সনেট দেব চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা

১১ মার্চ, ২০১৫ ১৫:০৯

গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ: প্রকৃতির মাঝে সর্বাধুনিক সুবিধা

সার্ক সামিট বা আন্তর্জাতিক যেকোনো সম্মেলনের জন্য গ্র্যান্ড সুলতান প্রস্তুত রয়েছে

দীর্ঘ পথ জুড়ে সবুজ গালিচা বিছিয়ে আছে সারি সারি চা-বাগান। চা কন্যারা নিপুন হাতে দুটি পাতা আর একটি কুঁড়ি সংগ্রহ করে ঝুলিতে ভরছেন। এরই মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ছায়াবৃক্ষ। তাতে হয়তো শিষ দিচ্ছে নানা রূপরঙের সুরেলা পাখি। পিচঢালা পথে চলতে চলতে স্বর্গীয় অনুভূতি আপনাকে ছুঁয়ে যাবে। এমনই এক মায়াবী সৌন্দর্য্যে ঘেরা মৌলভীবাজার জেলা।
বর্ষায় অথৈ জল, শীতে পাখির উল্ল¬াস, বছর জুড়ে উদ্ভিদ-প্রাণী বৈচিত্র নিয়ে দূরের মানুষকে ডাকে। একদিকে বিশ্বের বৃহৎ হাওর হাকালুকি। সাথে দেশের অন্যতম বৃহৎ হাওর কাউয়াদীঘি আর বাইক্কাবিল খ্যাত হাইল হাওর। যেটি হাজারো পাখির কলতান, মাছ ও জলজ উদ্ভিদের আঁধার। আবার কোথাও গহীন অরণ্য; পাহাড়, নদী, সমতল। মিশ্র চিরহরিৎ বন লাউয়াছড়া কিংবা গগন টিলা। মাধবকুন্ড কিংবা হামহাম জলপ্রপাত। কোথাও লেক কিংবা পাহাড়ি ঝরনা। পাখিবাড়ি সহ নয়নাভিরাম প্রকৃতি। যেন পরতে পরতে সাজানো প্রকৃতির রূপকন্যা; উদ্ভিদ জীববৈচিত্রের সম্মিলন।

প্রকৃতিঘেরা এ অঞ্চলটি পর্যটকদের মোহাবিষ্ট করে রাখে। রূপময় প্রকৃতি; সারিসারি চা-বাগান, উঁচু-নিঁচু পাহাড়টিলা, আকাশ-পাহাড়ের মিতালী, মেঘেদের ভেসে বেড়ানো, হাওর-বিলে পাখির কলতান, জলপ্রপাতের ছলছল ধ্বনি আর জৗববৈচিত্রের সমাহার এক মায়াবী সৌন্দর্য্যরে খনি।
আদিবাসি খাসিয়া, মণিপুরী সম্প্রদায়ের বসবাস চা-কন্যার দেশে। তাদের লাস্যময় নৃত্য আর সাংস্কৃতিক ধারা, বিয়ে, পূজাপার্বন প্রকৃতিকন্যাকে করে তুলেছে আর মোহনীয় রূপে। খাসিয়া পানজুম, মণিপুরী কৃষি একে আরো সমৃদ্ধ করেছে। এই জেলায় চা-কন্যা হাঁটে প্রকৃতিকন্যার হাত ধরে। আবার প্রকৃতিকন্যা পথ চলে চা-কন্যার ছায়া মাড়িয়ে। সবুজে ঘেরা পুরো জেলাই যেন পর্যটন ষ্পট।
প্রকৃতিকন্যার রূপ-সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে দলে দলে পর্যটকেরা ছুটছেন মৌলভীবাজারে। আর তাদের অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষা করছে প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা হোটেল রিসোর্টগুলো। রয়েছে পাঁচ তারকা মানের হোটেল-রিসোর্ট। যার পথপ্রদর্শক ‘গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গল্ফ’। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা রিসোর্টটি যেন প্রকৃতিকন্যারই প্রতিনিধিত্ব করছে। যেমন তার এক্সটেরিওর (বহিরূপ), তেমনি ইনটেরিওর (ভেতরের রূপ)। পর্যটকদের মৌলভীবাজারের সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করতে পাঁচ তারকা মানের হোটেল-রিসোর্টটি তৈরি করেছে এক্সকারশন এন্ড রিসোর্টস বাংলাদেশ লিমিটেড। ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর রিসোর্টটি যাত্রা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এরইমধ্যে যাত্রার প্রথম বছরেই ‘গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গল্ফ’ ’ওয়ার্ল্ড  লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ড ২০১৪’ অর্জন করে ফেলেছে। আর প্রথম বাংলাদেশী ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এই রিসোর্টকে বিরল সম্মান অর্জনের স্বীকৃতি দিয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ড ২০১৪’ কর্তৃপক্ষ। ৬ ডিসেম্বর ২০১৪ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে ‘বিশ্বের সেরা গলফ রিসোর্ট’ হিসেবে আন্তর্জাতিক এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

সকল সুবিধাসহ ২,০০,০০০ বর্গফুট জায়গার ওপর গড়ে তোলা আটতলা ভবনে রয়েছে ১৩৫টি কক্ষ, এর মধ্যে ৪৫টি কিং সাইজ আর ৪৭টি কুইন সাইজ কক্ষ রয়েছে। এখানে একটি অসাধারণ নাইন হোল গলফ কোর্স ছাড়াও রয়েছে লন টেনিস, ব্যাডমিন্টন, বিলিয়ার্ড ও টেবিল টেনিস খেলার আয়োজন। এছাড়া শিশুদের জন্য আছে আলাদা খেলার জোন। রিসোর্টটিতে অ্যামিবা আকৃতির বিশাল সুইমিংপুলসহ সুনিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার সর্বমোট ৩টি সুইমিংপুল আছে। রয়েছে মুভি থিয়েটার, যেখানে ৪৪ জন একসঙ্গে বসে এই থিয়েটারে সিনেমা উপভোগ করতে পারবে। দেশের কোন আনন্দ নিবাসে এই প্রথমবারের মত সুবিশাল পাঠাগার সংযোজিত হয়েছে বলে জানান গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট ও গলফ এর ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার আরমান খান।

রিসোর্টে রয়েছে, ১০০০ জনের সংকুলান সমৃদ্ধ ‘রোশনি মহল’ ও ৩০০ জনের স্থান সংকুলান সুবিধাসমৃদ্ধ ‘নওমি মঞ্জিল’ নামের ব্যাংকোয়েট হল। এছাড়া রয়েছে ফোয়ারা ডাইন, শাহী ডাইন ও ‘অরণ্য বিলাস’ নামের পাঁচ তারকা মানের রেস্টুরেন্ট। এখানে আরো রয়েছে, পুল ডেক ও ক্যাফে মঙ্গল নামে তিনটি দুর্দান্ত ক্যাফে। কর্পোরেট অতিথিদের জন্য ভিন্নমাত্রার সুবিধা রয়েছে বলে জানান রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। তিনি জানান, রিসোর্টে তিনটি বিশালাকৃতির দৃষ্টিনন্দন রুচিশীল মিটিং রুম ছাড়াও অত্যাধুনিক সুসজ্জিত জিমনেসিয়ামসহ রয়েছে স্পা, সনা, স্টিম, জ্যাকুজি ও ম্যাসেজ পার্লারের ব্যবস্থা।
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার আরমান খান জানান, গ্র্যান্ড সুলতানে আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেলের সকল সুযোগসুবিধা রয়েছে। এরইমধ্যে পর্যটকদের বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকরা এই অঞ্চলে আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে দেশবিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও খ্যাতিমান ব্যক্তিরাও আসছেন। তিনি জানান, সার্ক সামিট বা আন্তর্জাতিক যেকোনো সম্মেলনের জন্য গ্র্যান্ড সুলতান প্রস্তুত রয়েছে। এজন্য সবধরনের সুযোগসুবিধা রয়েছে। রয়েছে রেল, সড়ক ও হ্যালিকপ্টারে যোগাযোগ সুবিধা। মৌলভীবাজার থেকে সিলেট এয়ারপোর্টের দূরত্ব দেড় থেকে দুই ঘন্টা আর ঢাকার দূরত্ব সাড়ে ৩ থেকে ৫ ঘন্টা। তবে শমসেরনগর এয়ারপোর্টটি চালু হলে মৌলভীবাজার অঞ্চলে আদর্শ পর্যটন নগরী হিসেবে পরিণত হবে। আরমান খান বলেন, ‘অতিথিদের মুগ্ধতাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। আমরা আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে চাই।

এক পর্যটক প্রতিবেদককে জানান, মৌলভীবাজারে পাঁচতারকা মানের রিসোর্ট হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ায় এই অঞ্চল পর্যটনক্ষেত্রে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। এই অঞ্চলটি ‘ট্যুরিজম হাবে’ পরিণত হচ্ছে। ভ্রমণ পিয়াসুদের জন্য একটি উপভোগ্য অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে।
অতিসম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান খাজা টিপু সুলতান বলেন, “সম্পূর্ণ বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান হিসাবে বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে আমরা বিশ্ব সেরা গলফ রিসোর্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি, তাই এই অ্যাওয়ার্ড বাংলাদেশেরই অর্জন।” তিনি এ অর্জন দেশের পর্যটন শিল্পকে বিশ্ব দরবারে আরেক ধাপ এগিয়ে নিবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
যেভাবে আসবেন
রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে রেল অথবা সড়কযোগে শ্রীমঙ্গল শহরে আসা যায়। শহর থেকে আনুমানিক ৫ কিলোমিটার দূরত্বে ভানুগাছ-কমলগঞ্জ সড়কেই আপনাকে স্বাগত জানাতে দাড়িঁয়ে আছে ‘গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গল্ফ’।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত