নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ মার্চ, ২০২১ ০০:৪২

শাল্লায় তাণ্ডব: আলোচনায় যুবলীগ নেতা স্বাধীন মেম্বার

সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আলোচনায় ওঠে এসেছে ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম স্বাধীনের (স্বাধীন মেম্বার) নাম।

গত ১৭ মার্চের ওই তাণ্ডবের পর থেকেই হামলাকারী হিসেবে ওঠে আসে স্বাধীন মেম্বারের নাম। হামলার পরদিন স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়েরকৃত মামলায়ও স্বাধীন মেম্বারকে আসামি করা হয়।

শহীদুল ইসলাম স্বাধীনের বাড়ি শাল্লার পাশ্ববর্তী দিরাই উপজেলার নাচনি গ্রামে। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।

হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে এক যুবকের দেওয়া স্ট্যাটাসের জেরে ১৭ মার্চ শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাজারও লোক মিছিল নিয়ে এসে এই হামলা চালায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হামলাকারীদের বেশিরভাগই আসে স্বাধীনের গ্রাম দিরাইয়ের নাচনি থেকে। স্বাধীন মেম্বারও হামলাকারীদের দলে ছিলেন। তার উপস্থিতিতেই হামলা হয়।

স্বাধীন মেম্বারের সাথে জলমহাল নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধের জেরে মামুনুল অনুসারীদের সাথে তিনি এই হামলায় অংশ নেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। বাড়িঘর ভাঙচুর হওয়া একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপেই স্বাধীন মেম্বারের নাম ওঠে আসে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকা ছাড়া স্বাধীন। পুলিশও তাকে খুঁজে পাচ্ছে না।

তবে হামলার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে শহীদুল ইসলাম স্বাধীন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, এই ঘটনায় আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। ঘটনার সময় আমি বাড়িতেই ছিলাম। হেফাজতের মিছিলের খবর পেয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে ঘটনাস্থলে যাই। সে সময় আমি মিছিলকারীদের থামানোর চেষ্টা করি। কিন্তু কোনো হামলায় অংশ নেইনি।

স্বাধীন বলেন, জলমহাল নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর সাথে আমার বিরোধ হয়েছে। এটা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। তবে এই বিরোধের জের ধরে হামলায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। হামলার কোনো ছবি বা ভিডিও ফুটেজেই তাকে পাওয়া যাবে না বলে দাবি স্বাধীনের।

শুক্রবার রাত ১২টার দিকে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে স্বাধীন মেম্বার জানান, তিনি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রয়েছেন। তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চান। আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছেন বলেও জানান স্বাধীন। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে সহায়তা করতে চান বলে জানান তিনি।

তবে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, স্বাধীন পলাতক রয়েছে। তার অবস্থান আমরা জানি না। আমাদের সাথে সে কোনো যোগাযোগও করেনি। তবে সে আত্মসমর্পণ করতে চাইলে পুলিশ তাকে সবধরনের সহযোগিতা করবে। সে যে অবস্থানে রয়েছে সেখান থেকে পুলিশ তাকে নিয়ে আসবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ দিরাইয়ে সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। পরদিন মামুনুলের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন নোয়াগাঁওয়ের এক যুবক।  এই স্ট্যাটাসের জেরে হিন্দু অধ্যুষিত ওই গ্রামটিতে হামলা চালিয়ে ৮০টিরও বেশি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়েরের পর এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত