সিলেটটুডে ডেস্ক

৩১ আগস্ট, ২০২৫ ১০:৩০

স্থানীয়দের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২নং গেট এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত অর্ধ শত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে প্রায় ৩০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে দর্শন বিভাগের এক ছাত্রীকে ভবনের দারোয়ান মারধর করার জেরে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভুক্তভোগী ছাত্রী ওই গেটসংলগ্ন একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসায় ফিরতে গেলে দারোয়ান দরজা খুলছিলেন না। পরে ডাকাডাকির এক পর্যায়ে দারোয়ান অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ছাত্রীকে চড়-ধাক্কা দিয়ে মারধর করেন। এ সময় ওই ছাত্রী তার এক বন্ধুকে ডাকলে তিনি দ্রুত সেখানে উপস্থিত হলে তাদের ওপর হামলা হয়। পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা এই দারোয়ানকে প্রক্টরের কাছে সোপর্দ করতে চাইলে এলাকাবাসী ছাত্রদের ওপর হামলা করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর শিক্ষার্থীরা দুই নম্বর গেট এলাকায় জড়ো হতে থাকে এবং ওই দারোয়ানকে খোঁজার উদ্দেশ্যে সামনে অগ্রসর হয়।

এক পর্যায়ে রাত ১টা ৪০ মিনিটে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জোবরা গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এরপর দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশের মোট চারটি গাড়ি স্থানীয়রা ভাঙচুর করেন।

ঘটনার এক পর্যায়ে রাত তিনটার পর সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থী যারা বিভিন্ন ভবনে আটকে ছিলেন তাদেরকে উদ্ধার করে। কিন্তু পুলিশের কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে যারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তারা হলেন- সজীব (২৪), মোহাম্মদ ইসমাইল (২৫), হুমায়ুন (২২), সাদমান (২৪), ইশতিয়াক (২৪), মো. আবু নাসিম (২৩), হাসান জোবায়ের হিমেল (২৫), ইদ্রিস (২৫), মনির (২২), মাহিন (২৩), সজীব, ইশতিয়াক আহমদ (২৪), রাতুল (২১), শিহাব (২২), আলমাস মাহফুজ (২৫), বাইজিদ (২০), দিগন্ত (২৫), ওয়াহিদউদ্দিন, নাজমুল (২৫), বায়েজিদ (২০), ফুয়াদ (২১), রাকিব মাহবুব রুমি (২৪), রিপন মিয়া (২১), মাহিন (২২), সিফাত আদনান (২২), আকিব (২২), আরমান (২৫), দুর্জয় (২২), মোকাব্বির (২৪)।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন নিজেও আটকা পড়েছিলেন জানিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ থেকে ফেরানোর চেষ্টা করছিলাম। কয়েকজনকে এলাকাবাসীর কাছ থেকে উদ্ধার করেছি। প্রশাসন চাইলে শুরুতেই ঘটনার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারত। প্রশাসনের অনুপস্থিতির কারণে ঘটনা এমন হয়েছে।

দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সময়মতো বাসায় ফিরি। আজও দেরি করিনি। দারোয়ান দরজা খুলছিল না, পরে হঠাৎ আমার গলায় চড় মারেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এরপর লাথিও মারতে থাকেন।’

শিক্ষার্থীরা জানান, সংঘর্ষে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আল মাসনূনসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। মাসনূনকে কোপানো হয়েছে বলেও দাবি করেছেন সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখ্য সংগঠক সাব্বির হোসেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ জানান, সহকারী প্রক্টর নাজমুল ও কোরবান স্যারও আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

ভোর ৫টার দিকে দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তা মেজর শাহরিয়ার জানান, ‘আমরা ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে ১০ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছি। আরও একটি টিম ভেতরে কাজ করছে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে তদন্তের পর সকলের বিচার নিশ্চিত করা হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত