দেবব্রত চৌধুরী লিটন

২৯ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০১

স্কুলের ‘অতিরিক্ত চাপে’ হতাশায় ভুগতেন সুবর্ণা, অভিযোগ পরিবারের

'স্কুলে চাকুরী করতে গিয়ে খুবই যন্ত্রণা পেয়েছে আমার মেয়েটি। স্কুলের কাজের চাপ ছিল অত্যাধিক। খুবই কড়াকড়ি ভাবে স্কুলটি পরিচালিত হয়। সুবর্ণা সংস্কৃতিকর্মী হওয়ায় স্কুলের অনেকেই তাকে আড়চোখে দেখতো। তাই স্কুলটিতে চাকুরীর কারণে হতাশায় ভুগতো।'- এমনটি বললেন আত্মহননকারী নৃত্যশিল্পী সুবর্ণা সাহার মা মমতা সাহা।

সুবর্ণা সাহা নগরীর খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। বুধবার রাতে নিজ বাসা থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুবর্ণার মা মমতা সাহাও নগরীর রসময় মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।

বৃহস্পতির রাতে নিজ বাসায় মমতা সাহা সিলেটটুডেকে বলেন, বুধবার মৃতুর ঘন্টা দুয়েক আগে অসুস্থ সুবর্ণাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাই। চিকিৎসকও জানিয়েছিলেন, সে হতাশায় ভূগছে।

মমতা বলেন, হতাশা এই চাকুরীর জন্যই হয়েছে। সুবর্ণাকে একাধিকবার চাকরী ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলেও জানান মমতা।

সুবর্ণার বড় বোন সুমনা জানান, স্কুলে ছুটি ছিল না সুবর্ণার। অন্য শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত চেয়ার থাকলেও সুবর্ণাকে বসতে হতো অতিরিক্ত চেয়ারে। এমনিতেই পায়ে সমস্যার কারণে শারিরীক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। চাপা স্বভাবের কারণে কাউকে কিছু বলতোও না।

বুধবার শারিরীক অসুস্থতার কারণে স্কুলে যেতে পারেনি। এনিয়ে অধ্যক্ষের সাথে মোবাইল ফোনে সুবর্ণার কথা হয় জানিয়ে সুমনা বলেন, হয়তো এসময়ে অধ্যক্ষ সুবর্ণাকে স্কুলে যাওয়ায় চাপ দিয়েছিলেন। তাই ছুটির আবেদন লিখে বুধবার সন্ধ্যায় মাকে আমার বাসায় পাঠিয়েছে আবেদনটি বৃহস্পতিবার স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এসময় ফাঁকা ঘর পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সুবর্ণা।

আরও পড়ুন- নগরীতে ওড়নায় ফাঁস দিয়ে নৃত্যশিল্পীর আত্মহত্যা

সুমনা বলেন, প্রতিবছর আনন্দলোকের বর্ষবরণে অনুষ্ঠানে সুবর্ণা অংশগ্রহণ করে। এবার সে আনন্দলোকের বর্ষবরণের যেতে পারেনি স্কুলে চাকুরীর জন্য। এজন্য আক্ষেপের শেষ ছিল না তাঁর। সেদিন অনেক কেঁদেছে সুবর্ণা।

স্কুলের অতিরিক্ত চাপ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ কর্ণেল (অব) নাজমুল ইসলাম তাপাদার সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সুবর্ণা জানুয়ারি মাসে চাকরিতে যুক্ত হয়েছে, এরমধ্যে ছুটি কি?

অসুস্থ হলেও ছুটি না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিসে এসে দেখে যান।

সুবর্ণার মৃত্যুর খবর পেয়ে খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষক বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁদের বাসায় যান। এসময় এই শিক্ষকদের কাছেও সুবর্ণার মা স্কুলের অতিরিক্ত চাপের কথা জানান।  

স্কুলটির একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খাজাঞ্চিবাড়ি স্কুলে সপ্তাহে ৫ দিন ক্লাস হয়। এই ৫ দিনে একজন শিক্ষককে অন্তত ২৫টি ক্লাস নিতে হয়। এছাড়া অতিরিক্ত ক্লাসের চাপ তো আছেই।  কথায় কথায় শিক্ষকদের শোকজ করা হয়ও বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

তাঁদের অভিযোগ, বছরে ১৫ দিন ঐচ্ছিক ছুটি নেয়ার সুযোগ আইনে থাকলেও অসুস্থতার জন্য কোন ছুটি পাওয়া যায় না। সুবর্না সাহাও অসুস্থতার জন্য ছুটি চেয়ে পাননি।

কোনো শিক্ষকক স্কুলে যেতে এক সেকেন্ড দেরী করলেও তাকে ছুটির পর এক ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়। এক মাসে কারো তিন দিন দেরি হলে একদিনের বেতন কেটে রাখা হয় বলেও জানান তাঁরা।

এই শিক্ষকদের অভিযোগ, শুক্র ও শনিবার স্কুল বন্ধ থাকলেও প্রায় প্রতি শনিবারেই ট্রেনিং ও মিটিং এর জন্য শিক্ষকদের স্কুলে যেতে হয়। নির্ধারিত কর্মঘন্টার বাইরে অতিরিক্ত কাজের জন্য দেয়া হয় না কোন বাড়তি টাকা।

আরও পড়ুন- চোখের জলে সুবর্ণা সাহাকে শেষ বিদায়

উল্লেখ্য, সুবর্ণা সাহা সিলেটের নৃত্য সংগঠন নৃত্যশৈলীর নৃত্যশিল্পী ও কথাকলি থিয়েটারের নাট্যকর্মী ছিলেন।

তিনি রসময় স্কুল থেকে প্রাইমারি, সিলেট অগ্রগামি বালিকা স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক, সিলেট মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর সিলেট এমসি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন সুবর্ণা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত