এস আলম সুমন

২০ মার্চ, ২০১৬ ১৯:৩৯

জুড়ীতে নদী দখল করে মৎস্য খামারের বাঁধ নির্মাণ!

জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের নয়াগ্রাম এলাকায় জুড়ী নদীর একাংশ দখল করে স্থানীয় এক ব্যক্তি মৎস্য খামারের বাঁধ নির্মাণ করেছেন। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গত ৮ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নয়াগ্রামের বাসিন্দা রফিক মিয়া সম্প্রতি জুড়ী নদীর এক পাশের বেশ কিছু জায়গা দখল করে মাটিভরাট করে মৎস্য খামারের বাঁধ স্থাপন করেছেন। এতে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানিপ্রবাহ ও নৌকা চলাচল ব্যাহত হবে। এছাড়া পানির অভাবে নদীর বিপরীত পাশের জমি ও বসত বাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পলিতে ভরাট হয়ে পড়ায় নদীটি ছোট খালের মতো হয়ে গেছে। নদীর এক পাশে ইংরেজি ‘ইউ’ আকৃতির বেশ কিছু জায়গায় মাটি ফেলে বাঁধ স্থাপন করা হয়েছে। নদীর পূর্ব পাড়ে পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম আমতৈল ও পশ্চিম বাছিরপুর গ্রাম এবং পশ্চিম পাড়ে নয়াগ্রাম।

পশ্চিম আমতৈল গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মতিন ও পশ্চিম বাছিরপুরের ফজলু মিয়া বলেন, নদীটি আরও পূর্ব দিকে (নয়াগ্রামের দিকে) ছিল। ভরাট হয়ে যাওয়ায় ছোট হয়ে গেছে। বাঁধের অনেক ভেতরে নদী ঢুকে পড়েছে বলে তাঁরা জানান। নয়াগ্রামের জহিরুল ইসলাম বলেন, বর্ষায় এ নদী দিয়ে ইঞ্জিনচালিত বড় বড় নৌকা চলাচল করে। শুকনো মৌসুমে লোকজন নদীর পাড় দিয়ে বিভিন্ন কাজে চলাচল করেন। নদীটি দখলদারদের কবল থেকে রক্ষা হোক-সেটাই আমরা চাই।

রফিক মিয়া ও তার ছেলে আরিফ হোসেন বলেন, নদীঘেঁষে তাঁদের আট বিঘা জমি আছে। সেখানে মাছের খামার করবেন তাঁরা। তাই, মাটি ফেলে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে তাঁরা বলেন, তদন্তে এটা প্রমানিত হলে জায়গা ছেড়ে দেওয়া হবে। নদী ঠিক জায়গাতেই আছে বলে তাঁরা দাবি করেন।

উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা যায়, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও’র নির্দেশে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার চান্দ আলী বেগ ও জায়ফরগর ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রকিব আহমদ ৯ মার্চ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এ ব্যাপারে ওই দুই কর্মকর্তা গত ১৪ মার্চ সোমবার ইউএনও বরাবর একটি প্রতিবেদন দেন।

এতে বলা হয়, নয়াগ্রাম মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানের এস এ ১৫১১ ও ১১০৪ নম্বর দাগে সরকারি খাস নদীরকম ভূমিতে আনুমানিক ৪০ ফুট দীর্ঘ ও ৫ ফুট চওড়া জায়গায় নয়াগ্রামের রফিক মিয়া অবৈধভাবে মাটিভরাট করে বাঁধ স্থাপন করেছেন। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত এবং নদীর বিপরীত পাড়ে অবস্থিত আমতৈল মৌজায় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া বাঁধ নির্মাণের ফলে পানিনিস্কাশন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার দিয়ে জরিপ করে নদীরকম ভূমি চিহ্নিত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।

জুড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এএসএম ইবনুল হাসান মোবাইলে বলেন, “প্রতিবেদনটি পেয়েছি। পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত