সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪ ১৮:১৫

কাউন্সিলর সেপুলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও বাসা দখল-চেষ্টার অভিযোগ প্রবাসী নারীর

সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

সিলেট নগরের বিমানবন্দর থানাধীন মজুমদারিতে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নারীর বাসা দখলের পায়তারা করছেন স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ তোফায়েল আহমদ সেপুল। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বাসায় অনধিকার প্রবেশ করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন তিনি।

এমন অভিযোগ করে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মজুমদারি ৮০ নম্বর বাসার সামছুদ্দিন গেনুর স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নাসরিন আহমদ।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ আমাদের সম্মান জানালেও ইদানীং সিলেটের একজন জনপ্রতিনিধি ও তার লেলিয়ে দেওয়া লোকজন আমার কাছে চাঁদা দাবি করছেন। তারা আমাকে প্রাণে মারা এবং বাসাটি ভেঙে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন।’

নাসরিন আহমদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হলেও দেশের টানে এবং এখানকার সম্পদ সুরক্ষার জন্য আমাকে প্রায়ই দেশে অবস্থান করতে হয়। কিন্তু সম্প্রতি আমার বাসার উপর নজর পড়েছে সিলেটের শেখ তুফায়েল আহমদ সেপুলের। ইদানীং তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পাওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে এই সেপুল নানা মাধ্যমে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করছিলেন। আমি তাতে অস্বীকৃতি জানাই। সম্প্রতি তিনি আমার বাসাটি জোরপূর্বক দখলের পাঁয়তারা শুরু করেন।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘সেপুল প্রায়ই দিনে এবং রাতে আমার বাসায় নিজের লোকজন নিয়ে উপস্থিত হয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি বরাবর চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তিনি বাসাটি দখল, ভাঙচুর ও আমার প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে তোফায়েল আহমদ সেপুল আরও ৪ থেকে ৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাসায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অনধিকার প্রবেশ করেন। এ সময় আবারও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।’

প্রবাসী নারী আরও বলেন, ‘চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে আমাকে হত্যার হুমকি দেন। তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ লাখ টাকা না দিলে আবারও আমাকে হত্যা করে লাশ গুমের হুমকি দেন। এমনকি, আমার বাসাটি ভাঙচুর করে ধুলায় মিশিয়ে দেয়ারও হুমকি দিয়ে চলে যান।’

নাসরিন আহমদ বলেন, ‘আমি একজন মহিলা মানুষ, একাকী নিজের বাসায় শান্তিতে বসবাস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাউন্সিলর তোফায়েল আহমদ সেপুলের কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না। শান্তিতে ইবাদত বন্দেগি করে নিজের দেশের মাটিতে শেষ জীবনটা কাটাতে চেয়েছিলাম। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের রক্ত পানি করে উপার্জিত সম্পদের সুরক্ষাও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধির এমন ত্রাস ছড়ানো কারণে তা আর সম্ভব হবে কি না, বুঝতেই পারছে না। আমার জীবন আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।’

নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় সচেতন মহল এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নেওয়ার এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বলেছেন। তাদের পরামর্শে বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রবাসীবান্ধব আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক ও সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘চাঁদা দাবির পাশাপাশি সম্প্রতি আমার বাসায় অস্থায়ীভাবে নির্মিত একটা টিনশেডের বাসার বর্ধিতাংশ ভেঙে দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এতে যেমন কাউন্সিলর সেপুলের মদদ ছিল, তেমনি পাশের ৮১ নম্বর তিন তলা বাসাটি বিধিবহির্ভুতভাবে তৈরি হলেও সিসিক কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বাসার সামনে সীমানা প্রাচীর না দেওয়ায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ ব্যাপারে গত বছরের ৩ অক্টোবর মেয়র বরাবর একটি আবেদনও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৪ মাসেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

তিনি বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জীবন ও সম্পদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মেয়রের সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একইসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ এবং সেক্রেটারি জাকির হোসেনেরও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

উল্লেখ্য, শনিবার সিলেট প্রেসক্লাব থেকে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক ইমেইলে সংবাদ সম্মেলনের এই তথ্য জানানো হয়। উল্লিখিত বিষয়ে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্রভাবে অনুসন্ধান এবং কারো কোন বক্তব্য নেওয়া হয়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত