নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ মার্চ, ২০২১ ১৮:৫৮

হেফাজতের হরতালে এরা কারা?

হরতাল ডেকেছে হেফাজতে ইসলাম। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনটির ডাকা হরতালে সিলেটে পিকেটিং করতে দেখা গেছে টি-শার্ট, জিন্স পরা অনেক তরুণকে। থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরিহিত কয়েকজনকেও পিকেটিংয়ে দেখা যায়।

পুলিশ বলছে, এরা প্রত্যকে শিবির কর্মী। হেফাজতের হরতালের সুযোগে মাঠে নেমে বিশঙ্খলার চেষ্টা করে তারা। হেফাজতের হরতাল চলাকালে রোববার দুপুরে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় ছাত্রলীগ ও শিবিবের মধ্যে সংঘর্ষও হয়।

পুলিশ বলছে, হরতালের সমর্থনে রোববার সকালে সিলেটের সড়কে অবস্থান নেয় হেফাজত নেতাকর্মীরা। দুপুরের আগেই সড়ক ছেড়ে যায় তারা। আর দুপুরে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় জড়ো হয় শিবির নেতাকর্মীরা। আগে থেকেই এ এলাকায় অবস্থানে ছিলো আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। শিবির জড়ো হতে চাইলে দু'পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটে। এতে অন্তত ৫ জন আহত হন। এছাড়া পুলিশ ৫ শিবির কর্মীকে আটক করে।

তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আটককৃত সকলে দোকান কর্মচারী।

মহাজনপট্টির কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, নগরের অন্যতম ব্যবসায়িক এলাকা হওয়ায় প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। এ সময় আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে শ্রমিকদের ধাওয়া করা হয়। একটি চালের দোকানে কর্মরত এক শ্রমিক ছুরিকাহত হলে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সংগঠিত হলে তাদের হরতালের পিকেটার হিসেবে আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে ধাওয়া করা হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাঁচজনকে আটক করে নিয়ে যায়। এর আগে মিছিল থেকে ১০-১৫টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে।

কেবল বন্দরবাজারই নয়, রোববার হেফাজতে ইসলামের হরতালে সিলেট নগরের বিভিন্ন সড়কে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের জড়ো হয়ে পিকেটিং করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এরআগে গত শনিবার সকালেও হেফাজতের হরতালের সমর্থনে নগরের নয়াসড়ক এলাকায় মিছিল করে ছাত্রশিবির। ওই মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হলে পুলিশ ১৪ জনকে আটক করে।

রোববার দুপুরে নগরের শিবগঞ্জ এলাকায় পিকেটারদের কবলে পড়েন স্থানীয় দৈনিক জৈন্তাবার্তার সম্পাদক ফারুক আহমদ। এসময় পিকেটাররা তার গাড়ি ভাঙচুর করে।

ফারুক আহমদ বলেন, ভাঙচুরকারীরা সকলেই শিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী।

এই ঘটনার আগেই নগরের বন্দরবাজার এলাকায় শিবিরের সাথে ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, হরতালের বিরুদ্ধে সকাল থেকেই সিলেটের বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন। দুপুরে বিক্ষোভ মিছিলও করে তারা। চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘুরে আবার বন্দরবাজার কামরান চত্বরে এসে অবস্থান নেয় তারা। এসময় নগরের মহাজনপট্টি গলি থেকে বের হয়ে শিবির নেতাকর্মীরা বন্দরবাজার এলাকায় জড়ো হতে চেষ্টা করে। দুইপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। মূহূর্তেই এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় অন্তত ১০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৫ জন আহত হন ও ৫ জনকে আটক করে পুলিশ।
 
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ বলেন, যে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে এরা সবাই শিবির কর্মী। আটককৃত সকলের পরনেই ছিলো জিন্স ও টি-শার্ট। তারা কেউ মাদ্রাসা ছাত্র নয়।

তিনি বলেন, হেফাজতের কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবেই অবস্থান নিয়েছিলো। তবে দুপুরের দিকে শিবির মাঠে নেমে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের প্রতিহত করেছে।  
ওসি বলেন, এরআগে শনিবারও শিবির ঝটিকা মিছিল করে নাশকতার চেষ্টা করে। ওই মিছিল থেকে পুলিশ ১৪ জনকে আটক করেছে।

এদিকে রোববার নগরীতে হরতালবিরোধী সমাবেশে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে হেফাজত, জামায়াত-শিবির ও বিএনপি একসাথে মাঠে নেমেছে। তাদের সহিংস কর্মসূচি প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ সবসময় মাঠে থাকবে। রাজপথেই মৌলবাদীদের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, মোদীবিরোধী বিক্ষোভের নামে তাণ্ডবের পর পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পর কয়েকজন মাদ্রাসা ছাত্র নিহতের প্রতিবাদে রোববার সারাদেশে হরতাল পালন করে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত