নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ এপ্রিল, ২০২১ ০১:৪৯

ডিজিটাল সিলেট সিটি: মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি কাজ

দেশের প্রথম নগর হিসেবে সিলেটকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে শুরু হয় ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ প্রকল্পের কাজ। সিলেটের ওসমানী হাসপাতাল, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা ডিজিটালাইজেশন করা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সড়কে চেহারা চিহ্নিতকরণ ক্যামেরা স্থাপন ও নগরজুড়ে ফ্রি ওয়াইফাই জোন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয় এ প্রকল্পের মাধ্যমে।

২০১৯ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি কাজ। এ অবস্থায় গত মাসে সংশোধিত ডিপিপির মাধ্যমে এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রায় ৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে অটোমেশনের আওতয় নিয়ে আসার কথা ছিলো। এজন্য ‘হেলথ ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন সিস্টেম’ চালুর করার কথা জানিয়েছিলেন সংশ্লিস্টরা। তবে এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি।

প্রকল্পের শুরুতে ১০টি কাজের কথা বলা হয়েছিলো। এগুলো হলো- দেশে প্রথমবারের মতো নগরীর বিভিন্ন মোড়ে অপরাধীর চেহারা শনাক্তকরণ (ফেইস রিকগনিশন) ক্যামেরা স্থাপন, নগরজুড়ে ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন তৈরি, কম্পিউটার লিটারেসি সেন্টার নির্মাণ, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল অটোমেশন, সিলেট সিটি করপোরেশনের দশ সেবাকে অটোমেশন করা, নাগরিক সুবিধা উন্নত করা ছাড়াও পর্যটকদের জন্য ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ডিজিটাল টেলিফোন ডিরেক্টরি এবং বিভিন্ন সেবা সংস্থা থেকে প্রবাসীদেরকে বাড়তি সুবিধা দিতে তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেস তৈরি করা।

তবে পরবর্তীতে প্রকল্প থেকে ৭টি কম্পোনেন্টই বাদ দেওয়া হয়। এখন কেবল ফেস রিকগনিশন ক্যামেরা স্থাপন, ফ্রি ওয়াইফাই জোন স্থাপন ও ওসমানী হাসপাতালকে অটোমেশন করার কাজ চলছে।

ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্প নিয়ে এই প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক মধুসুদন চন্দ বলেন, করোনাসংক্রমণের কারণে অনেকদিন প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিলো। এছাড়া সিলেট নগরীতে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের কারণেও আমাদের কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এসব কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি।

তিনি বলেন, প্রকল্পের মূল যে দুটি কম্পোনেন্ট ছিলো তা ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে অপরাধীর চেহারা শনাক্তকরণ (ফেইস রিকগনিশন) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো ইতোমধ্যে সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর, নগরীর ১২৬ টি পয়েন্টে ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন তৈরি করা হয়েছে। এগুলো মানুষজন ব্যবহারও করতে পারছেন। ওয়াইজোনগুলোও সিলেট সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ওসমানী হাসপাতাল অটোমেশনের জন্য এমাসেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। আশা করছি ২০২২ সালের মধ্যে এই কাজ শেষ হয়ে যাবে।

প্রকল্পের শুরুতে অর্ন্তভূক্ত থাকা আরও ৭টি কম্পোনেন্ট বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে তাদের কিছু সেবা ডিজিটালাইজ করে ফেলেছে। বাকীগুলোও অন্যনান্য সংস্থা করছে বা করার পরিকল্পনা আছে। তাই এ প্রজেক্ট থেকে এগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিজিটাল সিলেট নগর গড়ে তোলার উদ্যোগে সবার আগে নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ জন্য নগরের ভেতরে চেহারাশনাক্ত করণ ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ‘আইপি ক্যামেরা বেইসড সার্ভিলেন্স সিস্টেম’ প্রকল্পের মাধ্যমে নগরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি ক্যামেরা) স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে বিশেষ ধরণের ১০০টি ফেস রিকোগনিশন (এফআর) বা ব্যক্তি শনাক্তকরণ এবং ১০টি অটো নাম্বার প্লেট রিকোগনিশন (এএনপিআর) তথা যানবাহনের নাম্বার প্লেট চিহ্নিতকরণ ক্যামেরা রয়েছে। এটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে।

এসব ক্যামেরা স্থাপনের পর নগরের কোতায়োলী মডেল থানায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পিলার স্থাপন করে ১১০টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ক্যামেরা ৩৬০ ডিগ্রি জুমিং সুবিধা রয়েছে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তে সুবিধা পাচ্ছে পুলিশ। এরই মধ্যে এরকম কয়েকটি ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, যানবাহনের ডাটা সংগ্রহ ও অপরাধী সনাক্তকরণ কাজে নএসব ক্যামেরার সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে এ প্রকল্পের আওতায় নগরের ৬২ এলাকায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ওয়াইফাই সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব জায়গায় ১২৬টি ওয়াইফাই এক্সেস পয়েন্ট (এপি) রয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু হয়।

তবে ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, অনেক এলাকায়ই এক্সে পয়েন্ট কাজ করে না। আবার বেশিরভাগ এলাকায়ই ফ্রি ওয়াইফাইয়ের ইন্টারনেটের গতি খুবই মন্থর।

নগরের জিন্দাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী জাবের উদ্দিন বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশেই ফ্রি ওয়াইফাইর একটি এক্সেস পয়েন্ট। কিন্তু আমি কখনোই এই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারি না। এর গতি এতোই মন্থর।

আর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, হাসপাতালের অটোমেশনের কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেবা প্রাপ্তি অনেক সহজ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, কোনো রোগীকে হাসপাতালে কী কারণে কোন ঔষধ প্রদান করা হয়েছিল, তাকে কোন কোন মেডিকেল পরীক্ষা করাতে হয়েছিল এসব তথ্য সংরক্ষণ করা হবে ডাটাবেজে। ওই রোগী যদি পরবর্তীতে হাসপাতালে আসেন, তবে ডাটাবেজ থেকে তার পূর্বের রোগের সমস্ত তথ্য সহজেই পাওয়া যাবে। ফলে চিকিৎসকের পক্ষে সঠিক সেবা প্রদানও সহজতর হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত