নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ জুলাই, ২০১৮ ১৩:৫৪

দিন-রাতে দুই দলে দুই চিত্র, দুই মত

দিনে আরিফুল হক চৌধুরী ভোট কারচুপির অভিযোগ এনেছিলেন, কারচুপি বোঝাতে এও জানিয়েছিলেন নির্বাচিত হলেও ভোট বাতিল ও পুনঃনির্বাচন চান তিনি। এদিকে, ঠিক দিনে বিপরিত অবস্থায় ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। জানিয়েছিলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। বিএনপির দাবি ভিত্তিহীন, এও অভিযোগ ছিল তার।

তবে রাতে দৃশ্যপট পুরো পালটে যায়। আওয়ামী লীগ দাবি করে কারচুপির আর আরিফুল হক চৌধুরী জানান, জনগণের জয় হয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

সোমবার সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনায় শেষ হয়। এরই মধ্যে ২ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। স্থগিত দুই কেন্দ্রের ভোটসংখ্যা ৪,৭৮৭।

নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ১৩৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রের ঘোষিত ফলে ধানের শীষ প্রতীকে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৯০ হাজার ৪৯৬। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কামরানের প্রাপ্ত ভোট ৮৫ হাজার ৮৭০। দু’জনের ভোটের ব্যবধান ৪ হাজার ৬২৬।

ঘোষিত ফলে ভোট ব্যবধান স্থগিত কেন্দ্রের ভোটের চাইতে কম হওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেও কাউকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি।

তবে দিনের শুরুর চিত্র ছিল ভিন্ন। ভোট শুরুর পর থেকেই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনেন আরিফুল হক চৌধুরী। এসব অভিযোগ নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনে জয়ী হলেও ভোট বাতিল ও পুনঃনির্বাচন চান তিনি।

বিএনপির প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী অভিযোগ করেন, মোট ৪১ কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ভোট শুরুর পর থেকেই বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলে আসছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। সিলেটে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। কেন্দ্র দখল বা ভোটের পরিবেশ নিয়ে বিএনপির অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে কামরান বলেন, ‘জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসছে।’

সন্ধ্যা থেকে নগরীর মির্জাজাঙ্গালস্থ আওয়ামী লীগের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় থেকেও দলীয়ভাবে প্রাপ্ত বিভিন্ন কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা হচ্ছিল। কিন্তু রাত নয়টার দিকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ফল ঘোষণা স্থগিত করে দলীয় নেতাকর্মীদের ইসি অফিসে গিয়ে কারচুপি রুখতে চাপ প্রয়োগের আহবান জানানো হয়।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল স্থগিতের লিখিত আবেদনে বলেন, স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের এজেন্টদের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের সাথে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফলে ১০-১৫ হাজার ভোটের ব্যবধান রয়েছে। এতে করে নির্বাচনের ফলাফল না ঘোষণা করে পুনঃগণনার মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণার আবেদন করা হয়।

রাতে নির্বাচন কমিশন থেকে ১৩২ কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল ঘোষণা শেষে আবুল মাল আব্দুল মুহিত কমপ্লেক্সে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী সার্ভার স্টেশনে হাজির হয়ে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নানা ষড়যন্ত্র আর ব্যাপক সন্ত্রাসের পরও জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। অনেক বাধা বিপত্তির পরও জনগণ প্রমাণ করেছে, সিলেটবাসী কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না।

আরিফ বলেন, এই বিজয় আমার না, এই বিজয় মহানগরবাসীর, এই বিজয় গণতন্ত্রের। এই বিজয় সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে।

আরিফুল হক আরও বলেন, নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবেই। তবে সিলেটে রাজনৈতিক সম্প্রীতি রয়েছে। আমি আহ্বান জানাবো- আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সিলেটকে এগিয়ে নিয়ে যাই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত