেছেন আরো একটি, ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে। এর আগে ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ হকিতে তিনি ইরানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি হকি খেলোয়াড়, যিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হ্যাটট্রিকের গৌরব অর্জন করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি দিল্লিতে আরো একটি এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত হকি তারকা জুম্মন লুসাই এসেছিলেন একটি ক্রীড়া পরিবার থেকে। তার বড় ভাই রামা লুসাই সত্তর এবং আশির দশকে ঢাকার ফুটবলের জনপ্রিয় তারকা ছিলেন। খেলেছেন মোহামেডান এবং জাতীয় ফুটবল দলে। বাবা হারেঙ্গা লুসাইও হকি খেলতেন। ছোট ভাই জুবেল লুসাইও আবাহনী, অ্যাজাক্স, মোহামেডান এবং সাধারণ বীমার হয়ে হকি খেলেছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে।



আপনার মন্তব্য

আলোচিত