জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, বিশ্বনাথ

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০১:৩৩

পাথরে দাঁড়িয়ে দেখে এলাম ‘পাহাড় আর মেঘের আলিঙ্গন’

ভ্রমণ সবসময়ই আনন্দময় ও স্মৃতিময়। আর যদি দলবদ্ধ ভ্রমণ হয় তাহলে সেই ভ্রমণ হয়ে উঠে আরও প্রাণবন্ত।

অনেকদিনের ইচ্ছে, সিলেটের বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ মিলে এক সঙ্গে কোথাও বেড়ানোর। কিন্তু তারপরও সময় আর নানা প্রতিকোলতার কারণে তা আর হয়ে উঠেনা। তবে, এবার প্রায় সকলেরই ইচ্ছা এক সঙ্গে বেড়ানোর। প্রেসক্লাবের বৈঠকেও একই সিদ্ধান্ত। কিন্তু কোথায় যাওয়া হবে এনিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অনেকেরই ইচ্ছে দূরে কোথাও। আবার কারো কারো মন্তব্য কাছে কোথাও। যদিও সাদা পাথর দেখতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পর্যটকরা সিলেটের ভোলাগঞ্জে আসেন। কিন্তু সেখানে যাবার কারও ইচ্ছে নেই। শেষ পর্যন্ত সম্মিলিত সিদ্ধান্ত মতে স্পট নির্ধারণ করা হলো ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর।

অবশেষে সংবাদের পিছনে ছুটে চলা সিলেটের ঐতহ্যবাহী বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা প্রস্তুতি নিলেন। আর তাতে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে ভ্রমণ আনন্দকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিলেন ‘ডেইলি সিলেট সংবাদ ডটকম’ নামে নিউজ পোর্টালের প্রকাশক বিশ্বনাথের কৃতি সন্তান যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোহাম্মদ মোহাব্বত শেখ।

দিনটা ছিল শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর)। ওইদিন সকাল ৯টায় প্রেসক্লাব কার্যালয়ে মিলিত হয়ে সবার স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণে এক প্রাণবন্ত সকাল হয়ে উঠলো মূহুর্তেই। ভ্রমণের জন্য বানানো প্রেসক্লাবের টিশার্ট পরে স্পন্সর দাতার (চাচাতো ভাই) প্রতিনিধি ২জনসহ প্রেসক্লাবের ১২ জন সদস্য মিলে মোট ১৪জন এক সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। বাহন দু’টি নোহা গাড়ি। হই হুল্লোড়ে কখন যে পৌছলাম কেউই বুঝে উঠতে পারেন নি। ঠিক পৌনে ১২টায় গাড়ি থামলো কোম্পানীগঞ্জের টুকের বাজারের রাজমহলের সামনে পৌঁছালাম।

সেখানে আমাদের জন্য আপেক্ষমান কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিনিধি সাংবাদিক কবির আহমদ আমাদের ফুলেল স্বাগত জানালেন। আমাদের সঙ্গ দিতে সাথে যোগ দিলেন তিনিও। নৌকাঘাটে গাড়ি পার্কিং করতেই আমাদের স্বাগত জানালেন জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বড়ভাই বিলাল হোসেন।

শুরুতেই তার আমন্ত্রণে চা-চক্রে পরিচয় পর্ব আর আলাপচারিতা ও ছবি তোলায় কাঠলো আরও কিছুক্ষণ। তারপর তার নির্ধারিত নৌকা দিয়েই সেই কাঙ্খিত স্থানে যাত্রা শুরু। এবার যার যার মত করে ছবি তোলায় সবাই ব্যস্ত।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী ভোলাগঞ্জের ধলাই নদের উৎসমুখ জিরো পয়েন্টেই সাদা পাথর এলাকাটির অবস্থান। সেখানে রয়েছে প্রকৃতির এই রূপের আধাঁর। দেখলাম ধলাই নদে কম পানিতেই নৌকা চলছে। বালুপথ মাড়িয়ে সামনে এগোতেই চোখে পড়ে নিরেট পাথররাজ্য। পাথর ছুঁয়ে ধেয়ে নামছে মেঘালয় পাহাড়ের ঠান্ড ও স্বচ্ছ জলরাশি। বিশাল এলাকাজুড়ে দুদিকে নিরেট পাথররাজি আর মধ্যে স্বচ্ছ জল। সাদা পাথরে দাঁড়িয়ে দেখলাম ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের ওপর মেঘের আলিঙ্গন। এ যেন প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য। এ দৃশ্য দেখার পর মনে পড়লো বিশ^কবি রবীন্দ্রাথ ঠাকুরের সেই কবিতার কথা। কারণ ঘরের কাছে হওয়ায় আমরা অনেকেই সেখানে যেতে ইচ্ছুক ছিলাম না।

তাইতো কবি লিখেছিলেন- বহুদিন ধরে, বহু ক্রোশ দূরে/ বহু ব্যয় করি, বহু দেশ ঘুরে/দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/ একটি ধানের শীষের উপরে, একটি শিশির বিন্দু...।
 
আসলেও তাই। আমাদের ঘরের পাশে থাকা ভোলগঞ্জের সেই সাদা পাথরে অবহেলা করে আজও অনেকেই যাননি। আর সেখানে না গেলে সেই পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের আলিঙ্গণও দেখা হবেনা কখনও।

ভ্রমণে আমারা যার ছিলাম: প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খায়ের (সমকাল/চ্যানেল এস ইউকে), সিনিয়র সহ-সভাপতি এমআর টুনু তালুকদার (আনন্দটিভি), সহ-সভাপতি কামাল মুন্না (যায়যায়দিন), সাবেক সহ-সভাপতি আশিক আলী (যুগান্তর), সাধারণ সম্পাদক নবীন সোহেল (শুভপ্রতিদিন), সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহেল উদ্দিন (গণমুক্তি), সহ-সাধারণ সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন (আমার সংবাদ), অর্থ সম্পাদক আক্তার আহমদ শাহেদ (মানবজমিন), দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সালাম (ইনকিলাব), প্রচার সম্পাদক মশাহিদ আলী (শ্যামল সিলেট), সদস্য শুকরান আহমদ রানা (সকালের সময়), বদরুল ইসলাম মহসিন (ভোরের কাগজ)। আর প্রতিনিধি দু’জন হলেন, ডেইলি সিলেট সংবাদ নিউজ পোর্টালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শফিক আহমদ পিয়ার ও সহকারি ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শেখ শওকত আলী।   

জানা গেছে, ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর পানির সঙ্গে প্রতিবছর বর্ষাকালে নেমে আসে প্রচুর পাথর। ধলাই নদীর তলদেশেও রয়েছে পাথরের বিপুল মজুদ। পাথর উত্তলোনের কাজ সহজ করতে ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পযন্ত ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে রোপওয়ে টাওয়ারগুলো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

যদিও বর্তমানে বন্ধ কিন্তু সেখানে গেলেই চোখে পড়বে পাথর উত্তেলনের দৃশ্য। ছোট ছোট নৌকায় করে পাথর উত্তলোন করে বয়ে নেওয়ার দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জের উৎসমুখ সাদাপাথরে সবসময়ই চেরাপুঞ্জি থেকে স্বচ্ছ নীল ও ঠান্ডা পানি নেমে আসে।

যেভাবে সাদা পাথর যাবেন :
আপনাকে দেশের যেকোন স্থান থেকে প্রথমে সিলেটে আসতে হবে। এরপর সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও অথবা বাসযোগে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক দিয়ে টুকেরবাজারে গিয়ে নামতে হবে। টুকের বাজার থেকে ট্রলারযোগে যেতে হবে সাদা পাথর।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত