নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ মে, ২০১৬ ২৩:১১

রাগীব আলীর দখল থেকে তারাপুর চা বাগান ফিরিয়ে আনতে রবিবার অভিযান

শিল্পপতি রাগীব আলীর দখল থেকে সিলেটের তারাপুর চা বাগান ফিরিয়ে আনতে রবিবার অভিযান চালাবে প্রশাসন। সিলেটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে রবিবার সকালে তারাপুর চা বাগান উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।

প্রায় হাজার কোটি টাকার এই দেবোত্তোর সম্পত্তি দীর্ঘদিন থেকে রাগীব আলীর দখলে ছিলো। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের এক রায়ে বলা হয়, রাগীব আলীর প্রতারণার মাধ্যমে এ বাগান দখল করেছেন। ছয় মাসের মধ্যে চা বাগানটি দখলমুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন আদালত।

উচ্চ আদালতের রায়ে চা বাগান ধ্বংস করে গড়ে উঠা রাগীব রাবেয়া চা বাগানসহ সকল স্থাপনা সরিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

রাগীব আলীর পুত্র আব্দুল হাইয়ের দায়েরকৃত এক রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চার বিচারক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত ১৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত এ রিটের রায় ঘোষণা করেন।

আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতেই রবিবার সকালে এই চা বাগান উদ্ধারে অভিযান চালাবে প্রশাসন। তবে প্রথম দফায় অভিযানে কেবল চা বাগান উদ্ধার করা হবে। পরবর্তীতে চা বাগানে গড়ে উঠা স্থাপনাগুলো অপসারণ করা হবে।

এই চা বাগান দখল করে রাগীব আলী নিজের নামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ৩৩৭ টি প্লট তৈরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এসব প্লটে গড়ে উঠেছে বহুতল আবাসন ও বিপণী বিতান।

অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রবিবার সকালে আমরা বাগান দখলমুক্ত করতে অভিযানে যাবো। এদিন কেবল বাগান দখলমুক্ত করা হবে। পরবর্তীতে বাগানের স্থাপনা অপসারণে অভিযান চালানো হবে। আদালতের বেঁধে দেওয়া ছয় মাস সময়সীমার মধ্যেই স্থাপনাগুলো অপসারণ করা হবে বলে জানান তিনি।

জানা যায় আদালতের রায়ে, চা-বাগানে গড়ে তোলা আবাসিক প্রকল্প এবং সম্পত্তির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে অবৈধ, এ বাগানকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়াসহ ১৭টি নির্দেশ দিয়ে রায় প্রদান করা হয়।

তারাপুর চা বাগানে নির্মিত সব অবকাঠামো ৬ মাসের মধ্যে অপসারণ করে সে জায়গায় চা বাগান করার আদেশ দেওয়া হয় এই রায়ে। রিট আবেদনকারীরা তা করতে ব্যর্থ হলে পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের সহায়তা নিয়ে স্থাপনা অপসারণের কথাও উল্লেখ করা হয় রায়ে। তবে এ খাতে ব্যয় হওয়া অর্থ জেলা প্রশাসক রিট আবেদনকারীদের কাছ থেকে গ্রহণ করবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, জেলা প্রশাসক আপিল বিভাগে প্রদত্ত রায়ের আদেশগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করবেন। রিট আবেদনকারীরা যদি এ আদেশ না মানে সে ক্ষেত্রে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। উপযুক্ত জায়গায় মেডিকেল কলেজটিকে স্থানান্তর করবেন। রিট আবেদনকারীদের সমস্ত ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করবেন এবং মেডিকেল কলেজের জন্য সাময়িক লীজ নেয়ার জন্য অর্থ প্রয়োজনে এই সব জব্দকৃত একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। রিট আবেদনকারীরা যদি চা বাগান পুন:নির্মাণে ব্যর্থ হন সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক একটি কমিটি গঠন করে এ কাজটি সম্পন্ন করবেন। এ বাবতে যে অর্থ ব্যয় হবে তা তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি থেকে আদায় করবেন।

এই রায়ে বলা হয়েছে, রাগীব আলী কর্তৃক সরকারের থেকে ক্ষতিপূরণ বাবত ৩০ লাখ ৭৬ হাজার ১৮৯ টাকা উত্তোলন সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত। এই আদেশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে আইনানুগ সেবায়েতের অনুপস্থিতে দেবীর নামে নির্ধারিত একাউন্টে উত্তোলিত টাকা জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন সুপ্রিমকোর্টের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

রায়ে আরো বলা হয়েছে, তারাপুর চা বাগান দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে কোনভাবে সেবায়েত বা সেবায়েতের মনোনীত ব্যক্তি কর্তৃক স্থানান্তরিত হতে পারবে না। অভিযুক্ত সেবায়েত কর্তৃক ৯৯ বছরের জন্য তারাপুর চা বাগানকে স্থানান্তর বা লীজ প্রদান করা সম্পূর্ণ ভাবে আইন বিরুদ্ধ। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক (ট্রাস্টের) দেবীর মূর্তি প্রথম স্থাপিত জায়গায় স্থাপিত হবে। রিট আবেদনকারী আব্দুল হাই ও রাগীব আলীকে তারাপুর চা বাগানের খালি জায়গায় দেবী মোতায়েনের কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ করতে আদেশে বলা হয়।

আপিল বিভাগের ওই রায়ে সেবায়েতের অনুপস্থিতিতে সিলেট শহরের ১০ (দশ) জন নেতৃস্থানীয় সেবায়েত বা পুরোহিতের পরামর্শক্রমে সেবায়েত নিয়োগ দানের জন্য বলা হয়েছে। রিট আবেদনের ১০ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত চা রপ্তানি বাবত আয়ের ৫ কোটি টাকা সেবায়েতের কাছে ফেরত প্রদানেরও নির্দেশ দেয়া হয়।

একই সাথে কোতোয়ালী থানার ১১৭ নং মামলাটি চালু করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত