ওসমানীনগর প্রতিনিধি

০৯ মে, ২০১৬ ১৮:৫০

ওসমানীনগরে ৩ দলের পথের কাঁটা ৬ বিদ্রোহী

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

ওসমানীনগরে আগামী ২৮ মে অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে ভোট ভাগাভাগির আশংকা করছেন বড় দলগুলোর নেতা-কর্মীরা।

মনোনয়ন পত্র দাখিলের পর থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীদের সাথে তাল মিলিয়ে নিজ নিজ এলাকায় নিরব প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও ব্যতিক্রমী প্রচারণায় দলীয় প্রার্থীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অনেক ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীর চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর শক্ত অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ওসমানীনগরে আওয়ামীলীগের ৩জন, বিএনপির ২জন ও জাতীয় পাটি থেকে ১জন বিদ্রোহী প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে জামাত নেতা আনহার মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির ৮জন করে এবং জাতীয় পাটির ৬জন প্রার্থী রয়েছেন। বাকিরা স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। সব মিলিয়ে ওসমানীনগরে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিলকারীর সংখ্যা ৩৪। এদিকে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে দাঁড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি।
 
আ’লীগ থেকে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীরা হচ্ছেন- প্রবাসী জিএম কিবরিয়া, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক চেয়ারম্যান কবির উদ্দিন আহমদ, শেরওয়ান আহমদ, বর্তমান চেয়ারম্যান মখদ্দুছ আলী, সাবেক চেয়ারম্যান পীর মজনু মিয়া, প্রবাসী অরুণোদয় পাল ঝলক, আবদুল হামিদ ও নেফা মিয়া। বিএনপি থেকে মনোনয়ন দাখিল করেছেন এইচএম রায়হান আহমদ, আবদুর রব, কয়েছ আহমদ চৌধুরী, সাজ্জাদুর রহমান, সৈয়দ কওছর আহমদ, ইমরান রব্বানী, এসটিএম ফখর উদ্দিন, মুক্তার আহমদ বকুল। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন দাখিল করেছেন, আজিজুর রহমান, মুহিবুর রহমান মুহিব, আব্দুল মালিক, আশরাফ মিয়া, ছৈদুল ইসলাম, কাজী তুহেল আহমদ। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নোপত্র জমা দিয়েছেন তাজিবুর রহমান কিলু, আনহার মিয়া (জামাত), সৈয়দ এনামুল হক, আবদুস ছালাম, সাবেক চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন আহমদ নুনু, আব্দুল মালিক।

এদিকে আ’লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বুরুঙ্গা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান প্রবাসী এমজি রাসুল খালেক আহমদ, পশ্চিম পৈলনপুরে প্রবাসী আবদুল হাফিজ এ মতিন গেদাই এবং উছমানপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ময়নুল আজাদ ফারুক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। গোয়ালাবাজার ইউনিয়নে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান প্রবাসী আতাউর রহমান মানিক ও উমরপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আবদুস ছালাম ময়না।

২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অভ্যস্তরীণ কোন্দলের কারণে আওয়ামীলীগের দূর্গ বলে পরিচিত ওসমানীনগরে আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের ভরাডুবি ঘটেছিলো। ৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছিলো আওয়ামীলীগ। এমনকি বিএনপির দুই নতুন মুখের কাছে ধরাশায়ী হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান এবং সাবেক সভাপতিও। বিগত নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ক্ষমতার অপব্যবহারে জনপ্রিয়তা হ্রাস ছিলো আওয়ামীলীগের ভরাডুবির অন্যতম কারণ। বিগত সময়ের তুলনায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে পারস্পরিক হানাহানি এবং মামলা-পাল্টা মামলার ঘটনাও ঘটেছে।

ওসমানীনগর উপজেলা ঘোষণার আগে সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় গ্রুপিং রাজনীতির বলি হয়েছিলেন তৎকালীন বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান মফুর। প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের কিছু নেতাকর্মী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে মফুরকে পরাজয় বরণ করতে হয়। এর জেরে প্রকাশ্যে রূপ নেয় আওয়ামীলীগের গ্রুপিং রাজনীতি।

অন্যদিকে ওসমানীনগরে বিএনপির তেমন অবস্থান না থাকলেও গত উপজেলা নির্বাচনে আবদাল মিয়া বিশাল ভোটের ব্যবধানে মোস্তাকুর রহমান মফুরকে পরাজিত করে বালাগঞ্জ (ওসমানীনগর উপজেলা হওয়ার পূর্বে) উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। যদিও আব্দাল মিয়ার এ বিজয়কে আওয়ামীলীগের একটি গ্রুপের বিশ্বাস ঘাতকতার ফসল বলেই অনেকে মনে করেন।

এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হবার পর খেই হারিয়ে ফেলা বিএনপি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ হলেও নির্বাচনের কয়েকদিন পরেই তাদের মধ্যে নানা বিভাজন দেখা দেয়। ২০১৫ সালে গঠিত ওসমানীনগর থানা কমিটি এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। দলের অনেক নেতা-কর্মী কমিটি মেনে নিতে পারেনি। তারা প্রকাশ্যে দু-ভাগ হয়ে পড়ে। বর্তমান ইউনিয়ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েও মতবিরোধ দেখা দেয়। দলের হাইকমান্ড বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে সমঝোতার উদ্যোগ নিলেও কার্যত তা ব্যর্থ হয়।

এ ব্যাপারে ওসমানীনগর থানা বিএনপি সভাপতি সৈয়দ মোতাহির আলী দলের অনেক সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন দল পরিচালনার ব্যাপারে অনেকের ভিন্নমত থাকতে পারে কিন্তু দলীয় প্রতীকে দলীয় প্রার্থীর জয়ের লক্ষ্যে সবাই এক যোগে কাজ করছে। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শহীদ জিয়ার আদর্শের অনুসারী সবাই একমঞ্চেই অবস্থান করছে। কেউ দলীয় নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে দাঁড়ালে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওসমানীনগর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, আওয়ামীলীগ বিশাল একটি দল। দলে অনেকের অনেক মত থাকতে পারে তবে তা গ্রুপিং বা কোন্দল হিসেবে চিহ্নিত করা ঠিক হবে না। ওসমানীনগর আওয়ামীলীগে কোন গ্রুপিং নেই। তৃণমূলের রায়ে ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রার্থী চুড়ান্ত করা হয়েছে। নৌকার জয় নিশ্চিত করতে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। যারা বিভাজনের পথে হাটছেন তাদের বিরুদ্ধে দলীয় নীতিমালার আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত