তপন কুমার দাস, বড়লেখা

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১৮:২১

ঈদের ছুটি কাটুক বড়লেখার অনাবিল সৌন্দর্যের মাঝে

মানব মন সর্বদা মুক্তি পিয়াসী, চিরচঞ্চল। একটু অবকাশ পেলেই মানুষ ছুটে যায় দিগ দিগন্তে সৌন্দর্য্যরে আকর্ষণে। জন্মগত ভাবেই মানুষ কৌতূহলী। তার সে কৌতূহল নতুন নতুন বিষয়ের প্রতি। প্রকৃতি ও মানুষের সৃষ্ট সৌন্দর্য্যরে নানা নিদর্শন সে মানবীয় সত্তা দিয়ে অনুভব ও উপলব্ধি করতে চায়। প্রাকৃতিক লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলায় অবসর সময়কে আনন্দময় করে তোলার জন্য রয়েছে অনেক স্থান। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যরে কাছাকাছি থেকে ঈদের ছুটি উপভোগ করতে চান অনেকেই।

জেলার উত্তর প্রান্তিক জনপদ বড়লেখা উপজেলা। অনিন্দ্যসুন্দর নিস্বর্গের এক মায়াপুরী এ উপজেলা। দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় জলপ্রপাত এ উপজেলায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপরূপ লীলাভূমি মাধবকু- জলপ্রপাত, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ চা বাগান, আকাশস্পর্শী পাথারিয়া পাহাড় ও নয়নাভিরাম হাকালুকি হাওরের কাছাকাছি ঈদের ছুটি কাটাতে পারেন প্রকৃতি পিপাসু যে কেউ।

মাধবকু- জলপ্রপাত : প্রকৃতির অপরূপ কন্যা ‘মাধবকুন্ড জলপ্রপাত’। পাথারিয়া পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁসে পতিত অবিরাম জলধারায় যেন যৌবনা এক জলপ্রপাত ‘মাধবকুন্ড’। বর্ষার সমস্ত প্রাচুর্য নিয়ে, দেশ-বিদেশের হাজোরো পর্যটকের জন্য অপার সৌন্দর্য্যরে ডালি নিয়ে নিজেকে সাজিয়ে রেখেছে।  

এক সময় বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে প্রাকৃতিক জলপ্রপাত মানেই ছিলো মাধবকুন্ড। এখন দেশের ভেতরে আরো অনেক জলপ্রপাতের সন্ধান মিলেছে। তবে এখনো জলপ্রপাত অনুরাগী পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ মাধবকুন্ডই। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমান এই ঝর্ণাধারার সৌন্দর্য্য উপভোগে। মাধবকুন্ড যাওয়ার উত্তম সময় হচ্ছে বর্ষাকাল, এই সময় ঝর্ণা পানিতে পূর্ণ থাকে। এবার পবিত্র ঈদুল আযহা বর্ষাকালে হওয়ায় ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠবে-এমন প্রত্যাশা স্থানীয় লোকজন, ব্যবসায়ীসহ পর্যটন এলাকার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাবৃন্দ।

উপজেলার ৮নং উত্তর দক্ষিণভাগ ইউপি’র গৌড়নগরে মাধবকু- জলপ্রপাতের অবস্থান। পাহাড়ি ছড়ার প্রায় ২০০ ফুট ওপর থেকে যুগ যুগ ধরে গড়িয়ে পড়ছে অবিরাম ধারায় পানি। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে নারী-পুরুষ, শিশু ও বিদেশি পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়ে ওঠে জলপ্রপাতটি। ভ্রমনপিপাসু পর্যটকদের জলপ্রপাতে এসে ছবি তোলা, জলপ্রপাতের কুন্ডের পানিতে নেমে আনন্দে গোসল করা এ সব-ই পুরনো দৃশ্য।  

সম্প্রতি চিত্ত বিনোদনের জন্য পর্যটন কর্পোরেশন নির্মাণ করেছে-হাঁতি, পেঙ্গুইন, মৎসকন্যা, বাঘ, ভালুক, বক, ঈগল পাখি, কুমির, বানর ইত্যাদির ভাষ্কর্য। এসব ভাষ্কর্য আগত শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীকে বাড়তি আনন্দ প্রদান করছে। ভাষ্কর্যগুলো কৃত্রিম হলেও প্রকৃতির নিপুন অনুকরণে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে পঞ্চইন্দ্রিয়ে সবকিছুই প্রাকৃতিক বলে মনে হবে।

এছাড়া জলপ্রপাত এলাকায় মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় রেস্ট হাউস, পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে রেস্তোরা।  

হাকালুকি হাওর : এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ জলাভূমি হাকালুকি হাওর। এটির অবস্থান মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, সিলেটের বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বিস্তৃত। হাওরের বেশিরভাগ এলাকা বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। হাকালুকি হাওর বর্ষায় আসে তার পূর্ণরূপ নিয়ে। এ সময় হাওর পূর্ণ যৌবনা হয়ে ওঠে।  প্রকৃতি যেন তার সমস্ত বৈচিত্র নিয়ে দর্শনার্থীদের জন্য হাওরকে সাজিয়ে রাখে। এবারের ঈদ বর্ষাকালে হওয়ায় হাওর এলাকার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। হাওরের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য বন বিভাগ ওয়াচ টাওয়ার, জল সিড়ি নির্মাণ করেছে। এছাড়া বর্ষাকাল হওয়ায় ভাড়ায় নৌকা করে হাওর দর্শন করা যাবে। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত