বানিয়াচং প্রতিনিধি

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৭:১১

বানিয়াচংয়ে লোডশেডিংয় ও ভূতুড়ে বিলে চরম ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

শায়েস্তাগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন বানিয়াচং উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের লাগামহীন ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে গ্রাহকরা। শুরু হয়েছে লাগাতার লোডশেডিং। লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ উৎপাদনশীল সকল সেক্টরে নেমে এসেছে স্থবিরতা।

অপরদিকে আগস্ট মাসের বিদ্যুৎ বিলের কপি হাতে পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। বিগত কয়েক মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে হঠাৎ বিলের পরিমাণ দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রাহকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

একাধিক গ্রাহকদের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি লোকসান দেখিয়ে একদিকে যেমন সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে, অন্য দিকে গ্রাহকের মাথায় ভৌতিক বিলের বোঝা চাপিয়ে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা। এক কথায় তারা সেবার নামে গ্রাহকের সাথে করছে চরম প্রতারণা।

পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক জমির উদ্দিন জানান, মে,জুন ও জুলাই মাসে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ কম ছিল। কিন্তু আগস্ট মাসের বিল দুই তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিল পরিশোধে তিনি চরম বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছেন।

আরেক গ্রাহক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সোলায়মান খান জানান, জুন ও জুলাই মাসে তার ৩০০ থেকে ৪০০’ টাকা বিল এসেছিল। কিন্তু আগস্ট মাসে তার দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৮৯৪ টাকা করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী সুমন গাজী জানান, যেখানে আমার দোকানে বিল ১ হাজারের ভিতরে থাকার কথা গত দুই মাসে বিদ্যুৎ বিল ৪ হাজার টাকার উপরে পরিশোধ করেছি। এক মাসের বিল আরেক মাসের বিলের সাথে যোগ করে দেয়। তাই বিলের পরিমাণ বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে আবেদন থেকে শুরু করে সংযোগ পর্যন্ত নানা সমস্যা দেখিয়ে গ্রাহকদের হয়রানি করে টাকার বিনিময়ে সংযোগ মিলছে পল্লী বিদ্যুতের।

নতুন নিয়ম আর বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হয় পল্লী বিদ্যুতের কিছু অলিখিত দালালদের মাধ্যমে। দালাল ব্যতীত কোন গ্রাহক যদি নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করেন, তাহলে সে সংযোগ কখন মিলবে বা আদৌ মিলবে কিনা এমন প্রশ্ন এখন বিদ্যুতের নতুন সংযোগ প্রত্যাশীদের ।

গ্রাহক নজরুল ইসলাম জানান, আগস্ট মাসের বিলের কপি হাতে পেয়ে একপ্রকার হতবাক হয়েছি। আমার মতো শতশত গ্রাহক হাজার হাজার টাকা ভূতুড়ে বিল পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমিতির একাধিক গ্রাহক জানান, মাঠ পর্যায়ে মিটার রিডাররা অনেক সময় গ্রাহকের বাড়িতে না গিয়ে আন্দাজের উপর রিডিং উঠায়। সেই চাপ সামলাতে গিয়ে সাধারণ গ্রাহককে হিমশিম খেতে হয়। সমিতির ভূতুড়ে বিলের জন্য গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন।

অপরদিকে প্রচণ্ড গরমে দিনে ৯ থেকে ১০ বার লোডশেডিং হচ্ছে। ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, দিনে-রাতে লোডশেডিংয়ের কারণে পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি রাতের বেলায়ও ঠিক মতো ঘুমানো যাচ্ছে না লোডশেডিংয়ের ফলে।

এ বিষয়ে বানিয়াচং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মোহাম্মদ আবুজাফর জানান, সমিতির প্রয়োজন ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। পাওয়া যাচ্ছে ৮.৫ মেগাওয়াট। আবার মাঝে মধ্যে ওভারলোডের কারণে মেইন লাইনে সমস্যা হয়। এই সমস্যা দূর করতে একটু সময় লাগে।

অতিরিক্ত বিলের বিষয়ে তিনি জানান, বিদ্যুৎ ব্যবহার বেশি হওয়ায় বিল বেশি আসতে পারে। তবে অসামঞ্জস্য কিছু ত্রুটি থাকলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত