ইয়াকুব শাহরিয়ার

২৪ নভেম্বর, ২০২৩ ২৩:২৪

নির্বাচন এলেই সামনে আসেন পাশা!

সুনামগঞ্জ-৩ (শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর) নির্বাচনী এলাকায় মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরীকে নিয়ে প্রচলিত কথা আছে, তিনি সিজনাল পলিটিশিয়ান। বিএনপিসহ স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই মনে করেন নির্বাচন এলেই তিনি জনসম্মুখে হাজির হন; তা না হলে তার দেখা মেলা ভার। তার অবস্থান নিয়ে যখন মানুষের মাঝে এমন কথা উঠছে তখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন শাহীনুর পাশা। এ সাক্ষাৎকে নির্বাচনী ও দলীয় সাক্ষাৎ ভেবে পাশার প্রতি ক্ষুব্ধ জমিয়ত নেতারা। এ ঘটনায় তুমুল আলোচনা শুরু হয় জমিয়ত সমর্থিত নেতাকর্মীদের মাঝে। ভাইরাল হয় ছবি।

ছবি ভাইরাল হওয়ার একদিন পরেই অর্থাৎ শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বিকালে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলের কিছু নেতাকর্মীকে দলের সিদ্ধান্ত ও অবস্থানের বিরুদ্ধে আসতে প্ররোচিত করা ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরীকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলীয় সকল পদ স্থগিত করেছে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা শায়খ জিয়াউদ্দিনের বরাত দিয়ে নিজ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দলটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন।

প্রিয় নেতার এমন দ্বিচারিতার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন খোদ শাহীনুর পাশা চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ কর্মী সমর্থকেরা। তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও স্ট্যাটাস পোস্ট করে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। তারা বলছেন, কোনো ব্যক্তি দলের বাইরে গিয়ে নীতিবহির্ভূত কাজ করলে তার দায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেবে না। কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে শাহীনুর পাশার সকল পদ স্থগিত করায় খুশি হয়েছেন অনেকে। খুশি বিএনপির নেতাকর্মীরাও।

মাহমুদুল হাসানের নামের একজন শাহীনুর পাশা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে তার ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ‘লোকটাকে এমনিতেই আমার অপছন্দ ছিল। আলেমদের মান-সম্মান নিয়ে এমন খেলা করা উনাদের মতো লোকেরই সাজে।’

জমিয়তের আরেক নেতা মাওলানা খলিলুর রহমান তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শাহীনুর পাশা দালালি করবেন সেটা আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। তার সমালোচনা করায় কিছু কর্মী সমর্থকেরা আমার বিষোদগার করেছিলেন। তারা কি আমার চেয়েও বেশি চিনতেন...?’

সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তৈয়িবুর রহমান বলেন, একজন ব্যক্তি হিসেবে শাহীনুর পাশা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতেই পারেন। আমি বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছি। তবে, দলের শৃঙ্খলার বাইরে যাওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। যেহেতু দল করি, দলের সিদ্ধান্তের সাথে আমরা একমত।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সভাপতি শাহীনুর পাশা চৌধুরী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, ‘গতরাতে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ইসলামী ৯টি দলের সাক্ষাতে জমিয়তের নামটিও মিডিয়ায় এসেছে। আর তাতে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং জমিয়তপ্রেমীদের মনে কষ্ট পেয়েছেন। এটা আমার প্রিয় দল জমিয়তের প্রতিনিধিত্ব নয়, সাক্ষাৎকারটি আমার ব্যক্তিগত। যার সহযোগিতায় গিয়েছি, তিনিই আমাকে ১ দিন আগে বলেছেন, জমিয়ত নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল। সুতরাং ওখানে আমি জমিয়ত নেতা হিসেবে যাইনি। আমার মামলাগুলো উইথড্র করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে গিয়েছিলাম। দেশের সুপ্রিম অথরিটির কাছে যে কেউ সুযোগ পেলে তার আবদার পেশ করার জন্য যাওয়ার অধিকার রয়েছে। এরপরেও যারা কষ্ট পেয়েছেন, তাদের প্রতি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর ২০০৫ সালের উপনির্বাচনে চারদলীয় জোট থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এর পর চৌদ্দ মাসের জন্য এমপি হয়েছিলেন মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত