১৬ জুন, ২০২০ ২১:৪৮
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রেলওয়ের দুই দশমিক সাতাশি একর জায়গা দখলমুক্ত করতে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখ অভিযান শুরু করে রেলওয়ের এস্টেট অফিসারের নেতৃত্বে রেলওয়ের একটি টিম। তখন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে এবং বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টানিয়ে একদল লোক উচ্ছেদ অভিযান করতে বাধা দেয় তাদেরকে। পরে উচ্ছেদ না করেই ফিরে যায় রেলওয়ের সেই দলটি।
তখন কারো কোন বাঁধা না মেনে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ফের অভিযানে নামে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেদিন শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কের পাশের রেলের ২ দশমিক ৮৭ একর ভূমি একদিনের অভিযানে দখলমুক্ত করে তারা। কিন্তু ভানুগাছ সড়কের পাশে রেলওয়ের জায়গায় গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর আবারও অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যাচ্ছে জায়গাটি। উচ্ছেদ অভিযানের দুই সপ্তাহ পর থেকে ফের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা করতে শুরু করেন অবৈধ দখলদাররা।
২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর রেলওয়ের এই জায়গাটি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে দখলমুক্ত করা হয়। প্রায় ৩ শতাধিক দোকানপাটের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার নজরুল ইসলাম। উচ্ছেদ অভিযানের সময় পাকা ভবন থেকে শুরু করে সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করেন তারা। যার যার মালামাল দ্রুত সরানোর নির্দেশও দেওয়া হয়। উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকেই আবারো শুরু হয়েছে দখলের প্রতিযোগিতা।
এ বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু গণমাধ্যম এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখনও জায়গাটি দখল করলেও স্থায়ী স্থাপনা কম ছিলো ৷ গত ৫ মাসের ব্যবধানে এই জায়গাটিতে এখন ইট সিমেন্ট দিয়ে স্থায়ীভাবে পুনরায় দোকানকোঠা নির্মাণ করছেন দখলদারেরা। সংবাদগুলো প্রকাশিত হওয়ার পরও টনক নড়েনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। দখলদারদের উচ্ছেদ করার কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
সরেজমিন এই জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ কাঠ টিন দিয়ে বানানো ছোট বড় ঘর সাথে সাথে ইট সিমেন্ট দিয়ে বড় বড় ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তা থেকে যেন দেখা না যায় তাই ইটের তৈরি আধা পাকা ঘরগুলোতে ত্রিপল (প্লাস্টিকের চট) দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এসব আধাপাকা ঘরের ভিতরে অবৈধ দখলদারেরা ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই জায়গা উচ্ছেদ করার আগে কয়েক দশক ধরে আমাদের দখলে ছিলো। কখনো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করতে আসেনি। সবশেষ ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে চাপের মুখে পড়ে জায়গাটি দখলমুক্ত করে। এখন আর উচ্ছেদ হবো না। এখন জায়গা যদি দখল না করি তাহলে পরে দখল করতে পারবো না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করতে চাইলে সে সময় উঠে যাবো।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ রেলওয়ের সিনিয়র সাব এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল বলেন, রেলওয়ের নির্বাহী কর্মকর্তারা জায়গাটি উচ্ছেদ করার পর রেলওয়ে পুলিশের কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল থানার ওসিকে উচ্ছেদকৃত স্থাপনা স্থিতিশীল রাখার জন্য জিম্মায় দেওয়া হয়। নতুন করে কেউ স্থাপনা তৈরি করতে চাইলে রেলওয়ে পুলিশ বাধা দিবে। তবে রেলওয়ে পুলিশ উচ্ছেদ করছে না।
এদিকে অভিযোগ আছে শ্রীমঙ্গলের রেলওয়ে পুলিশ কে ম্যানেজ করেই চলছে এসব স্থাপনা নির্মাণের কাজ।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, রেলওয়ের এস্টেট অফিসাররা আমাদের কোন লিখিত না দিলে আমরা স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারি না। উনারা (ভূ সম্পত্তি বিভাগ) যেটা বলছেন সেটা পুরোপুরি অবৈধ ও ভিত্তিহীন,উচ্ছেদকৃত ভূমি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এরকম কোন নির্দেশনা রেল পুলিশ কে দেওয়া হয় নি।
আপনার মন্তব্য