আসাদুজ্জামান

১৬ জুন, ২০১৫ ১৬:৩১

কালাঙ্ক: যেখানে পাহাড় আর সমুদ্রের গভীর মিতালি

প্রকৃতি ভালবাসেন না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রকৃতির অকৃত্রিম অপরূপ শোভা অবলোকন করতে করতে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মধ্যে যে কি পরিমাণ আনন্দ বিদ্যমান সেটা সকল প্রকৃতিপ্রেমি মাত্রই জানেন। প্রকৃতির সাথে আমাদের গভীর সখ্যতা জন্মের সেই আদিলগ্ন থেকেই। আর সেই প্রকৃতি যদি হয় গাছগাছালির সাথে নানা বাহারের নাম জানা,অজানা ফুলে ঢাকা পাহাড়ের সাথে নিয়ে বিশাল সমুদ্রের মিলন,তাহলে সোনায় সোহাগা। শুনতেই শরীরের মধ্যে কেমন যেন একটা শিহরণ অনুভূত হয়। আহা,একসাথে পাহাড় আর সমুদ্রের সঙ্গম অবলোকনে সে এক আভাবনীয় সুখ। সাথে মাঝেমধ্যে  পাখির ডাক আর সী-গালের চিৎকারতো আছেই।

ফ্রান্সের মার্সেই (Marseille) শহর থেকে গাড়ি করে ২৫-৩০ মিনিটের দূরত্বে অবস্থান এই অপরূপ রূপশোভা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রকৃতির। ব্যক্তিগত গাড়ি অথবা বাস গিয়ে থামাতে হয় পাহাড়ের পাদদেশে সুনসান প্রকৃতিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সেখান থেকে হাঁটার শুরু। প্রবেশ পথ থেকে হাঁটা শুরু করার ৩০ থেকে ৩৫  মিনিট পর গিয়ে শুরু হয় আসল ট্র্যাকিং মানে পাহাড়ী ট্র্যাক ধরে হাঁটার শুরু। বসন্তে প্রবেশ পথ ধরে হাঁটার সময় রাস্তার দু পাশে দেখা মিলে ফুলের পশরা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের। ট্র্যাক ধরে হাঁটার শুরু করার কিছুক্ষণ পর বাতাসের শব্দ চাপিয়ে কানে ভেসে আসবে সমুদের গর্জন। ট্র্যাক ধরে হাঁটার সময় কোথাও কোথাও দেখা মিলে পাহাড় ঝুপ করে নেমে গেছে সমুদ্রের জলে। আবার মাঝেমধ্যে দেখা মিলে অগভীর গুহামুখ।


গুহামুখে আরহন করতে কিছুটা কষ্ট সহ্য করতে হলেও আরোহণের পর যখন সেই গুহামুখ থেকে সামনের দিকে চোখ যায়, তখন সব ক্লান্তি,কষ্ট ধুয়েমুছে এক নিমিষে মিশে যায় সমুদ্রের জলে। চোখ জুড়িয়ে যায় নয়নাবিরাম দৃশ্যে।বলতে ইচ্ছে করে, প্রকৃতি কি অকৃপণ হাতে নয়নাভিরাম শোভায় সাজিয়েছ তোমার এ দেহ।মনে একটি আক্ষেপ জাগে,ইশ এখানেই যদি একটি ছোট কুঁড়েঘর বানিয়ে সারাটা জীবন কাঁটিয়ে দেয়া যেত।

জীবনের তাগিদে ফিরে আসতে হয় বাস্তবে ।কিছু কিছু জায়গায় ট্র্যাক করা কিছুটা দুষ্কর মনে হবে,ধুর ছাই ফিরে যাই। কিন্তু ফিরে গেছেন তো ঠকেছেন।কষ্ট করে কিছুটা পাহাড়ের চূড়ায় উঠার পর সামনে যখন বিশাল জলরাশি নিয়ে বসবেন। মনে হবে আহা! জীবনটা কি মধুময় সুন্দর্যে শোভিত। সমুদ্র সামনে নিয়ে যখন বসে আছেন, দেখা মিলবে সী-গালের উড়াউড়ি আর কানে আসবে সমুদের ঢেউয়ের শব্দ। সাথে পেছন থেকে হঠাৎ হঠাৎ ডেকে ওঠা পাখির কুজন। ভাগ্য সুপ্রসন্য হলে সাক্ষাত হয়ে যেতে পারে মেঘদলের সাথে।


 

 





সেই পাহাড়ি ট্র্যাক ধরে বিশ্রাম নিয়ে হাঁটতে থালকে ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে আর একজন হাইকারের জন্য ৩-৪ ঘণ্টা হাঁটার পর পৌঁছে যাওয়া যায় অন্য আরেকটি ছবির মত সাজানো গোছানো ছবির মত শহর কাসিস(Cassis)। এই শহর সম্পর্কে নোবেল বিজয়ী কবি,লেখক ফ্রেদেরিক মিস্ত্রাল (Frédéric Mistral) বলেছিলেন  " Qu'a vist Paris, se noun a vist Cassis, pou dire: n'ai rèn vist”।  যার বাংলা করলে মোটামুটি এভাবে দাঁড়ায়ঃ যে প্যারিস ভ্রমণ করল কিন্তু কাসিস দেখল না,বলতে হয়ঃ সে আসলে কিছুই দেখল না।সে গল্প না হয় আরেকদিনের বলা যাবে।

মার্সেই শহর বেড়াতে এসে প্রকৃতিপ্রেমি কেউ কালাঙ্ক ঘুরে যাবেন না তা বাস্তবে অনেক দূর,কল্পনাতেও কল্পনা করা কঠিন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত