সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১২ এপ্রিল, ২০২৪ ১৮:১৩

জলাবদ্ধতায় ডুবছে হাওরের ধান

বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসময়ে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে হাওরের বোরো ধান। বৃষ্টির পানি বের হওয়ার পথ না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে কৃষকের সামনেই ডুবছে তাদের সোনালী ফসল।

ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক একর কাঁচা ধান। দু-একদিনের ভেতর পানি বের করা না গেলে অন্তত দুইশ একর জমির ধান একেবারে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা কৃষকদের।  

সুনামগঞ্জ জেলার ৯৫টি হাওরের অন্যতম বৃহৎ দেখার হাওর। এই হাওরে সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষাধিক কৃষককের ২৪ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এই হাওরে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে এবং ফলনও হয়েছে ভাল। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের দরিয়াবাজ, কলাউড়া, ইছাগড়ি, হুরমত নগর, রউয়ারপাড়, গুয়ারছড়া, হরিপুরসহ ৭টি গ্রামের কয়েক শ কৃষকের কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধান পুরোপুরি কাঁচা থাকায় সেগুলো কাটতেও পারছেন না তারা।

অনেক কৃষক তার কাঁচা ধান তলিয়ে যাওয়ায় সেগুলো কেটে ফেলছেন। কৃষকরা জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে বলছেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলার মহাসিং নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ফসল রক্ষা বাঁধকে। হাওরের বৃষ্টির পানি নদীতে নামার পথে বাঁধ দেওয়ায় প্রত্যেক বছর এই হাওরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ফসলহানী হয়।

দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে ফসল রক্ষার দাবি কৃষকদের। একই সঙ্গে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে মহাসিং নদীর বাঁধে স্লুইজ গেইট নির্মাণ করার দাবি জানান তারা।

আব্দুল্লাহপুর গ্রামের ননী গোপাল দাস বলেন, আমার ৩ একর জমি পানির তলে। ঋণ করে জমিতে ধান চাষ করেছি। আমার পুরো পরিবার এ ফসলের উপর নির্ভরশীল। ধান হারিয়ে আমি সাগরে ভেসে গেছি। কিভাবে ঋণ শোধ করব আর কীভাবে বাঁচব জানি না।

দরিয়াবাদের নুর আহমেদ বলেন, দেখার হাওরে এই অংশে তিনশ হাল জমি আছে। আর দশ পনেরো দিন পর ধান কাটা যেত। এমন সময় বৃষ্টি ও বিলের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে আমাদের ধান। মহাসিং নদীতে হাওরের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের জীবন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত পানি নামানোর ব্যবস্থা না করলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।

কলাউরা গ্রামের জুয়েল আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা হলে আমাদের বাঁচার উপায় নেই। যদি পানি বের করার ব্যবস্থা না করা হয় আমরা ডিসি অফিস ঘেরাও, মানববন্ধনসহ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।

মোল্লাপাড়া ইউপির সাবেক ইউপি সদস্য রেদওয়ান আলী রায়হান বলেন, আমরা এক ফসলের উপর নির্ভরশীল। এই ফসল দিয়ে সারা বছর জীবন চলে। আমাদের ফসল চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে। যেভাবে হোক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে আমাদের রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হোক।

ফসল তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে হাওর পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, প্রতি বছর বৃষ্টিতে এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গত বছর শান্তিগঞ্জের মাধ্যমে কিছুটা পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষকরা ফসল ঘরে উঠাতে পেরেছিল। আমরা চেষ্টা করব পানি নিষ্কাশনের। যাতে কৃষকরা ফসল তুলতে পারে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাব। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারি সহযোগিতা পাবেন।

জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বললেন, দেখার হাওরের জলাবদ্ধ এলাকার গ্রামবাসী ও কৃষকদের দাবি পানি নিষ্কাশন করা হলে ফসল রক্ষা পাবে। কৃষকদের প্রস্তাব অনুযায়ী পানি নিষ্কাশনের জায়গাটি পরিদর্শন করব। পরিদর্শন করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

প্রসঙ্গত, এ বছর সুনামগঞ্জ জেলায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২৭০ টন বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত